মাঠে নেমে শাস্ত্রীর হুঙ্কার মাঠে আজ শামির পরীক্ষা

চ্যাম্পিয়ন পেয়েও আমরা চলে যেতে বলি

বিশ্বকাপে ভারতীয় টিমের প্রথম প্র্যাকটিস সেশনে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের নিয়ে কী রকম দৃশ্যপট থাকা উচিত? আর সেটা যদি হয় ইডেনে? সিএবি কর্তাদের অবিরাম ছুটোছুটি চলবে। তদারকি চলবে টিমের যাবতীয় প্রয়োজনের।

Advertisement

প্রিয়দর্শিনী রক্ষিত

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৬ ০৪:০২
Share:

বিশ্বকাপে ভারতীয় টিমের প্রথম প্র্যাকটিস সেশনে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের নিয়ে কী রকম দৃশ্যপট থাকা উচিত? আর সেটা যদি হয় ইডেনে?

Advertisement

সিএবি কর্তাদের অবিরাম ছুটোছুটি চলবে। তদারকি চলবে টিমের যাবতীয় প্রয়োজনের।

ক্রিকেটাররা কঠোর পরিশ্রমে ডুবে যাবেন। টিম দেখে নেবে অস্ত্রাগার অটুট কি না।

Advertisement

ক্যামেরার লেন্স মাঠ ছেড়ে এক মুহূর্তের জন্য অন্য দিকে তাকাবে না। ক্রিকেট সাংবাদিকের অখণ্ড মনোযোগ নিবদ্ধ থাকবে শুধু এবং শুধুমাত্র টিম ইন্ডিয়া সেশনে।

বুধবার ইডেনে উপরের দৃশ্যপট তৈরি হল এবং হল না। ক্লাবহাউস গেটের বাইরে মিডিয়ার ওবি ভ্যান দাঁড়াল। কিন্তু যত না ভারতীয় টিমের প্র্যাকটিস সেশনের জন্য, তার চেয়ে অনেক বেশি ভারত-পাকের ইডেন আগমনের নাটকীয় নেপথ্য কাহিনি খুঁজতে। সিএবি কর্তারা ছুটোছুটি করলেন, যেমন করেন। কিন্তু শুধুমাত্র টিমকে কেন্দ্র করে, তা নয়। ইডেনের অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তির খবরাখবর জোগাড়ও থাকল সম-পরিমাণে। এমএস ধোনির টিম ইন্ডিয়া— তারাও কঠোর পরিশ্রম করল। বিরাট কোহালি তো এমন কয়েকটা অসাধারণ ক্যাচ ধরলেন যা দেখে ভাগ্যহীন প্রেমিকেরও মন ভাল হয়ে যাবে। কিন্তু ক্রিকেটারদের মন সম্পূর্ণ ক্রিকেটে থাকল তো?

কেউ কেউ তো বললেন, টিম ইন্ডিয়া নাকি ভাল রকম আক্রান্ত। বিশ্বকাপের আগে প্রথম প্র্যাকটিস সেশন নাকি দাঁড়িয়েছিল ভারত-পাক ম্যাচ ও তার নতুন মঞ্চ ঘিরে গল্প-গবেষণা-আলোচনার আড্ডা।

শোনা গেল, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নাকি ব্যাপারটা দুপুরে প্র্যাকটিসে নামার আগেই শুরু করেছিলেন। সিএবি-র এক পরিচিতকে দেখে ভারত অধিনায়ক নাকি বলে দেন, অপেক্ষা করুন। বড় খবর আসছে! ক্রমে ক্রমে যে ‘বড়’ খবর বাকি টিমের মধ্যে ছড়িয়েছে প্র্যাকটিসের ফাঁকে, যা তৈরি করেছে নানা রঙের মেজাজ। রোহিত শর্মাকে নাকি যে কোনও বঙ্গবাসীর মতোই পুলকিত দেখিয়েছে। কারণ আর কিছুই না। ম্যাচটা কলকাতায় আর রোহিতের সঙ্গে ইডেনের মধুচন্দ্রিমা বিশ্বের দীর্ঘতম বললে ভুল হবে না। রঞ্জি আর টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি, ওয়ান ডে বিশ্বরেকর্ড, অধিনায়ক হিসেবে আইপিএল জয়— ইডেন কম দেয়নি মুম্বইকরকে।

শোনা গেল, রোহিত নাকি চেনা-পরিচিতদের বলেও দিয়েছেন, ভারত-পাক ইডেনে এসে ভালই হল। পয়া মাঠে নামতে কে না চায়? রবি শাস্ত্রী যে রবি শাস্ত্রী, ব্যারিটোনের ধাক্কায় যাঁর সঙ্গে একটা ডাকাবুকো ইমেজ বরাবর সেঁটে থাকে, তিনি পর্যন্ত নাকি কারও কারও কাছে আবদার জুড়েছেন টিকিটের। বক্তব্য পরিষ্কার, ধর্মশালার বদলে কলকাতা হলে তো চাহিদা কমবে না। কিছু টিকিট পাওয়া যাবে তো? শাস্ত্রীর আবদারের মধ্যে নাকি আবির্ভাব হয় বোলিং কোচ ভরত অরুণের। তিনি অম্লানমুখে শুধু নাকি জুড়ে দেন, শাস্ত্রী টিকিট পেলে তিনিই বা বাদ যান কেন?

