—ফাইল চিত্র
বক্সিং ডে টেস্ট শুরুর আগে অস্ট্রেলীয় কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার বলেছিলেন, প্রথম দিন থেকেই চাপটা বিপক্ষের উপরে রাখতে চান তাঁরা। কিন্তু মেলবোর্ন টেস্টের প্রথম দিনের শেষে দেখা গেল চাপটা অস্ট্রেলিয়ার উপরেই। সৌজন্যে ভারতীয় বোলিং আক্রমণ। যশপ্রীত বুমরা চারটে, আর অশ্বিন তিনটি, মহম্মদ সিরাজ দুটো এবং রবীন্দ্র জাডেজা একটি উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ১৯৫ রানে থামিয়ে দেন। যার পরে বুমরার মুখে শোনা গিয়েছে সতীর্থদের প্রশংসা।
শনিবার খেলার পরে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে এসে বুমরা বলেছেন, ‘‘আমরা একে অন্যকে সাহায্য করতে চেয়েছি। অশ্বিন দারুণ বল করেছে, সিরাজও।’’ জীবনের প্রথম টেস্টেই নিখুঁত লাইন-লেংথ এবং সুইংয়ের জন্য নজর কেড়েছেন সিরাজ। তরুণ পেসারের প্রশংসা করে বুমরা বলেছেন, ‘‘প্রচুর পরিশ্রম করে উঠে এসেছে সিরাজ। এ দিন প্রথম ঘণ্টাতেই বল করতে চেয়েছিল ও। শুরুর দিকে উইকেটে একটু আর্দ্রতাও ছিল। পরে পিচ ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ হয়ে যায়। ওই সময় সিরাজ খুব নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে বল করেছে।’’ যোগ করেন, ‘‘হঠাৎ সিরাজের বল নড়াচড়া করতে শুরু করে। সুইং পেতে থাকে ও। প্রথম টেস্টেই রীতিমতো আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বল করেছে। নিজের দক্ষতাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে। আশা করব, এই ভাবেই ও খেলে যাবে।’’
অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানের ফিল্ডিং সাজানোর প্রশংসাও এ দিন শোনা গিয়েছে প্রাক্তন ক্রিকেটারদের মুখে। বুমরা বলেছেন, ‘‘অধিনায়ক এবং বোলারদের মধ্যে সব সময় আলোচনা চলেছে। আমরা কোন লাইনে বল করব, তা নিয়ে সব সময় কথা বলেছি। যাতে সেই অনুযায়ী ফিল্ড সাজানো যায়। লাঞ্চের পরে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভাল হয়ে যায়। আমরা তখন লাইনটা বদলে নিই।’’
বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দিনে বিতর্কের ছায়াও পড়েছে মাঠে। যে বিতর্কের কেন্দ্রে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক টিম পেনের একটা রান আউটের আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়া। রিপ্লে দেখে টিভি আম্পায়ারের মনে হয়, পেনের ব্যাটের খুব সামান্য একটা অংশ ক্রিজের মধ্যে ছিল। যে কারণে তিনি রান আউট দেননি। যার সঙ্গে একমত হতে পারেননি অনেকেই। যেমন কিংবদন্তি স্পিনার শেন ওয়ার্ন। ওয়ার্ন পরিষ্কার বলেছেন, ‘‘পেনকে রান আউট দেওয়া হল না দেখে অবাকই হলাম। আমার তো মনে হয়েছিল, ওটা আউট ছিল। ব্যাটের কোনও অংশই ক্রিজে ছিল না।’’
তৃতীয় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত শোনার পরে ভারত অধিনায়ক রাহানেকে দেখা যায় মাঠের আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলতে। বুমরাকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এগুলো আমাদের হাতে নেই। যে ব্যাপারগুলো আমাদের হাতে থাকে না, সে সব নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না।’’ যোগ করেন, ‘‘আম্পায়াররা যে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে পারছেন না, এটা দুর্ভাগ্যজনক। তবে ব্যাপারটা আমার হাতে নেই। ভেবে আর কী করব।’’
এই টেস্টে ঋদ্ধিমান সাহার জায়গায় উইকেটকিপার হিসেবে সুযোগ পেয়েছেন ঋষভ পন্থ। প্রথম দিনই তিনি উঠে এসেছেন আলোচনায়। বলা হচ্ছে, ম্যাথু ওয়েডের আউটের পিছনে পন্থের মস্তিষ্ক কাজ করেছে। দিনের প্রথম ঘণ্টার খেলা। ওয়েড তখন ৩০ রানে ব্যাট করছেন। বোলার অশ্বিন। ওই সময় পন্থ উইকেটের পিছন থেকে বলে ওঠেন, ‘‘অন্দরই রাখনা, ইয়ে মারেগা।’’ অর্থাৎ, বলটা স্টাম্পেই রাখো, ও মারবে। যা শোনা যায় স্টাম্প মাইক্রোফোনে। অশ্বিন বলটা স্টাম্পেই রেখেছিলেন। এবং, মারতে গিয়ে টাইমিংয়ের গন্ডগোলে ক্যাচ দিয়ে বসেন ওয়েড। সোশ্যাল মিডিয়ায় এর পরে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে পন্থের তুলনাও শুরু হয়ে যায়।
প্রথম দিনে বোলিংয়ে যে ইতিবাচক, আত্মবিশ্বাসী মনোভাবটা ভারত দেখিয়েছে, সেটা দ্বিতীয় দিনের ব্যাটিংয়েও দেখতে চান বুমরা। ভারতীয় বোলিংয়ের সেরা অস্ত্র বলেছেন, ‘‘ব্যাটিংয়ের সময় আমাদের লক্ষ্য থাকবে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলা। কিন্তু তা বলে হঠকারী ব্যাটিং করা চলবে না। আমরা একটা করে সেশন ধরে এগোতে চাই।’’