বাংলার লজ্জা ঢাকলেন দুই ‘ভদ্রলোক’

ইডেনের লজ্জার দিনে বাংলার লজ্জা ঢাকলেন দলের দুই ‘জেনুইন জেন্টলম্যান’। সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ও ঋদ্ধিমান সাহা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:১২
Share:

ঋদ্ধিমান সাহা: ৯০। সুদীপ চট্টোপাধ্যায়: ১৪৫।

ইডেনের লজ্জার দিনে বাংলার লজ্জা ঢাকলেন দলের দুই ‘জেনুইন জেন্টলম্যান’।

Advertisement

সুদীপ চট্টোপাধ্যায় ও ঋদ্ধিমান সাহা।

মিডল অর্ডারে এই দুই ব্যাটসম্যান গত বারের চ্যাম্পিয়ন কর্নাটক বোলারদের সামনে ১৭৩-এর পার্টনারশিপের প্রাচীর না তুললে বাংলাকে হয়তো তার এ বারের রঞ্জি ট্রফির প্রথম দিনই লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হত।

Advertisement

চিন্নস্বামীর সবুজ ঘাসে মোড়া উইকেটে বৃহস্পতিবার সাতসকালে ৪১-৪ হয়ে যাওয়া বিপন্ন বাংলাকে ক্রিজে ফেলে রেখে যখন ড্রেসিংরুমে ফিরে যান দলের নতুন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি, তখনই ঋদ্ধিমান-সুদীপের যুগলবন্দি শুরু। এই দু’জন ছাড়া বাংলার বাকি ব্যাটসম্যানদের অবদানের কথা যত কম বলা যায় ততই ভাল। সদ্য প্রাক্তন অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল (২৪), যাঁকে এ দিন সাত নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হয়, তিনিই বাকিদের মধ্যে একমাত্র, যাঁর নামের পাশে কুড়ির উপর রান আছে। বাংলার আধডজন ব্যাটসম্যান ডাবল ফিগারে পৌঁছতে পারলেন না। তা সত্ত্বেও বাংলা দিনের শেষে ৩১২-৯।

সুদীপ তাঁর দ্বিতীয় প্রথম শ্রেণির সেঞ্চুরি পেলেও ঋদ্ধি সেঞ্চুরি থেকে মাত্র দশ রান দূর থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু ততক্ষণে বাংলার প্রথম ইনিংস বিপক্ষের মাঠে শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে গিয়েছে। সকালে যে বিপদ ঘনিয়ে এসেছিল বাংলা শিবিরে, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে সেই বিপদসীমা থেকে দলকে অনেকটা দূরে নিয়ে যান দুই দলের ‘জেন্টলম্যান ক্রিকেটার’, যাঁরা কথা কম বলেন এবং যাঁদের ব্যাটই বেশি কথা বলে। ক্রিকেটদুনিয়ায় যাঁদের শত্রু সংখ্যা প্রায় শূণ্য বলা যায়। সুদীপের ১৪৫-এর ইনিংসে ১৬টা বাউন্ডারি। ঋদ্ধির ৯০-এর ইনিংসে দশটা বাউন্ডারি ও একটা ছয়। দলীয় সূত্রে জানা গেল, দশ রানের জন্য সেঞ্চুরির সুযোগ নষ্ট করায় নাকি তাঁর আক্ষেপ নেই। দলকে বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে পেরেই বাংলার টেস্ট উইকেটকিপার বেশি খুশি।

বেঙ্গালুরুর উইকেটে কী এমন জুজু ছিল, যার ফলে বাংলার প্রথম চার উইকেট পড়ল ৪১ রানে ও শেষ চার উইকেট পড়ল ৫৮ রানে? ওই উইকেটে প্রায় ছ’ঘন্টা কাটানো সুদীপ ফোনে বলছিলেন, ‘‘প্রথম দিকে মনে হচ্ছিল উইকেটটা একটু কঠিন। বোলাররাও বেশ আগ্রাসী বোলিং করছিল। সে তো ঘরের উইকেটে করবেই। কিন্তু কিছুক্ষণ উইকেটে থাকার পর মানিয়ে নেওয়া যায়। তখন মনে হচ্ছিল ব্যাট করার পক্ষে উইকেটটা খারাপ নয়।’’

বিপন্ন দলকে বাঁচাতে যখন জুটি বাঁধেন সুদীপ এবং ঋদ্ধি, তখন গোড়াতেই নিজেদের মধ্যে দলকে বাঁচানোর নীল-নকশাটা ক্রিজে দাঁড়িয়ে ছকে নিয়েছিলেন দু’জনে। সুদীপ বললেন, ‘‘তখন আমাদের একটা বড় পার্টনারশিপের দরকার ছিল। আমরা প্ল্যান করলাম, আস্তে আস্তে এগোব। ক্রিজে টিকে থেকে ছোট ছোট পার্টনাররশিপকে বড় বানাব। তাড়াহুড়ো করলে চলবে না।’’

গত বারের রঞ্জিতে বরোদার বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছিলেন সুদীপ। খেলেছিলেন ৯৬-এর একটা ইনিংসও। দলীপ ট্রফিতে এক রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি। এ দিনের ইনিংসটাকেই আপাতত তাঁর সেরা বলছেন সুদীপ। ‘‘দলকে বিপদের হাত থেকে বাঁচানোই তো এক জন প্লেয়ারের কাছে সবচেয়ে তৃপ্তির পারফরম্যান্স। আমার আজ সেটাই হল। তাই মনে হয় এটাই এখন পর্যন্ত আমার সেরা ইনিংস। তবে ভবিষ্যতে এ রকম আরও অনেক ভাল ইনিংস খেলতে চাই।’’

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলা

প্রথম ইনিংস— ৩১২-৯

(সুদীপ ১৪৫, ঋদ্ধিমান ৯০, বিনয় কুমার ৩-৮০, শরথ ৩-৪৭)।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement