আমার ম্যান অব দ্য ম্যাচ কিন্তু এনরিকে

মেসি নয়। নেইমার নয়। সুয়ারেজ নয়। আমার মতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে বার্সেলোনা-রাতের আসল নায়ক টিমটার কোচ লুই এনরিকে। শুধু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল কেন? বার্সার ‘ম্যান অব দ্য সিজন’-ই আমার মতে ওদের কোচ। বার্সেলোনার প্রাক্তন মিডফিল্ডার পুরনো ক্লাবের কোচের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম মরসুমেই একটা যুগান্তকারী কাজ করেছে।

Advertisement

সুব্রত ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৫ ০৩:৩২
Share:

মেসির জিম্মায় আদরের ট্রফি।

মেসি নয়। নেইমার নয়। সুয়ারেজ নয়।

Advertisement

আমার মতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে বার্সেলোনা-রাতের আসল নায়ক টিমটার কোচ লুই এনরিকে।

শুধু চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল কেন? বার্সার ‘ম্যান অব দ্য সিজন’-ই আমার মতে ওদের কোচ।

Advertisement

বার্সেলোনার প্রাক্তন মিডফিল্ডার পুরনো ক্লাবের কোচের দায়িত্ব নিয়ে প্রথম মরসুমেই একটা যুগান্তকারী কাজ করেছে। না, আমি বার্সার আর এক প্রাক্তন ফুটবলার গুয়ার্দিওলার এই ক্লাবের কোচ হয়ে প্রথম মরসুমেই ইউরোপিয়ান ত্রিমুকুট (স্প্যানিশ লিগ, কাপের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) দেওয়ার মতোই এনরিকেরও একই মহাকীর্তির কথা বলছি না। আমার চোখে এনরিকের আসল কৃতিত্ব বার্সেলোনাকে তিকিতাকা থেকে আরও ভয়ঙ্কর, আরও কার্যকরী চেহারায় রূপান্তরিত করা।

শূন্যে ওড়ার দিন কোচের।

এনরিকের বার্সেলোনার খেলার ভিতও পাসিং ফুটবল। সেই অনেক অনেক অনেক পাস। কিন্তু সেগুলো এখন আর মেসি-ইনিয়েস্তা-নেইমার-বুস্কেতসরা ধীরে, এমনকী আগের মতো কখনওসখনও অতি ধীরে খেলে না। বরং মাঠের সর্বত্র, সে নিজেদের ডিফেন্সিভ থার্ড হোক বা বিপক্ষের অ্যাটাকিং থার্ড— সব সময় সব পাস অতি দ্রুত খেলছে। এনরিকের বার্সার মন্ত্র পাস-পাস-পাসের বদলে এখন দাঁড়িয়েছে দ্রুত পাস-আরও দ্রুত পাস-আরও আরও দ্রুত পাস। আর তার ফলে যেমন বার্সেলোনাকে আগের সেই অত্যাধিক বল হোল্ড করে খেলা কতকটা একঘেঁয়ে একটা টিমের চেয়ে অনেক ডাইরেক্ট ফুটবল খেলা টিম দেখাচ্ছে, তেমনই বিপক্ষ এত দ্রুত পাস খেলা মেসি-সুয়ারেজ-নেইমারের মধ্যে কাকে ছেড়ে কাকে ধরবে তার কুলকিনারা পাচ্ছে না। নইলে কী আর গোটা মরসুমে তিন জনের মিলিত গোল সংখ্যা ১২২ হয়!

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালেও সুয়ারেজ, নেইমারের নামের পাশে গোল রয়েছে। মেসি নিজে গোল করেনি বটে। কিন্তু বার্সেলোনার তিনটের মধ্যে দু’টো গোলের অ্যাসিস্ট-ই ওর। কিন্তু তার পরেও আমার নায়ক ওদের তিন জনের কেউ নয় বরং ওদের কোচ এনরিকে। বার্লিনের মাঠে আমার মতে এনরিকের মাস্টার স্ট্রোক মেসিকে নিখাদ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলানো! তা-ও সেন্ট্রাল মিডফিল্ড পজিশনে! সবাই জানেন এবং প্রচুর লেখালেখিও হয়েছে যে, জুভেন্তাসের ফিনিক্স পাখির মতো বেঁচে ওঠার পিছনে মূল অবদান ওদের মাঝমাঠের। অসাধারণ পির্লোর নেতৃত্বে গোটা মরসুম যে জায়গায় চোখধাঁধানো খেলেছে মারচিসিও, পোগবা, ভিদাল। চার জন একে অন্যের পরিপূরক। যে জন্য জুভ মিডফিল্ডের এত বৈচিত্র এ বার গোটা মরসুম জুড়ে দেখা গিয়েছে।