পুরোটাই ঠাট্টা-ইয়ার্কি। সিরিয়াসনেসের ফাঁকে রসিকতা মিশিয়ে দেওয়া। সাংবাদিক সম্মেলনেও যে ভারতীয় টিম ডিরেক্টরকে পাওয়া গেল, তিনি বেশ ফুরফুরে। তাঁর টিম যে আত্মবিশ্বাসের এভারেস্টকে স্থায়ী ঠিকানা বানিয়ে ফেলেছে, কথাবার্তায় বারবার বেরিয়ে আসছে। বোলিং নিয়ে বলতে গিয়ে ভারতের টিম ডিরেক্টর আপ্লুত ভরত অরুণকে নিয়ে। বলে গেলেন, হালফিলে পুরো শক্তির বোলিং লাইন আপ না পেয়েও কী ভাবে তাঁদের বোলাররা বিপক্ষের ত্রাস হয়ে উঠেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের শুরুর দিকে চোটের জন্য ছিটকে গিয়েছিলেন অশ্বিন। শামি বহু দিন দলে অনিয়মিত। তবু আশিস নেহরা, জসপ্রীত বুমরাহ, হার্দিক পাণ্ড্যরা সুযোগ পেয়ে সেটাকে দুর্দান্ত ভাবে কাজে লাগিয়েছেন। আর তাঁর বোলিং ইউনিটকে থিতু করেছেন ভরত অরুণ।

বিরাট নিয়েও ভাল রকম উচ্ছ্বসিত দেখাল শাস্ত্রীকে। বললেন, ‘‘বিরাট অসাধারণ ফর্মে রয়েছে। কিন্তু বিশ্বকাপ জিততে হলে কোনও এক জনের উপর নির্ভর করে থাকলে হয় না। টিমের অন্তত সাত-আট জনকে ভাল পারফর্ম করতে হবে। যুবরাজ ফর্মে ফিরেছে। ধোনিও। তবে বিরাট সব সময় একটা খিদে নিয়ে ব্যাট করতে নামে। বড় টিমের সঙ্গে ও রান করবেই। পাকিস্তান ম্যাচটাই ধরুন।’’

আর তাঁর টিমের ‘প্রবলেম অব প্লেন্টি’? এই যে দিনের পর দিন হরভজন সিংহদের বসিয়ে রেখে নামতে হচ্ছে, এটা কতটা কঠিন? এ বার শাস্ত্রীয় জবাব, ‘‘আমি তো বলব, এটা আমাদের টিমের একটা ভাল মাথাব্যথা। আমাদের হাতে এখন এত ভাল ভাল ক্রিকেটার যে, রাহানে আর হরভজনের মতো প্লেয়ার রিজার্ভ বেঞ্চে বসে।’’ পরে শোনা গেল, ড্রেসিংরুমে দেখা করতে আসা এক সিএবি কর্তাকে আরও একটা কথা নাকি বলেছেন শাস্ত্রী। বলেছেন যে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত তাঁকে দায়িত্ব দিয়ে এনেছিল বোর্ড। ওটা তাই তিনি যে কোনও মূল্যে চান।

শুধু এক বারই ছন্দপতন। ধোনি এখনও চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার কি না, তা নিয়ে সাংবাদিকদের খোঁচাখুচির সময়। শাস্ত্রী রেগেমেগে তখন বলে দেন, ‘‘আর কত বার যে এই প্রশ্নটা শুনতে হবে! আমাদের দেশের এটাই সমস্যা। আমরা চ্যাম্পিয়ন পাই। কিন্তু তার পর সেই চ্যাম্পিয়নের পিছনে পড়ে যাই। তাকে বলি, তুমি তাড়াতাড়ি চলে যাও।’’

ভারতীয় সংসারেও কিছু ছন্দপতন আছে। যুবরাজ সিংহ যেমন নেটে ব্যাটিংয়ের সময় বাঁ হাতে ব্যথা অনুভব করায় তাঁর এমআরআই করানো হল। আশিস নেহরার জন্য দেখা গেল আইসপ্যাকের বন্দোবস্ত। আর একজন অবশ্য থাকলেন, যাঁর দুঃসময়টা বেশ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে, এশিয়া কাপেও তাঁর খেলা হয়নি। বহু দিন পর মাঠে ভারতীয় টিমের সঙ্গে নামতে দেখা গেল তাঁকে। ভাল বোলিংও করলেন। রোহিতের স্টাম্প উড়িয়ে দিলেন এক বার, যুবরাজের গায়ে কয়েকটা ডেলিভারি আছড়ে পড়ল। সিএবি-র কেউ কেউ শোনা গেল অরুণদের কাছে তদ্বির করতে গিয়েছিলেন, তাঁর অবস্থা নিয়ে। জানতে পেরেছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্র্যাকটিস ম্যাচে তিনি নামছেন। ওখানেই নাকি যা বোঝার বোঝা হয়ে যাবে।

ইনি, মহম্মদ শামি। যাঁর কাপ স্বপ্নের হয়তো আজই এসপার বা ওসপার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement