গুঁড়গাওয়ে খুদে ফুটবল-ভক্তদের সঙ্গে ফার্দিনান্দ। ছবি: টুইটার।
ভারতীয় ফুটবলে দরকার এক বক্সারের অনুপ্রেরণা!
এমনটাই অভিনব বিশ্লেষণ যে-সে কারও নয়। স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসনের সোনার জমানার ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের কিংবদন্তি সেন্টার ব্যাকের।
রিও ফার্দিনান্দ।
ইংল্যান্ডের ‘থ্রি লায়ন্স’ জার্সিতে ৮১ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা সাঁইত্রিশের অবসরোত্তর ফার্দিনান্দ মনে করেন, বক্সার বিজেন্দ্র সিংহের মতো অনুপ্রেরণার অভাব রয়েছে ভারতের ফুটবলে। ‘‘আপনাদের দেশের বক্সার বিজেন্দ্র কেমন পেশাদার রিংয়ে নিজেকে এনে ফেলেছে। কেমন প্রফেশনাল বক্সার হয়ে দেশের নতুন প্রজন্মের বক্সারদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে যে, এসো, তোমরাও আমার মতো বক্সিংয়ের সর্বোচ্চ মঞ্চে এসে নিজেকে যাচাই করো। প্রকৃত নায়ক হয়ে ওঠার চেষ্টা করো। আমি পারলে, তোমরাও পারবে না কেন!’’ আনন্দবাজারকে একান্তে বললেন ফার্দিনান্দ।
কিন্তু হঠাৎ ভারতীয় বক্সারে মুগ্ধ কেন কিংবদন্তি ম্যান ইউ ফুটবলার?
ফার্দিনান্দই জানাচ্ছেন, তিনি বরাবরের বক্সিং-ভক্ত। ফুটবলের বাইরে তাঁর প্রিয় স্পোর্টস ইভেন্ট বক্সিং। প্রিয় স্পোর্টস ফিল্ড বক্সিংয়ের রিং। ‘‘ম্যাঞ্চেস্টারেই বিজেন্দ্রর দু’টো পেশাদার লড়াই দেখেছি। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের কাছেই। আসলে গিয়েছিলাম এই ভেবে যে, ভারতীয় বক্সার প্রফেশনাল রিংয়ে বেদম মারটার খাবে। কিন্তু গিয়ে উল্টোটাই দেখলাম। আর মনে হয়েছিল, এ রকম এক জন ভয়ঙ্কর লড়াকু মনের স্বদেশি ফুটবলারকে দেখলে অনুপ্রেরণা পেত ভারতীয় ফুটবল,’’ বললেন ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপার।
গুড়গাঁওয়ে এক স্কুলের ক্রীড়ানুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এ দেশে এসেছেন ইপিএলের প্রাক্তন মহাতারকা ফুটবলার। বলছিলেন “ভারতীয় ফুটবলের সত্যিকারের আন্তর্জাতিক উত্থান তখনই হবে যখন এ দেশের ফুটবলের তৃণমূলস্তরের পরিকাঠামোতেও প্রচুর টাকা বিনিয়োগ হবে। কিন্তু তার জন্য আপনাদের ফুটবলের পরিবেশের আমুল পরিবর্তন দরকার। আর সেটা তখনই সম্ভব হবে যখন বক্সিংয়ে বিজেন্দ্র সিংহের মতো ভারতের ফুটবলেও একজন চ্যাম্পিয়ন পেশাদার প্লেয়ার আসবে। সে-ই ভারতীয় ফুটবলের নতুন প্রজন্মের সামনে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে।”
ইন্ডিয়ান সুপার লিগ নিয়ে ফার্দিনান্দ বন্ধুবান্ধবদের কাছে যেটা শুনেছেন সেটা স্বয়ং তাঁর কথায় এ রকম, “আইএসএল এখনও সেরা বিদেশি ফুটবলারদের পুরোপুরি ব্যবহার করতে সক্ষম হয়নি। কোনও তারকা বিদেশিকে একগাদা পাউন্ড দিয়ে ভারতে এনে ফ্র্যাঞ্চাইজিতে খেলানোই যদি আইএসএলের টার্গেট হয়, তাতে ভারতীয় ফুটবলের একচুলও উন্নতি হবে না। একমাত্র তখনই উন্নতি সম্ভব, যখন সেই বিদেশিকে ভারতীয় ফুটবলের কাজে লাগানো যাবে। তার কাছ থেকে শেখা ফুটবল স্কিলগুলো ভারতীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে। কিন্তু দুঃখের কথা, সে দিকে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কোনও ভ্রুক্ষেপ আছে বলে তো মনে হয় না।”
ফার্দিনান্দই ফাঁস করলেন, ভারতীয় ফুটবলের এই মানচিত্র তাঁর সামনে তুলে ধরেছেন আইএসএলের কয়েকটা ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের বিদেশি কোচেরাই। তাঁদের সকলেরই নাকি ভারতীয় সংস্কৃতি, জীবনযাপনের ধরন ভাল লেগেছে। কিন্তু সঙ্গে তাঁরা এটাও ফার্দিনান্দকে বলতে ভোলেননি যে, ভারতীয় ফুটবলের পরিকাঠামো এখনও যথেষ্ট দুর্বল।