‘হারিয়ে গেলেন সেই প্রতিবাদী ক্রিকেটার’

গোপালদা কিন্তু স্কুল জীবনে সে ভাবে ক্রিকেটটা খেলেননি। কলেজে ঢোকার পর থেকেই আসল ক্রিকেট খেলা শুরু। ১৯৭৩-৭৪ মরসুমে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ইরানি ট্রফিতে একটা দুর্দান্ত ১৭০ রানের ইনিংস খেলেন গোপালদা।

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৮ ০৫:০৮
Share:

এখনও ছবির মতো মনে আছে দিনগুলো। আমি তখন যাদবপুরে থাকতাম। ওই সময় আমার প্রথম আলাপ গোপাল বসুর সঙ্গে। গোপালদার স্কুলজীবনটা দিল্লিতেই কেটেছে। যাদবপুরে ওঁর মামাবাড়িতে এলে আমরা দু’জনে একসঙ্গে টেনিস বলের ক্রিকেট খেলতাম। সন্ধ্যায় টেবল টেনিস।

Advertisement

গোপালদা কিন্তু স্কুল জীবনে সে ভাবে ক্রিকেটটা খেলেননি। কলেজে ঢোকার পর থেকেই আসল ক্রিকেট খেলা শুরু। ১৯৭৩-৭৪ মরসুমে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ইরানি ট্রফিতে একটা দুর্দান্ত ১৭০ রানের ইনিংস খেলেন গোপালদা। মুম্বইয়ের (তখন বম্বে) বিরুদ্ধে কেউ ভাল খেললে সহজেই নির্বাচকদের নজরে পড়া যেত। ওই ইনিংসই ভারতীয় দলের দরজা খুলে দেয় গোপালদার জন্য। শ্রীলঙ্কার (তখন সিংহল) বিরুদ্ধে বেসরকারি টেস্টে সুনীল গাওস্করের সঙ্গে ওপেন করে ১৯৪ রানের জুটি গড়েন। সেঞ্চুরিও করেন গোপালদা।

এর পরে ইংল্যান্ড সফর। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচগুলোয় সফল না হওয়ায় ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সরকারি টেস্ট খেলার ছাড়পত্র মেলেনি। এর পরে ইংল্যান্ড থেকে ফিরে আসার পরে ঘরের মাঠে ভারতের খেলা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, ওপেন করবেন গোপালদা। কিন্তু কোনও এক অজানা কারণে সেই টেস্ট খেলা হয়নি গোপালদার। ইঞ্জিনিয়ার ও সোলকার ওপেন করেন। এর পরে আর টেস্ট খেলাই হয়নি গোপালদার।

Advertisement

আরও পড়ুন: গোপাল বসু প্রয়াত, শোকস্তব্ধ বাংলার ক্রিকেট

ব্যাটসম্যান গোপালদা সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানি। স্ট্রোক খেলার খুব স্বাভাবিক একটা দক্ষতা ছিল। ওই সময়ও ঠুকেঠুকে খেলার মানসিকতা ছিল না। তবে আমি ওঁর বোলিং নিয়ে কিছু বলতে চাই। গোপালদা অফব্রেক করতেন। কিন্তু শুরুতে ওঁর বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। যাকে বলে ‘সাসপেক্ট অ্যাকশন’। তখন তো আইসিসি-র এত ওয়ার্কশপ ছিল না, ভিডিয়ো প্রযুক্তিও ছিল না। গোপালদা নিজে চেষ্টা করে অ্যাকশন শুধরে ফিরে এসেছিলেন। ক্ষুরধার ক্রিকেট বুদ্ধি, খেলাটা সম্পর্কে দারুণ ধারণা থাকার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছিল।

রাজ্য দলে গোপালদা আমার অধিনায়ক ছিলেন। একটা ব্যাপারে সবাইকে প্রভাবিত করেছিলেন। কখনও হ্যাঁ-কে হ্যাঁ, বা না-কে না বলতে দ্বিধা করেননি। ক্রিকেটারদের জন্য নির্বাচক থেকে কর্মকর্তা, সবার সঙ্গে লড়াই করেছেন। তাতে হয়তো অপ্রিয় হয়েছেন, ক্ষতিও হয়েছে গোপালদার, কিন্তু প্রতিবাদ করতে পিছু হঠেননি।

গোপালদা যেমন ভাল অলরাউন্ড ক্রিকেটার ছিলেন, তেমনই ভাল কোচও। ওঁর কোচিংয়ে বাংলা অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ওঁর কোচিংয়ে দেবাঙ্গ গাঁধী, রণদেব বসু, সৌরাশিস লাহিড়ীর মতো সফল ক্রিকেটার তৈরি হয়েছে। ২০০৮ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের ম্যানেজার ছিলেন গোপালদা। যে দলের অধিনায়কের নাম ছিল বিরাট কোহালি! মনে আছে, ফিরে এসে বিরাট নিয়ে গোপালদা বলেছিলেন, এই ছেলেটা ভবিষ্যতের সম্পদ হতে চলেছে।

বার্মিংহামে ছেলের বাড়িতে গিয়েছিলেন গোপালদা। নাতনির জন্মদিনের উৎসব ছিল। জন্মদিনের উৎসব হল ঠিকই, কিন্তু গোপালদা চলে গেলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement