অদম্য: ভারতের নবীন ব্রিগেড। নায়ক ঋষভের সঙ্গে শুভমন, সাইনি ও মায়াঙ্ক। মঙ্গলবার ব্রিসবেনে সিরিজ জিতে। এপি।
ভারতীয় ক্রিকেট মানচিত্রে ১৩ বছর আগে শুরু হয় এক ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ। নাম দেওয়া হয় আইপিএল। তখন অনেক বিশেষজ্ঞেরাই বলতেন, লাল বলের ত্রিকেটকে একেবারে ধ্বংস করতে এসেছে এই ক্রিকেট লিগ। টেকনিকের তোয়াক্কা না করে রান করাই এই প্রতিযোগিতার মূল মন্ত্র।
অনেকেই হয়তো মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ঐতিহাসিক এই জয়ের কারণ বিশ্লেষণ করতে বসে সেই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের মাহাত্ম্য বিবেচনা করবেন। আসল কথাটা হল, আইপিএল ক্রিকেটের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি ভয়কে জয় করতে শিখিয়েছে ঋষভ পন্থ, শুভমন গিলদের। আগে বিদেশ সফরে ভারতীয় দল যে জিতে ফিরতে পারে, তা ভাবাই যেত না। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সিরিজ ড্র করে ফেরাই ছিল বিরাট প্রাপ্তি। কিন্তু আইপিএলের যুগে বিদেশের সব বিখ্যাত বোলারের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। এমনকি নেটেও প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে প্যাট কামিন্স, জশ হেজলউডদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার ব্রিসবেনে তারই দুই জ্বলন্ত উদাহরণ দেখা গেল।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়েই আইপিএলে খেলে প্যাট কামিন্স। অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে তার বিরুদ্ধে নিয়মিত প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে শুভমন। তাই ব্রিসবেনের পঞ্চম দিনের পিচে কামিন্সকে সামলে দিতে খুব একটা সমস্যা হয়নি শুভমনের। একসঙ্গে দীর্ঘদিন খেলার ফলে মস্তিষ্কও হয়তো একে অপরের মনোভাব কী, তা এখন পড়ে ফেলার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে। কামিন্স কোন বলের পরে কোন বল করতে পারে, তা সব চেয়ে ভাল উপলব্ধি করবে শুভমনই। সামনের পায়ে খেলানোর পরেই দ্বিতীয় বলটা যে বাউন্সার হয়ে ধেয়ে আসতে চলেছে, তা বোঝার জন্য কিন্তু একসঙ্গে বেশ কিছু ম্যাচ খেলা জরুরি। সেই সুযোগ করে দিয়েছে আইপিএলই।
ঠিক তেমনই বিশ্বের অন্যতম সেরা পেসার কাগিসো রাবাডার সঙ্গে খেলার সুযোগ পায় ঋষভ পন্থ। গতি, বাউন্স ও সুইংই যার অস্ত্র। অনরিখ নখিয়ার মতো পেসারকেও নেটে খেলার সুযোগ পায় পন্থ। তাই বিপক্ষে কত বড় পেসার থাকল, তাতে এখন আর কিছু যায় আসে না। আইপিএলই শিখিয়েছে বোলার নয়, বলের মান যাচাই করে ব্যাট করো।
আইপিএল শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতীয় ক্রিকেটে শুরু হয় ফিটনেস বিপ্লব।দ্রুতগতির এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য চাই ফিটনেস, মানসিক দৃঢ়তা ও সাহস। ভারতীয় ক্রিকেটও পেতে শুরু করে একের পর এক তরুণ প্রতিভাকে। প্রমাণিত হয়, ফিল্ডিং করেও বহু ম্যাচ জেতা যায়। উঠে আসে রবীন্দ্র জাডেজা, যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামির মতো তারকারা। পাল্টাতে শুরু করে দলের মানসিকতা। বিদেশের মাটিতেও যাদের দেখে ভয় পেতে শুরু করে ক্রিকেটবিশ্ব। আগে যে ম্যাচগুলো জেতার কোনও সম্ভাবনাই দেখা হত না, আইপিএল আসার পরে সেই ম্যাচগুলোই হয়ে ওঠে সহজ। ব্রিসবেনে টিম পেনদের হারানোর স্বপ্ন কেউ দেখত?