সায়নের চার কাজে এল না।
ক্রিকেটকে মহান অনিশ্চয়তার খেলা বলে। শেষ বল না হওয়া পর্যন্ত যেখানে ঠিক করা যায় না জয়ীর মুকুট, যেখানে কখনও একটা শট বা একটা বল ক্রিকেটারকে রাজা থেকে ফকির বা ফকির থেকে রাজা বানিয়ে দেয়। কে ভেবেছিল, ক্রিকেটের এই আপ্তবাক্যটা বাংলার উপর খেটে যাবে?
বাংলার প্রথম ইনিংসে ৩৩৭ তাড়া করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৩১০-৯ হয়ে গিয়েছিল তামিলনাড়ু। ভাবা যায়, এর পরেও অভিনব মুকুন্দের টিমকে তার কমে আটকে রাখতে পারবে না বাংলা? শেষ উইকেটটা ফেলার জন্য ২৭ রান হাতে পেয়েও তা শেষ পর্যন্ত হবে না, বিলীন দেখাবে তিন পয়েন্টের আশাকে? মোক্ষম সময়ে পড়বে দু’টো ক্যাচ?
পাটা উইকেটে পেস বোলিং কাকে বলে, দেখিয়েছিলেন বাংলার সায়ন ঘোষ। সাইড অন অ্যাকশনে তাঁর বোলিং ধরন অনেকটা শ্রীলঙ্কা পেসার লাসিথ মালিঙ্গার মতো। যে অ্যাকশনে গতিটা বেশি পাওয়া যায়। এবং গতিতেই হোক বা অভ্রান্ত নিশানাতেই হোক, তামিলনাড়ু ব্যাটসম্যানদের কাজ প্রবল কঠিন করে দিয়েছিলেন বঙ্গ পেসার। রাজকোটের পাটাতেও যাঁর উইকেটসংখ্যা ৪। শিকারের নাম—বাবা ইন্দ্রজিৎ, বাবা অপরাজিত, অশ্বিন ক্রাইস্ট এবং ঔশিক শ্রীনিবাস। ৩৫ ওভার বল করে। ১২১ রান দিয়ে।
কিন্তু তাতেও তো তামিলনাড়ুকে ৩৩৭ রানের মধ্যে আটকে রাখা গেল না। সন্ধের রাজকোট থেকে ফোনে সায়ন আক্ষেপ করছিলেন। বলছিলেন, ‘‘ভাল বোলিংয়ের কোনও দামই থাকল না। এত কাছে এসেও হল না ভাবলে খারাপ লাগছে। ওরা ভাল ব্যাটিং করে দিল ঠিকই। কিন্তু কয়েকটা শট এ দিক ও দিক বেরিয়েও গিয়েছে।’’
জানা গেল, মোক্ষম সময়ে দু’টো ক্যাচও পড়েছে। দীনেশ কার্তিক যখন কুড়ি রানে ছিলেন, তখন। আবার শেষ জুটি ব্যাট করার সময়েও পড়েছে একটা। তাই বোলারদের দিয়ে ইয়র্কার, শর্ট-- সব রকম চেষ্টাতেও লাভ হয়নি। অথচ একটা সময় পর্যন্ত বাংলার দিকেই পাল্লা ভারী দেখাচ্ছিল। গত দিনের ৬০-১ স্কোরে শুরু করে মঙ্গলবার একশো পেরনোর একটু পর দ্বিতীয় উইকেট পড়ে তামিলানড়ুর। কিন্তু তার পরই খেলা পাল্টাতে থাকে। ২১২ রানের মধ্যে পাঁচটা বেরিয়ে যায়, ৩১০ রানের মধ্যে যায় ন’টা। প্রজ্ঞান ওঝা দু’টো উইকেট নেন। কিন্তু তামিলনাড়ু মিডল অর্ডারকে ঝাঁকুনিটা দেন সায়ন। ক্রিকেটজীবনের গোড়াতেই যাঁকে ঝাঁকুনি সহ্য করতে হয়েছিল। বছর উনিশ বয়স যখন, রেলে চাকরি পান। কিন্তু দুঃসহ জীবনের মধ্যে পড়তে হয়। জীবন একটা সময় এক অদ্ভুত প্রশ্নের সামনে বাংলা পেসারকে দাঁড়ও করিয়ে দেয়। হয় ক্রিকেট, নয় চাকরি। চাকদহের ছেলে বেছে নেন প্রথমটাকে।
‘‘আমরা ঠিক করেছিলাম যে, রাজকোটের যা উইকেট তাতে নিশানাটা ঠিক রাখতে হবে। পরে দেখতে হবে যদি রিভার্স করানো যায় কি না। সবই হচ্ছিল ঠিকঠাক। কিন্তু শেষটা হল না,’’ পরে বলছিলেন সায়ন। ঠিকই তো। কে ভিগনেশ আর টি নটরাজন জুটি তো বাংলার প্রথম ইনিংস রান পেরিয়ে যাওয়ার পরেও অটুট। ৩৮ রান জুড়ে।
আজ, বুধবার ম্যাচের শেষ দিন। মহানাটকীয় কোনও ওলটপালট না হলে বাংলার পকেটে থাকছে এক পয়েন্ট, তামিলনাড়ুর তিন। বাংলা শুধু একটা আশাবাদই করতে পারে। ক্রিকেট নিয়ে এক আপ্তবাক্যের আশাবাদ।
ক্রিকেট এক মহান অনিশ্চয়তার খেলা। কখন কী ঘটবে, কে বলতে পারে!
স্কোর
বাংলা প্রথম ইনিংস ৩৩৭ তামিলনাড়ু প্রথম ইনিংস ৩৪৮-৯ (কার্তিক ৮০, সায়ন ৪-১২১)।