তৃপ্ত। মেলবোর্নে সেরিনা। ছবি: এপি
ফাইনালটায় সেরিনা কী প্রচণ্ড চাপে ছিল, প্রথম সেটের দ্বিতীয় গেম শেষেই টিভি দেখে বুঝলাম। যে কেউই বুঝবে। ম্যাচের প্রথম চারটে গেমেই তো সার্ভিস ব্রেক! একে অন্যকে ডাবল ব্যাক-টু ব্যাক ব্রেক করল দুই বোন। যার প্রথমটা ঘটতে সেরিনা কোর্টে র্যাকেট আছড়ে ভেঙে ফেলল। আমার মনে হয়, শনিবার ওর উল্টো দিকে ভিনাস না থেকে কের্বার বা এ বারের অস্ট্রেলীয় ওপেনে দারুণ নজর কাড়া সেমিফাইনালিস্ট কোকো ভ্যান্দেওয়েগ থাকলে অঘটন ঘটে যেতে পারত। এখানেই স্টেফিকে টপকে যাওয়া হয়তো হতো না সেরিনার। তবে ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ থেকে আর বোধহয় সন্দেহ রইল না যে, মেয়েদের টেনিসের সর্বকালের সেরা প্লেয়ার সেরিনা উইলিয়ামস-ই। দুইয়ে স্টেফি। তিনে, নাভ্রাতিলোভা।
সংখ্যা শ্রেষ্ঠত্বের পুরোপুরি প্রমাণ না হলেও অনেকটা তো বটেই। সেখানে আমি নিশ্চিত, সেরিনা এ বছরই ওপেন যুগের আগে-পরে মিলিয়ে মার্গারেট কোর্টের সবচেয়ে বেশি ২৪ গ্র্যান্ড স্ল্যামের রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলবে। চোট-টোট না পেলে টপকেও যেতে পারে। গ্রাসকোর্ট ওর সবচেয়ে পছন্দের সারফেস। তাই এ বছর উইম্বলডন না জিতলে অবাক হবো। টেনিস স্কিলের বিচারেও আমার মতে স্টেফির চেয়ে একটু হলেও কমপ্লিট প্লেয়ার সেরিনা। দু’টো আলাদা টেনিস প্রজন্মের তুলনা হয় না ঠিকই। আবার এটাও ঠিক যে, স্টেফির শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম আর সেরিনার প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা কিন্তু একই বছরে। তা হলে দু’জনকে সম্পূর্ণ আলাদা প্রজন্ম বলব-ই বা কী ভাবে! স্টেফির ফোরহ্যান্ড যদি মেয়েদের টেনিসের সর্বকালের সেরা হয়ে থাকে, তা হলে সেরিনার প্রথম সার্ভিসও ঠিক তাই। কিন্তু স্টেফির ব্যাকহ্যান্ড সেরিনার চেয়ে দুর্বল ছিল। যদিও দু’জনের মধ্যে খেলা হলে কে জিতবে সেই ভবিষ্যদ্বাণীতে যাব না।
বরং ‘ইতিহাসে’র বিরুদ্ধে খেলার চাপ সামলে সেরিনা যে ভাবে এ দিন মেলবোর্নের ফাইনাল স্ট্রেট সেটে ৬-৪, ৬-৪ জিতল তার পর কোনও প্রশংসাই ওর জন্য হয়তো যথেষ্ট নয়। ভিনাসের হারানোর কিছু ছিল না। এ রকম প্রতিপক্ষ সব সময় আরও বেশি বিপজ্জনক। তবে সেরিনার আবার একটা সুবিধেও ছিল। যার সঙ্গে সেই ছোটবেলা থেকে ‘হিট’ করে আজ এই জায়গায় ও পৌঁছেছে, এত বড় মঞ্চে তাকেই কোর্টের উল্টো দিকে পেল। দু’টো সেটেরই সাত নম্বর গেমে দিদিকে ব্রেক করায় আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি ওকে। ভিনাস আক্রমণাত্মক শুরু করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেরিনা ঝুলি থেকে ওর সেই আসল অস্ত্র বার করে বাজিমাত করল। ওর অবিশ্বাস্য জোরালো প্রথম সার্ভিস। অনেক পুরুষ প্লেয়ারকেও যা চমকে দিতে পারে।
ম্যাচের শেষ গেমটার কথাই ধরা যাক। ৫-৪ স্কোরে সেরিনার সার্ভে ভিনাস প্রথম পয়েন্ট জেতায় রড লেভার এরিনায় বসা মার্গারেট কোর্ট পর্যন্ত উত্তেজনায় চেঁচিয়ে উঠল। ৩০-৩০ পয়েন্টে সেরিনাকে দেখলাম, সার্ভিস করতে কয়েক সেকেন্ড বেশি সময় নিল। তার পর করল নিঁখুত, ডিপ, প্রচণ্ড জোরে একটা প্রথম সার্ভ। ভিনাসের ফোরহ্যান্ড রিটার্ন নেটে জড়াতেই ম্যাচ পয়েন্ট টু সেরিনা। এর পর আর সেরিনাকে কে কবে আটকাতে পেরেছে? তাও আবার ইতিহাস গড়ার মুখে!
শনিবাসরীয় সেরিনা
• টেনিসের ওপেন যুগে স্টেফি গ্রাফের সর্বাধিক ২২ গ্র্যান্ড স্ল্যামের রেকর্ড ভেঙে ২৩টা জিতলেন।
• ৩৫ বছর ৪ মাস ২ দিন বয়সে অস্ট্রেলীয় ওপেন জিতে মেয়েদের টেনিসে বয়স্কতম প্লেয়ার হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার রেকর্ড করলেন।
• জার্মানির অ্যাঞ্জেলিক কের্বারকে সরিয়ে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে আবার এক নম্বরের সিংহাসনে বসলেন। এ ক্ষেত্রেও বয়স্কতম হিসেবেই।