কোচ গোপীচন্দের সঙ্গে সিন্ধু। এএফপি-র তোলা ছবি।
অন্য দিনের থেকে এ দিনটা যেন একটু আলাদা মনে হচ্ছিল তাঁর। হায়দরাবাদের এয়ারপোর্টে এর আগেও তো বহু বার পা রেখেছেন। দেশ-বিদেশের টুর্নামেন্ট খেলতে এখান দিয়েই বিমান ধরেছেন। কিন্তু, এ দিনটা যেন একটু অন্য রকম। তাঁর ঝুলিতে এখন অলিম্পিক্সের রুপো। ইতিহাস পকেটে পুরে নিজের শহরে পা রাখলেন পিভি সিন্ধু।
সোমবার সকাল থেকেই এয়ারপোর্টের বাইরে ভিড়ে ভিড়াক্কার। গোটা শহরটাই যেন ভেঙে পড়েছে সেখানে। মা-বাবাকে দেখে এগিয়ে গেলেন উচ্ছ্বসিত সিন্ধু। মা পি বিজয়া অন্ধ্রের বিজয়বাড়ার আর বাবা পিভি রমেশ তেলঙ্গানার আদিলাবাদের বাসিন্দা। রুপোর মেয়েকে বরণ করতে এ দিন হাজির ছিলেন ওই দু’রাজ্যের সরকারেরই হোমড়াচোমড়া ব্যক্তিরা। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে ভক্তদের মধ্যে নিজেকে যেন মিশিয়ে দিলেন সিন্ধু। মা-বাবা-কোচ আর রিওতে পুরুষদের কোয়ার্টারে পা রাখা কিদাম্বি শ্রীকান্তকে সঙ্গে নিয়ে যখন এয়ারপোর্টের বাইরে এলেন তখন সেখানে জাতীয় পতাকা-পোস্টার হাতে ভক্তদের জমায়েত। চিৎকার-স্লোগানে-ভালবাসা-আবেগে সিন্ধুকে ভাসিয়ে দিচ্ছেন সকলেই। এয়ারপোর্টের বাইরে পা রাখার পর এ বার হুডখোলা দোতলা বাসে ওঠার পালা। চারধারে গাঁদাফুলের মালায় সাজানো বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে তেলঙ্গানা সরকারের পক্ষ থেকে। শহর ঘুরিয়ে এ বার গাচিবাওলি স্টেডিয়ামে যাওয়ার পালা। সেখানেই সংবর্ধনার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার।
হুডখোলা দোতলা বাসের দু’ধারের রাস্তায় সকাল থেকে সারি সারি মাথা। একঝলক তাঁদের দেখার জন্য ভিড়ে ভিড়াক্কার রাস্তার দু’পাশ। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে বাস। গাঁদাফুলের মালায় সাজানো বাসে মাথায় দাঁড়িয়ে রিও অলিম্পিক্সের তারকারা— পিভি সিন্ধু, কিদাম্বি শ্রীকান্তরা। উৎসাহীদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছেন তাঁরা। শহরে ফিরলেন অলিম্পিক্সের উজ্জ্বল ভারতীয়রা। আর দেশের মাটিতে পা দিয়েই জনতার আবেগে ভাসলেন সিন্ধুরা। রুপো জয়ী পিভি সিন্ধু বা কিদাম্বি শ্রীকান্তকে নিয়ে এ দিন উৎসাহের অন্ত ছিল না। সিন্ধুদের সঙ্গে আবেগে ভাসলেন কোচ পুল্লেলা গোপীচন্দও। সাইনা নেহওয়ালের পর সিন্ধুর অলিম্পিক্স পদক জয়ের পিছনে রয়েছে যাঁর অবদান রয়েছে।
এ দিন সকালে শহরের রাস্তায় ভিড়ের চাপে এগোতে পারছিল না সিন্ধুদের বাস। হায়দরাবাদের গাচিবাওলি স্টেডিয়ামে সিন্ধু-কিদাম্বিদের সংবর্ধনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু, এয়ারপোর্ট থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত মাত্র ৩০ কিলোমিটারের পথ পেরোতেই কেটে গেল বহু সময়। প্রায় গোটা শহর পরিক্রমা করে স্টেডিয়ামে সিন্ধুদের বাস ঢুকতেই উল্লাসে ফেটে পড়লেন দর্শকাসনে জমায়েত ফ্যানেরা। পোস্টার-ব্যানার নিয়ে আগে থেকেই স্টেডিয়ামে হাজির ছিলেন যাঁরা। হায়দরাবাদি তারকাকে একঝলক দেখতে তখন হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তেলঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের হত্তাকর্তারা। এ দিন এয়ারপোর্টেই সিন্ধুদের বরণ করেছেন তাঁরা। একটি হুডখোলা জিপে করে গোটা স্টেডিয়াম ঘোরানো হয় সিন্ধু-শ্রীকান্ত-গোপীচন্দদের। তেরঙ্গার আড়াল থেকে ঝকঝক করছে সিন্ধুদের মুখ। গ্যালারির জনজোয়ারে ভাসলেন তাঁরা।
অলিম্পিক্সে রুপোর মেয়ের জয়ে আর্থিক পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছেন অন্ধ্র ও তেলঙ্গানা— দুই সরকার। তেলঙ্গানা সরকারের তরফে সিন্ধুকে পাঁচ কোটি টাকার আর্থিক পুরস্কার-সহ হায়দরাবাদে বসবাসের জন্য জমি দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। দুই রাজ্য সরকারই সিন্ধুকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পাশাপাশি, তাঁকে তিন কোটি টাকার দেওয়ার কথা জানিয়েছেন অন্ধ্র সরকার। ভারতীয় ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশনও সিন্ধুকে সম্মানিত করার কথা জানিয়েছে। তাদের তরফে এ সপ্তাহেই তাঁর হাতে একটি বিএমডব্লিউ গাড়ির চাবি তুলে দেবেন সিন্ধুর প্রিয় খেলোয়াড় সচিন তেন্ডুলকর।
সিন্ধু-জোয়ারের আবেগ দেখা গেল এ দিন আগরতলাতেও। ঘরের মেয়ে কোনও পদক না পেলেও রিওর মাটিতে দেশকে গর্বিত করেছেন। ত্রিপুরা সরকারের তরফ থেকে দীপা কর্মকারকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। জনতার আবেগে হায়দরাবাদের রাস্তা আর আগরতলার আশপাশ যেন এক হয়ে গেল এ দিন।
আরও পড়ুন
‘সিন্ধুর পিছনে সময় নষ্ট না করতে বলেছিল অনেকে, আমি জানতাম ও পারবে’