মনোজ তিওয়ারি।—ছবি সংগৃহীত।
পরিস্থিতি আয়ত্বে চলে আসার পরেও ভুল শট বাছাই। সঙ্গে স্কোরবোর্ডে রান বাড়ানোর জন্য অযথা তাড়াহুড়ো করা। রঞ্জি সেমিফাইনালের প্রথম দিনে দিল্লির বিরুদ্ধে ঠিক এই ভুলের মাশুলই গুনতে হল মনোজ তিওয়ারির বাংলাকে।
ফলে চা পানের বিরতি পর্যন্ত যে ম্যাচ হাতের মুঠোয় ছিল বাংলার। সেই ম্যাচের-ই স্টিয়ারিং শেষ বেলায় দিল্লির হাতে। প্রথম দিনের শেষে বাংলার রান ২৬৯-৭। ক্রিজে রয়েছেন শ্রীবৎস গোস্বামী (১৯) এবং আমির গনি (৪)। অথচ চা পানের বিরতির পরে এক সময় বাংলার রান ছিল ২০০-৩। সেখান থেকে তৃতীয় সেশনে ৬৯ রানে চার উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলা-ই।
প্রথম দিনের খেলা শেষ হওয়ার পরেই মাঠে ব্যাটিং প্র্যাকটিস করছিলেন অশোক ডিন্ডা ও মহম্মদ শামি। কিছু পরেই দু’জনকে ডেকে নেওয়া হল টিম মিটিংয়ে। আধঘণ্টার টিম মিটিংয়ের পর সাইরাজ বাহুতুলে যখন দলবল নিয়ে মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের মাঠ ছেড়ে বেরোচ্ছেন তখন সবার মুখ থমথমে। মিডিয়ার সঙ্গে কথা না বলে বাসে উঠে পড়লেন মনোজ তিওয়ারিরা।
উল্টো দিকে তখন হাসি হাসি মুখে মিডিয়াকে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছিলেন দিল্লির বাঁ হাতি স্পিনার মনন শর্মা। কলকাতা নাইট রাইডার্স-এর প্রাক্তনী মনন প্রাক্তন টেস্ট ক্রিকেটার অজয় শর্মার ছেলে। এ দিন তিনিই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মনোজ তিওয়ারি (৩০) এবং সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের উইকেট (৮৩) তুলে নেন। আর তাতেই ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগ মেলে দিল্লির। স্টেডিয়াম ছাড়ার আগে মনন বলছিলেন, ‘‘টসে হেরে বোলিং করায় ভালই হয়েছে। আশা করছি। বাংলাকে ৩২০-র আশেপাশে প্রথম ইনিংসে আটকে রাখব আমরা। তার পরে কাজটা আমাদের ব্যাটিংয়ের। পিচে কোনও জুজু নেই। কোয়ার্টার ফাইনালে ভালই খেলেছে আমাদের ওপেনাররা। আশা করছি, এই পিচে অসুবিধা হবে না।’’
তার পরেই বললেন আসল কথাটা। যা শুনলে মনে হতে পারে, বাংলা অধিনায়কের সেমিফাইনাল ম্যাচের স্ট্র্যাটেজি কপি-পেস্ট করে নিজেদের মগজে ঢুকিয়ে নিয়েছিলেন মনন-রা। হাসতে হাসতে মনন বলছিলেন, ‘‘এই পিচে যতটা সম্ভব রান আটকাতে হবে। পিচে বল থমকে আসছে। ফলে ওদের অসুবিধা হচ্ছিল। জানতাম মনোজ তিওয়ারি আমাদের বোলাদের আক্রমণ করার চেষ্টা করবে। আমাদের সেই ফাঁদে প্রথমে পা দিল মনোজ। তার পরে সুদীপ। তাতেই ম্যাচে ফিরেছি আমরা।’’
দিনের শুরুতেই অভিমন্যু ঈশ্বরন (৪) যখন নভদীপ সাইনির (২-৪৫) বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরছেন তখন আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু এর পরে সেট হয়ে গিয়েই অহেতুক আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে প্রথমে আউট হন অভিষেক রমন (৩৬)। এর পরেই খেলা ধরে নিয়েছিলেন বাংলা ক্রিকেটের দুই চট্টোপাধ্যায়। ঋত্বিক (৪৭) এবং সুদীপ। কিন্তু এই সময় বিকাশ টোকাশ-এর বলে ফ্লিক করতে গিয়ে ফিরে যান ঋত্বিক।
তার কিছু আগে অবশ্য নভদীপ সাইনির বলে সুদীপের কট বিহাইন্ডের জোরালো আবেদন নাকচ হয়ে গিয়েছে।
এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল। মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অভয় আপ্তের বক্সে বসে খুশির মেজাজে খেলা দেখছিলেন গতকাল রাতে পুণেতে আসা সিএবি-র যুগ্ম সচিব অভিষেক ডালমিয়া। স্কোরবোর্ডে তখন ২০০-৩। খেলা দেখছিলেন জাতীয় নির্বাচক শরণদীপ সিংহও। তাঁর সামনে শতরান করে নিজেকে তুলে ধরার বড় সুযোগ ছিল সুদীপের সামনে। কিন্তু অযথা তাড়াহুড়ো করে ব্যাকফুটে কাট করতে গিয়ে আউট হয়ে নিশ্চিত শতরান হারালেন তিনি।
এর পরে তিন ওভারের মধ্যেই বাংলা দ্রুত ২০৯-৫ হয়ে যায়। যা দেখে বিরক্ত মুখে বক্সের ব্যালকনি ছেড়ে ভিতরে ঢুকে যান অভিষেক। তার কিছু পরেই নভদীপ সাইনির বলের পেস বুঝতে না পেরে বোল্ড হন অনুষ্টুপ মজুমদার (৩২)।
দিনের শেষে দিল্লির বোলিং কোচ মনোজ প্রভাকরও বলে গেলেন, ‘‘বাংলার ব্যাটসম্যানরা শট খেলতে গিয়ে ভুল করেছে। তাতে সুবিধা হয়েছে দিল্লির।’’ সঙ্গে তিনি এটাও বলছেন, ‘‘সবে ম্যাচের প্রথম দিন। এখনই আনন্দে ভাসার কিছু হয়নি। ম্যাচটা এখনও ফিফটি-ফিফটি রয়েছে দু’দলের কাছেই।’’