ছবি রয়টার্স।
গত কয়েক মাস ধরে করোনা আতঙ্কে মানুষ যে ভাবে জীবনধারণ করছে, তারই প্রতিফলন যেন দেখতে পেলাম বাইশ গজে! বৃহস্পতিবার সাউদাম্পটনে ইংল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে!
প্রতি পদক্ষেপে অতি সতর্কতার ছাপ। মানুষ যেমন নিভৃতবাসের সময় বাড়ি ছেড়ে বেরোতে ভয় পাচ্ছে, তেমনই ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের দেখে মনে হল, ওরা রক্ষণের খোলস ছেড়ে বেরোতে চাইছে না।
নতুন নিয়মের ক্রিকেটের সঙ্গে কী ভাবে মানিয়ে নেয় ক্রিকেটাররা, সেটাই সবাই দেখতে চায়। আর সেই মানিয়ে নেওয়ার খেলায় দারুণ নম্বর পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। প্রথম দিনের অল্প সময়ের খেলা দেখে মনে হয়েছিল, বল বেশি সুইং করছে না। কিন্তু দ্বিতীয় দিন হোল্ডার সেই সুইংটা ফিরিয়ে আনল। বল ৩৫-৪০ ওভার পুরনো হয়ে যাওয়ার পরেও সুইং করেছে। হোল্ডারের হাত থেকে অসাধারণ সব লেট সুইং বেরিয়েছে। শ্যানন গ্যাব্রিয়েল নব্বই মাইল গতিতে বলটা ভিতরের দিকে এনেছে। যার ফলে ওর চারটে শিকারের তিনটে বোল্ড আর একটা এলবিডব্লিউ। আর হোল্ডারের ছ’টা উইকেটের মধ্যে চারটেই এসেছে উইকেটকিপার আর গালির হাতে ক্যাচ দিয়ে। দুই পেসারই ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ করে দেয় ২০৪ রানে। জবাবে দিনের শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এক উইকেটে ৫৭।
এই টেস্ট থেকেই থুতু দিয়ে বল পালিশ নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা নিয়মের গণ্ডির মধ্যে থেকেও দারুণ ভাবে বলটাকে কাজে লাগাল। ঘাম দিয়ে পালিশ করেছে নিয়মিত। ফিল্ডাররা জামা-প্যান্টে বলটা ঘষেছে যতটা সম্ভব। আরও একটা কারণে পালিশটা বেশি নষ্ট হয়নি। ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা এ দিন খুব বেশি জোরে বলটাকে মারেনি।
কিন্তু যতই পালিশ থাকুক, হোল্ডার যে সুইংটা করিয়েছে, সেটা দক্ষতা এবং প্রতিভা ছাড়া হয় না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ড দেখলাম টুইট করেছে, ১.৭ ডিগ্রি সুইং করেছে হোল্ডারের বল। অঙ্কের হিসেবে না ঢুকে বলছি, যতটা সুইং করালে ব্যাটের কানাটা পাওয়া যায়, ঠিক ততটাই সুইং করিয়েছে হোল্ডার। ২০ ওভারে দুটো বল লেগসাইডে ফেলেছিল। আর সব ব্যাটসম্যানদের সামনে। অফ, অফ-মিডলের উপরে। হোল্ডারের ৪২ রানে ছয় উইকেট এল এই দারুণ নিয়ন্ত্রণ আর সুইংয়ের জোরে। পাশাপাশি তিনটে রিভিউ নিয়ে তিনটেতেই সফল অধিনায়ক হোল্ডার।
আরও একটা ব্যাপারে সবার নজর ছিল। সেরা দুই অলরাউন্ডারের লড়াই। আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে একে থাকা হোল্ডার বনাম দুইয়ে থাকা স্টোকস। এ দিনের লড়াইয়ে হোল্ডারই বাজিমাত করেছে। স্টোকসকে পুরো ‘ওপেন চেস্ট’ করে দিয়ে পিছনে খোঁচা দিতে বাধ্য করল। ময়দানি ভাষায় একে বলি ‘পাল্কি’ করে আউট করা। ক্যারিবিয়ান উইকেটকিপার শেন ডাউরিচ একহাতে জস বাটলারের অসাধারণ ক্যাচ নিল হোল্ডারের বলে। কোভিড-১৯ আতঙ্কের মধ্যে নতুন চেহারায় ক্রিকেট ফিরে এসেছে। মাইকেল আথারটন, মাইকেল হোল্ডিং, নাসের হুসেনদের দেখলাম একে অন্যের থেকে দূরে বসে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। মাঠের ধারে একটা বাক্সের গায়ে লেখা— ‘স্যানিটাইজ় হিয়ার। উই আর ইংল্যান্ড ক্রিকেট।’ কিন্তু এত সব নতুনের মধ্যেও ব্যাট-বলের সেই চিরকালীন সংঘর্ষটাকে ঠিক খুঁজে পাওয়া গেল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ২০৪ (স্টোকস ৪৩, হোল্ডার ৬-৪২)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস ৫৭-১ (অ্যান্ডারসন ১-১৭)।