ব্যাডমিন্টন দ্বিমুকুটে দিল্লিই যেন ভারতের মেলবোর্ন

মেলবোর্নের মাঠে রবিবার যে জয়ধ্বনি দেওয়ার স্বপ্নে কাতারে কাতারে ভারতীয় সমর্থক ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালের আগাম টিকিট কেটে রেখেছিলেন, সেই স্লোগানের গর্জন রবিবারই শোনা গেল! তবে এমসিজির বদলে দিল্লির সিরিফোর্ট ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। ধোনির টিম ইন্ডিয়ার জন্য নয়, ইন্ডিয়া ওপেন সুপার সিরিজ ব্যাডমিন্টনের দু’বিভাগেরই ফাইনালে দুই ভারতীয় মহাতারকার জন্য ‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা’!

Advertisement

স্বপন সরকার

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৫ ০২:৫০
Share:

দুই চ্যাম্পিয়ন। শ্রীকান্ত ও সাইনা। রবিবার ইন্ডিয়া ওপেনে। ছবি: পিটিআই।

মেলবোর্নের মাঠে রবিবার যে জয়ধ্বনি দেওয়ার স্বপ্নে কাতারে কাতারে ভারতীয় সমর্থক ক্রিকেট বিশ্বকাপ ফাইনালের আগাম টিকিট কেটে রেখেছিলেন, সেই স্লোগানের গর্জন রবিবারই শোনা গেল! তবে এমসিজির বদলে দিল্লির সিরিফোর্ট ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। ধোনির টিম ইন্ডিয়ার জন্য নয়, ইন্ডিয়া ওপেন সুপার সিরিজ ব্যাডমিন্টনের দু’বিভাগেরই ফাইনালে দুই ভারতীয় মহাতারকার জন্য ‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা’!

Advertisement

এবং ক্রিকেটে না হোক, ভারতীয় ব্যাডমিন্টনে ২৯ মার্চ ২০১৫ বোধহয় আগামী বহু দিনের জন্য স্মরণীয় হয়ে গেল। ঘরের মাঠে সুপার সিরিজ ফাইনালে প্রথম বার কোনও ভারতীয় উঠেই, তাও এক জন নয়, দু’-দু’জন উঠে বাজিমাত করলেন। ইন্ডিয়া ওপেনে দ্বিমুকুট ভারতের! পুরুষ সিঙ্গলস চ্যাম্পিয়ন কিদাম্বি শ্রীকান্ত। মেয়েদের সাইনা নেহওয়াল। গত বছরের শেষের দিকে চায়না ওপেনের হুবহু রিপ্লে! তবে দিল্লির সাফল্য সাইনাকে যেমন তাঁর নবম সুপার সিরিজ খেতাবের পাশাপাশি বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ঐতিহাসিক এক নম্বর পজিশন দিয়েছে, তেমনই শ্রীকান্ত দ্বিতীয় সুপার সিরিজ জিতে উঠে এলেন পুরুষদের বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে। চিনা কিংবদন্তি লিন ড্যান এবং ডেনমার্কের জোরগেনসেনকে টপকে!

দুই হায়দরাবাদি ছেলে-মেয়েই সোনার মেডেল গলায় ঝুলিয়ে স্বীকার করলেন, গ্যালারি ঠাসা দর্শকের ওই জিতেগা ভাই জিতেগা চিত্‌কারে তাঁরা আরও অনুপ্রাণিত হয়ে উঠেছিলেন। এত দিন যে প্রবল সমর্থন-ধ্বনি তাঁরা ভারতের ক্রিকেট ম্যাচেই শুনতে অভ্যস্ত ছিলেন! ‘অনুপ্রাণিত’ সাইনা প্রথম ফাইনালে তাইল্যান্ডের প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন রতচানক ইন্তাননকে ২১-১৬, ২১-১৪ হারানোর পর অন্য ফাইনালে শ্রীকান্ত ডেনমার্কের ভিক্টর এক্সেলসেনকে হারালেন ১৮-২১, ২১-১৩, ২১-১২। সাইনা যেমন টুর্নামেন্টে একটা গেমও হারেননি, টানা দশটা গেম জেতার পথে সর্বাধিক ১৭ পয়েন্ট তাঁর থেকে কোনও গেমে নিতে পেরেছেন প্রতিপক্ষ, তেমনই শ্রীকান্ত চলতি মাসের গোড়ায় ফরাসি ওপেন ফাইনালের মতো এক্সেলসেন-বধ করলেন ইন্ডিয়া ওপেনেও! অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল দুই ফাইনাল শেষে! শ্রীকান্ত যখন তাঁর কোচ গোপীচন্দের আলিঙ্গনাবদ্ধ, তার একটু আগে গোপীরই সদ্য প্রাক্তন ছাত্রী সাইনাকে আবার জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানান প্রকাশ পাড়ুকোন। গোপীর অ্যাকাডেমি ছেড়ে বিশ্বের প্রাক্তন ভারতীয় এক নম্বর পুরুষ ব্যাডমিন্টন তারকার বেঙ্গালুরুর অ্যাকাডেমিতেই এখন বিমল কুমারের কাছে ট্রেনিং করেন সাইনা। গুরু-শিষ্যার সম্মিলীত বক্তব্য, গোপীর কাছে ‘স্বাধীনতা’ না পেয়ে কোর্টে মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছিলেন সাইনা। বিশেষ করে বিশ্বসেরা চিনাদের বিরুদ্ধে। যেখানে একটা সময় মেয়েদের ব্যাডমিন্টন সার্কিট বলতে বোঝাত ‘চায়না অ্যান্ড সাইনা’! সেই মেয়ে বড় ম্যাচে বারবার এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত হারতে হারতে গত বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পর মাত্র চব্বিশেই খেলা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন তীব্র হতাশায়! তার পরেই সাইনার হায়দরাবাদ ছেড়ে বেঙ্গালুরু আসার সিদ্ধান্ত। যাকে তিনি ‘একেবারে ঠিক সময়’ বলছেন। ট্রেনিং শিডিউলে বিশেষ কোনও পরিবর্তন না ঘটলেও বিমলের ভোকাল টনিক সাইনার মধ্যে পুরনো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনে। মানসিক স্থিতধী আসতেই শারীরিক ফিটনেসেও উন্নতি ঘটে সাইনার। বাড়ে ফোকাসও। সবচেয়ে বড় কথা, বিমল তাঁকে সাহস দেন, তুমি নিজের গেমপ্ল্যানেই খেলো। তাতে চিনাদের বিরুদ্ধে বা অন্য বড় ম্যাচে যদি এগিয়ে গিয়েও আবার পিছিয়ে পড়ো, তা হলেও জানবে সে ভাবেই ফের এগিয়ে যাবে। বিমল তাঁকে এশিয়াডের পর ডেনমার্ক আর ফরাসি ওপেনে দেখে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ২০১৫ মে-র মধ্যে সাইনা এক নম্বর হবেন। দু’মাস আগেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হল। কিদাম্বিও বিশ্বের এক নম্বর হওয়ার প্লেয়ার বলে ভাবেন গোপী। দেখার বিমলের মতো গোপীর ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হতে আর ক’দিন!

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement