সংশয়: কেদারের ফিটনেসের দিকে তাকিয়ে নির্বাচকেরাও। ফাইল চিত্র
ঋষভ পন্থের বিশ্বকাপ ভাগ্য হয়তো এখনও পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। আইপিএলের ভাল ফর্মের সুবাদে তাঁকে নিয়ে এখনও আলোচনা অব্যাহত। তবে এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, ঘোষিত পনেরো জনের দল থেকে কেউ আহত হয়ে ছিটকে গেলে তবেই একমাত্র ঋষভের পক্ষে পরিবর্ত হিসেবে ইংল্যান্ডের উড়ান ধরা সম্ভব।
এই মুহূর্তে তাই ক্রিকেট মহলের নজর কেদার যাদবের উপর। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএল খেলতে খেলতে কাঁধে চোট পেয়েছেন কেদার। তিনি আইপিএল থেকে ছিটকে গিয়েছেন। কিন্তু তার চেয়েও বেশি আগ্রহ তৈরি হয়েছে কেদারের বিশ্বকাপ ভবিষ্যৎ নিয়ে। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, তাঁর কাঁধের চোট খুব গুরুতর কিছু নয়। বিশ্বকাপের জন্য ভারতীয় দল ইংল্যান্ড রওনা দেবে ২২ মে। আইসিসি-র নতুন নিয়ম অনুযায়ী ২৩ মে পর্যন্ত অংশগ্রহণকারী যে কোনও দেশ তাদের পনেরো জনের দলে পরিবর্তন করতে পারে। সম্ভবত রওনা হওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে, কেদার যেতে পারবেন কি না।
বিশ্বকাপের জন্য ভারতীয় দলের স্ট্যান্ড-বাই তালিকায় আছেন ঋষভ, অম্বাতি রায়ডু, অক্ষর পটেল, নবদীপ সাইনি এবং ইশান্ত শর্মা। এর মধ্যে ব্যাটসম্যান দু’জন। রায়ডু এবং ঋষভ। কোনও কারণে যদি কেদার যেতে না পারেন, তাই পরিবর্ত হিসেবে আসবেন এক জন ব্যাটসম্যান। জানা গিয়েছে, বিকল্প প্রয়োজন হলে ঋষভই এগিয়ে। বাদ পড়ে রায়ডু যতই প্রতিবাদী হয়ে উঠুন, আইপিএলে তাঁর ফর্ম মোটেও ভরসা দেওয়ার মতো নয়। তাই স্ট্যান্ড-বাই তালিকায় থাকলেও তাঁর ভাগ্য পাল্টানোর সম্ভাবনা কম।
কেদারের কাঁধের চোট পর্যবেক্ষণ করছেন ভারতীয় দলের ফিজিয়ো প্যাট্রিক ফারহার্ট। খোঁজ রাখছে এম এস কে প্রসাদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি। যে কমিটি বিশ্বকাপের জন্য ঋষভের চেয়ে দীনেশ কার্তিককে বেশি উপযুক্ত ভেবেছে। এই একটি নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক এখনও থামেনি। আইপিএলে দিল্লি ক্যাপিটালসকে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন ঋষভ। দলকে প্লে-অফে তুলতেও দারুণ সাহায্য করেছেন বাঁ হাতি আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান এবং উইকেটকিপার। শুক্রবার অগ্রজ ‘ফিনিশার’ ধোনির চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধেও ২৫ বলে ৩৮ করে গেলেন উত্তরসূরি। দিল্লির ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যে তিনিই একা লড়ছিলেন। অন্য দিকে কার্তিকের কেকেআর অন্তর্কলহের ছবি হয়ে উঠেছিল। অধিনায়ক নিজে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। নিজে দারুণ কিছু করতে তো পারেনইনি, দলের একাংশের ক্ষোভের কারণও হয়ে উঠেছিলেন। প্লে-অফের আগেই সমস্যায় জেরবার কার্তিকের দল বিদায় নেয় আইপিএল থেকে।
ভারতীয় ক্রিকেট মহলে এখনও অনেকে বিলাপ করছেন, বিশ্বকাপের দলে ঋষভের না থাকা নিয়ে। অপ্রত্যাশিত ভাবে শেষ মুহূর্তে সুযোগের দরজা খুলে যায় কি না, তা দেখার জন্য সকলে তাকিয়ে কেদার যাদবের মেডিক্যাল বুলেটিনের দিকে। ডাক্তার, ফিজিয়োরা প্রাথমিক ভাবে যা রিপোর্ট দিয়েছেন, তাতে কেদারের বিশ্বকাপ স্বপ্ন এখনও ধাক্কা খায়নি। তবে তাঁর চোটের ইতিহাসের কথা মাথায় রেখে কেউ খুব নিশ্চিত হতে পারছেন না।
এমনিতে বিরাট কোহালির দলে কেদারের গুরুত্ব রয়েছে। ডান হাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে হাতে ভাল স্ট্রোক রয়েছে। সঙ্গে অদ্ভুত অ্যাকশনে চার-পাঁচ ওভার বোলিংটাও করে দিতে পারেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সাম্প্রতিক অতীতে বার বারই চোটের কারণে দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে ৩৪ বছর বয়সি কেদারকে। গত রবিবার কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের বিরুদ্ধে বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিং করার সময় বাঁ কাঁধে চোট পান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়। আর তিনি মাঠে ফিরে আসেননি এবং এর পরেই সিএসকে-র তরফে ঘোষণা করা হয়, আইপিএলে তিনি নেই।
কেদারের পক্ষে যেটা যেতে পারে, তা হচ্ছে বিশ্বকাপের আগে হাতে থাকা সময়। ৩০ মে শুরু প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রথম ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সাউদাম্পটনে ৫ জুন। অর্থাৎ, এখনও ২৫ দিন মতো সময়। শোনা যাচ্ছে, কাঁধে চিড় ধরা পড়েনি। তা যদি হয়, এতটা সময় পেয়ে সেরে ওঠা উচিত। সেক্ষেত্রে তাঁকে সঙ্গে নিয়েই ইংল্যান্ডের উড়ান ধরবে কোহালির দল। আর যদি টিম ম্যানেজমেন্ট এবং নির্বাচকেরা মনে করেন, সেরে উঠলেও একশো শতাংশ ম্যাচ-ফিট হতে সময় লাগবে কেদারের, তা হলে আইপিএল টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মতোই শেষ মুহূর্তে রুদ্ধশ্বাস মুহূর্ত উপস্থিত হতে পারে। বিশ্বকাপের দল নির্বাচনে ঋষভকে নিয়ে নাটক শেষ হয়েও যেন শেষ হতে চাইছে না।