কিন্তু আসল দিনই সেই পির্লোকে কেমন সাধারণ দেখাল! গোটা জুভ মাঝমাঠ কার্যত মেসির কাছে আত্মসমর্পণ করে বসল। মেসিকে মাঝমাঠে খেলানোর পিছনে আমার মতে এনরিকের অঙ্কটা ছিল—বিপক্ষের সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গাটাকে মেসির গতি আর স্কিল দিয়ে ছারখার করা। বর্ষীয়ান পির্লো তো বটেই, তরুণ পোগবার পক্ষেও সম্ভব নয় মেসির গতির সঙ্গে টক্করে যাওয়া। ফলে মেসি মাঠের ওই অঞ্চলে থাকা মানে জুভের আসল অস্ত্রই ভোঁতা হয়ে যাওয়া।

এবং একবার ফাইনালে মাঝমাঠের দখল বার্সেলোনা নিয়ে নিতেই তার পর পালাক্রমে কখনও মেসি, কখনও সুয়ারেজ উইথড্রন ফরোয়ার্ড হয়ে শাসন করে গেল জুভ ডিফেন্সকে। তার সঙ্গে নেইমারের বাঁ দিক দিয়ে ঘনঘন অ্যাটাক, ওভারল্যাপে আলবা-আলভেজের আক্রমণে বাড়তি লোক হিসেবে যোগদান, রাকিটিচ-ইনিয়েস্তার ড্রিবলিং— সব মিলিয়ে হাফটাইমের পরের মিনিট পনেরো বাদে বাদবাকি খেলায় বার্সারই দাপট ছিল। ম্যাচের চার থেকে চুরানব্বই মিনিটে তিন গোল হজম করেছে জুভেন্তাস। কিংবদন্তি গোলকিপার বুফোঁর গ্লাভস দেওয়াল হয়ে না দাঁড়লে কমপক্ষে আরও তিন গোল খেতে হত সাদা-কালো ইতালীয় ক্লাবকে। মনে রাখবেন, এ বারের আগে শেষ বার কোনও ইতালীয় ক্লাবের বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলে বার্সেলোনাকে কিন্তু ০-৪ হারতে হয়েছিল। এবং সেটাও ক্রুয়েফের সেই ড্রিম টিম-কে। ’৯৪ ফাইনালে এসি মিলানের হাতে।

তবে ক্রুয়েফ ১১টা ট্রফি দিয়েছেন বার্সেলোনাকে। গুয়ার্দিওলা ১৪টা। ওঁদের সঙ্গে এখনই তুলনায় যাচ্ছি না। তবে এনরিকেও খুব পিছনে পড়ে থাকার কোচ নয় আমার মতে। ক্রুয়েফের হাতে যদি বার্সেলোনার ‘লা মাসিয়া’-র জন্ম হয়ে থাকে, অর্থাৎ তাঁর তৈরি অ্যাকাডেমি থেকে জাভি, ইনিয়েস্তা, আলবা, পিকে, বুস্কেতস, ফাব্রেগাস, মেসিরা ‘গ্র্যাজুয়েট’ হন, তা হলে এনরিকে সম্পর্কেও ভাবীকাল বলবে, এই কোচ বার্সার তিকিতাকাতে আরও উন্নত করেছিল।

বার্সার যে ফুটবলটাকে জুভেন্তাস শক্তি দিয়ে খেলে, অজস্র ফাউল করে, ধাক্কাধাক্কি করে, ট্যাকলের নামে শরীরের মধ্যে শরীর ঢুকিয়ে দিয়েও কব্জা করতে পারেনি। তা-ও তো ন্যায্য হ্যান্ডবলের কারণে নেইমারের একটা গোল বাতিল হয়েছে। অনেকে বলতে পারেন, জুভেন্তাস ১-১ করার পর পোগবা পেনাল্টি পেতে পারত। কিন্তু আমার মতে বার্সা বক্সে পোগবাকে ওটা আলভেসের ফাউল ছিল না। পায়ে পা লাগানো মানেই কিন্তু ট্যাকল করা নয়। পোগবা মোটেই আলভেজের ট্যাকলে পড়ে যায়নি ওই ক্ষেত্রে।

যাক গে, ফুটবলের একটা অনেক পুরনো সত্যি কথা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে নতুন করে প্রমাণিত হল আবার।

বুদ্ধির কাছে শক্তির হার!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement