দে দৌড়। লাল-হলুদ প্রস্তুতিতে বার্তোস, র্যান্টিরা। —নিজস্ব চিত্র
ডার্বির ৪৮ ঘণ্টা আগে নিজের দলকে ‘আন্ডারডগ’ বলে দিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ আর্মান্দো কোলাসো। সুভাষ ভৌমিকের মোহনবাগানকে এগিয়ে রেখে তাঁর মন্তব্য, “মোহনবাগান তো ভালই খেলছে। মহমেডান, কালীঘাটএমএস, এরিয়ানও বেশ ছন্দে আছে। কেবল আমরাই এখনও ছন্দ খুঁজে পাইনি। তাই রবিবারের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল আন্ডারডগ।”
শুক্রবার বিকেলে আইএফএ অফিসে বসে সাংবাদিকদের যখন এ কথা বলছেন লাল-হলুদ কোচ, ততক্ষণে তাঁর মোবাইলে বার্তা ঢুকে গিয়েছে— অর্ণব মণ্ডলের চোট খুব একটা গুরুতর নয়। শহরে পা দিয়ে ফেলেছেন তাঁর দলের অন্য আইকন ফুটবলার ডুডু। এই পরিস্থিতিতেও আপনার দল ব্যাকফুটে? এ বার একটু নড়েচড়ে বসলেন আর্মান্দো। চোয়াল শক্ত করে বললেন, “আমরা এখনও ছন্দ পাইনি সেটা যেমন ঠিক, তেমনই রবিবার সেই ছন্দ যে ফিরে পাব না তাও কিন্তু বলিনি। আমরা নিজেদের ছন্দে খেলতে পারলে কিন্তু ইস্টবেঙ্গলকে আটকানো কঠিন। অঙ্ক আমরাও কষছি।”
আর্মান্দোর কথাতেই পরিষ্কার, মাঠের বাইরে ক্লাবের অন্যতম শীর্ষকর্তার গ্রেফতার হওয়া ও মাঠের ভিতর ফুটবলারদের অফ ফর্ম ডার্বির আগে যতই রক্তচক্ষু দেখাক না কেন, সেই ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর’ থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে ইস্টবেঙ্গল। শীর্ষকর্তার অবর্তমানে দলের অন্য কর্তা এবং নতুন প্রজন্মের ছোট কর্তারাও বয়স, মানসিকতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছেন দলের পাশে। আপাতদৃষ্টিতে চোখে না পড়লেও ভিতরে ভিতরে বইছে মোটিভেশনের স্রোত। এ দিনই যেমন কার্যকরী সমিতির এক তরুণ সদস্য ঘোষণা করে দিয়েছেন, দল জিতলে পাঁচতারা হোটেলে তিনি নৈশভোজের ব্যবস্থা করবেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে। সঙ্গে থাকবে দলের জন্য একলাখের বোনাসও।
আর ফুটবলাররা? তাঁরাও যেন ফুরফুরে মেজাজে। যেমন লাল-হলুদ অধিনায়ক হরমনজ্যোৎ সিংহ খাবরা। সকালে অনুশীলন সেরে যুবভারতী ছাড়ার সময় বলছিলেন, “ওরা আমাদের চেয়ে দু’পয়েন্টে এগিয়ে মাঠে নামবে। কিন্তু মাঠে নামলে কে কত পয়েন্টে এগিয়ে, সে সব মাথায় রেখে কেউ খেলে না। আমরা গোলের জন্য তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে গোল খাচ্ছি। সেই ভুলত্রুটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।” আর সহ-অধিনায়ক গুরবিন্দর সিংহ এমনই বিন্দাস যে, অনুশীলন শেষের পর ক্লাব তাঁবু থেকে প্র্যাকটিসের সরঞ্জাম যে গাড়িতে যুবভারতী এসেছিল সেটাই চালিয়ে বেরিয়ে গেলেন! যাওয়ার আগে তাঁর ছোট্ট মন্তব্য, “ওরা এগিয়ে। তবে আমরাও ছাড়ব না।”
বিশ্বকাপ খেলা লিও বার্তোস? সকালে অনুশীলনের আগে তাঁকে নিয়ে বসেছিলেন কোচ এবং দলের টেকনিক্যাল ম্যানেজার অ্যালভিটো ডি’কুনহা। অ্যালভিটো তাঁকে বড় ম্যাচের গুরুত্ব বোঝাতে যেতেই বার্তোসের সাফ কথা, “জানি। এই ম্যাচটা জিতলে তো এখানে দু’তিন দিন ধরে উৎসব হয়। ইউটিউবে এই ম্যাচে তোমার গোল দেখেছি। আমিও গোল করার চেষ্টা করব।” অনুশীলনে দীপক, গুরবিন্দরদের ব্যাক ফোরের বিরুদ্ধে মাঝমাঠ এবং আক্রমণভাগকে খেলিয়ে নিজের স্ট্র্যাটেজি শানিয়ে নিচ্ছিলেন লাল-হলুদের গোয়ান কোচ। যেখানে মিডল করিডরে খাবরা-মেহতাবকে রেখে অনুশীলন হল পুরোদমে। আর বার্তোসকে রাখা হল আক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে। লাল-হলুদ কোচ নিজে যদিও বলছেন, “ফর্মেশন তো জামা নয় যে পাল্টে নিলেই চলবে। বার্তোসকে নিয়ে আমার বিশেষ প্ল্যানিং রয়েছে।”
নিউজিল্যান্ডের ২০১০ বিশ্বকাপ টিম আর ওয়েলিংটন ফিনিক্স ক্লাবে বার্তোসের কোচ ছিলেন রিকি হারবার্ট। বর্তমানে আইএসএলে জন আব্রাহামের দল নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র কোচ। তিনি অবশ্য শহরে পা না দিয়েও জেনে ফেলেছেন ডার্বিতে ছাত্রের অভিষেকের সম্ভাবনার কথা। যোগাযোগ করায় বললেন, “লিও অ্যাটাকিং মিডিও। ডার্বিতে ওকে সেই ভূমিকায় রাখলে ওর দলের আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়তেই পারে।” যা শুনে আর্মান্দো বলছেন, “সবার পরামর্শই শুনছি। তবে রবিবারের অঙ্ক নিজেই কষে নেব ঠিক সময়ে।”