দুরন্ত: প্রো রেসলিংয়েও দাপট দেখাচ্ছেন সাক্ষী। নিজস্ব চিত্র
সাক্ষী মালিক বদলে গিয়েছেন। তাঁর জীবন বদলে গিয়েছে। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গিয়েছে। এমনকী বদলে গিয়েছে তাঁর ওজনও।
অলিম্পিক্সের যে বিভাগে (৫৮ কেজি) নেমে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন, সেখানে আর নামছেন না সাক্ষী। ঠিক করে নিয়েছেন, এ বার তাঁর লড়াই ৬২ কেজি-তে। এই বিভাগে লড়েই তিনি সফল করবেন ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলোকে।
কিন্তু কেন ওজন বাড়ালেন? নয়াদিল্লি থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে অলিম্পিক্স পদকজয়ী সাক্ষী বলছিলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক কুস্তি ফেডারেশন আমাদের ওয়েট ক্যাটেগরি বদলে দিয়েছে। অলিম্পিক্সেও সেই বদল এসেছে। আমি এখন হেভিওয়েট ক্যাটেগরিতে চলে এসেছি। ৬২ কেজি। অলিম্পিক্সে লড়ার জন্য এর পরের যে ক্যাটেগরি আছে, তা অনেক কম।’’
সাক্ষী মনে করছেন, ওজন বাড়াতে তাঁর সুবিধেই হবে। কারণ তিনি এখন অনেক শক্তিশালী। বলছিলেন, ‘‘নিজেই চেয়েছিলাম এই বিভাগে লড়তে। কারণ, না হলে আমাকে ওজন কম করতে হতো। এবং সেটা করলে আমার কোনও সুবিধে হতো না। বরং মনে হয়, এই ওজন বাড়ায় আমি এখন স্বাস্থ্যকর ডায়েট প্ল্যান তৈরি করতে পারব। দুর্বল হয়ে পড়ার কোনও আশঙ্কা থাকবে না।’’
এই নতুন ক্যাটেগরিতেই এ বার সাফল্য চান সাক্ষী। সে জন্য নতুন বছরে তাঁর লক্ষ্য দু’টো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। এক, কমনওয়েলথ গেমস (এপ্রিল) এবং দুই, এশিয়ান গেমস (অগস্ট)। দু’টোতেই সোনার স্বপ্ন তাঁর চোখে। এরই মাঝে গত কয়েক দিন ধরে লড়ছেন প্রো রেসলিংয়ে। যেখানে ‘মুম্বই মহারথী’ দলের হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চান তিনি।
তেরো বছর হয়ে গেল কুস্তি শুরু করেছেন। যখন আখড়ায় নামতেন, একটাই স্বপ্ন দেখতেন। দেশের হয়ে অলিম্পিক্সে নামবেন। পদক জিতবেন। ভাবেননি, একেবারে রিও অলিম্পিক্সেই সেই স্বপ্ন সফল হয়ে যাবে। ভারতের প্রথম কুস্তিগির হিসেবে অলিম্পিক্স পদকজয়ী সাক্ষীর বক্তব্য, ‘‘আমার স্বপ্ন ছিল এক দিন না এক দিন দেশের হয়ে অলিম্পিক্স পদক জিতব। সেটা যে অত তাড়াতাড়ি সত্যি হয়ে যাবে ভাবিনি।’’ তা হলে কি এখন আপনার সামনে কোনও স্বপ্ন নেই? সাক্ষী বলে উঠছেন, ‘‘কেন থাকবে না? আমি কুস্তি ভীষণ ভালবাসি। সব সময় চাই কুস্তির মাধ্যমে দেশের সম্মান বাড়াতে। আমার লক্ষ্যই তাই, যেখানে নামব, সেখানেই যেন দেশের হয়ে পদক জিততে পারি। রিও অলিম্পিক্সের পরে ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিক্স। নিজেকে তৈরি করতে হবে এমন ভাবে যাতে ওখান থেকেও পদক জিততে পারি।’’
নিজে লড়াই করে উঠে এসেছেন। ২০১৬ সালের আগেও কেউ তাঁকে চিনত না। কিন্তু রিও অলিম্পিক্সের পদক যে তাঁর দুনিয়া বদলে দিয়েছে, সেটা বলছিলেন। ‘‘আগে আমার নাম কে জানত? কিন্তু একটা অলিম্পিক্স পদক আমাকে সম্মান দিয়েছে, পরিচিতি দিয়েছে। আমার জীবনটা এমন ভাবে বদলে গিয়েছে যেটা কয়েকটা শব্দে বোঝানো সম্ভব নয়।’’
রিও যেমন তাঁর জীবন বদলে দিয়েছে, ঠিক তেমনই আমির খানের কুস্তি নিয়ে সিনেমা ‘দঙ্গল’ও ভারতীয় কুস্তিগিরদের অবস্থা কিছুটা হলেও বদলেছে বলে মনে করেন সাক্ষী। তিনি বলছেন, ‘‘আগে কুস্তিগির বললে লোকে ভাবত, এরা বোধহয় সব জায়গায় মারদাঙ্গা করে বেড়ায়। কিন্তু এই সিনেমাটা দেখার পরে মানুষ বুঝেছে যে আমাদের কী পরিশ্রম করতে হয়, কতটা শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।’’
জীবনে তিনি ‘আইডল’ মেনে এসেছেন সুশীল কুমার, যোগেশ্বর দত্ত-কে। যাঁরা দেশকে সম্মানিত করেছেন। যাঁদের দেখে তিনি স্বপ্ন দেখতে শিখেছেন। কিন্তু জীবনে সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতাও আসে। স্বপ্নের পাশাপাশি থাকে আতঙ্কও। আপনিও কি বিশেষ কিছুকে ভয় পান? ‘‘পাই,’’ বলে দিচ্ছেন ইতিহাস সৃষ্টি করা এই মহিলা কুস্তিগির, ‘‘আমার একটাই ভয়। মনে হয়, এক দিন তো আমাকে কুস্তি ছেড়ে সরে দাঁড়াতে হবে। সেই দিনটা কবে আসবে সেই ভয়টাই আমাকে তাড়া করে।’’
প্রো রেসলিং লিগ (সিজন থ্রি): সরাসরি সন্ধ্যা ৬.৫০ থেকে সোনি ইএসপিএন/সোনি ইএসপিএন এইচডি।