ফোরলানের পরামর্শে অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে প্রণয়

পরামর্শটা দিয়ে গিয়েছিলেন দিয়েগো ফোরলান। উরুগুয়ের বিশ্বকাপারের টোটকায় হঠাৎই অ্যাথলেটিক্সের ট্র্যাকে নেমে পড়লেন প্রণয় হালদার।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:০৪
Share:

স্পট জাম্পের ক্লাস চলছে প্রণয়ের। -নিজস্ব চিত্র

পরামর্শটা দিয়ে গিয়েছিলেন দিয়েগো ফোরলান। উরুগুয়ের বিশ্বকাপারের টোটকায় হঠাৎই অ্যাথলেটিক্সের ট্র্যাকে নেমে পড়লেন প্রণয় হালদার।

Advertisement

রবিবার সকালে হঠাৎই সোদপুরের এক অ্যাথলেটিক্স ট্রেনিং সেন্টারের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দৌড়োতে দেখা গেল মোহনবাগান মিডিওকে। যেখানে বাঁশি মুখে প্রশিক্ষকের ভূমিকায় সঞ্জয় সেন নন, বদলে রয়েছেন অ্যাথলেটিক্সে বাংলার একমাত্র দ্রোণাচার্য কোচ কুন্তল রায় এবং তাঁর পুত্র রুদ্রপ্রতিম রায়।

সোমবারই আই লিগের জন্য অনুশীলন শুরু হয়েছে বাগানের। তাঁর আগে কি নিজেকে ফিট রাখতে অ্যাথলেটিক্স কোচের কাছে এই ট্রেনিং? বাগানের অনুশীলন শুরু হয়ে গেলেই কি এই ট্রেনিং শেষ?

Advertisement

প্রশ্ন শুনে বারাকপুরের ছেলের হেঁয়ালি মেশানো উত্তর, ‘‘হ্যাঁ এবং না দু’টোই।’’

কী ব্যাপার? রহস্য ফাঁস করলেন প্রণয় নিজেই। তুলে আনলেন আইএসএলে মুম্বইয়ের হয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে তাঁর চোট পাওয়ার ঘটনার কথা। সোদপুরে রুদ্রপ্রতিমের পারফরম্যান্স সেন্টারে বসে প্রণয় বললেন, ‘‘হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়ার পর টিমের জিম সেশনে একদিন ফোরলানের সঙ্গে কথা বলছিলাম। তখন ওই বলে ছিল দৌড়ানোর এবং ট্যাকলের সময় আমার পায়ের মুভমেন্ট বা শরীরের উপরের অংশ ঠিক পজিসনে থাকছে না। তাই চোট পাচ্ছি বার বার। চোট-আঘাত থেকে বাঁচতে হলে অ্যাথলেটিক্স কোচের কাছে আলাদা ট্রেনিং কর। গ্যারেথ বেল-সহ ইউরোপের প্রায় সব ফুটবলারই এটা করে।’’ যা শুনে নতুন এক দিগন্তের সন্ধান পেয়ে যান প্রণয়।

এরপরেই বাগান মিডিও মুম্বই থেকেই সোদপুরে ফোন করেছিলেন স্ট্রেংথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ রুদ্রপ্রতিমের সঙ্গে। যিনি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের লেভেল ওয়ান কোর্স। কলকাতায় ফিরে গত সপ্তাহ থেকেই সপ্তাহে চার দিন করে শুরু হয়েছে প্রণয়ের ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের এই অনুশীলন। যা চলবে আরও এক সপ্তাহ। কিন্তু মোহনবাগানে সঞ্জয় সেনের কাছে প্র্যাকটিস। তার পর অফিস ছুঁয়ে এই ট্রেনিং করা সম্ভব? এবার উত্তরটা দেন রুদ্রপ্রতিম। বলে দেন, ‘‘সেটা যাতে পারে সে জন্যই তো এই ট্রেনিং। আগামী কয়েক মাসে তো ওঁকে আই লিগ, এএফসি কাপ ও ফেড কাপে খেলতে হবে। তার জন্যই এই কসরৎ।’’

প্রণয়কে গোটা মরসুমের জন্য তৈরি রাখতে সোদপুরের পারফরম্যান্স সেন্টারে চলছে ঘড়ি ধরে নানা আধুনিক ট্রেনিং। যার মধ্যে রয়েছে দৌড়, স্প্রিন্ট, স্পট জাম্প, হার্ডলসের ব্যবহার। লক্ষ্য একটাই বাগান মিডিওর উরুর পেশি এবং শরীরের উপরের অংশের ব্যালান্স ঠিক রাখা। তার জন্য ডেড লিফট, স্কোয়াট, ডাম্বেল হাতে স্টেপ আপ, টিআরএক্স ব্যান্ড, বোসু বলের মতো আধুনিক সরঞ্জাম নিয়ে অনুশীলন চলছে পারফরম্যান্স সেন্টারে। কখনও মাঠে নামিয়ে ‘রানিং এবিসি’-রও ট্রেনিং দিচ্ছেন কুন্তলবাবু ও রুদ্রপ্রতিম।

সত্যিই কি এতে কোনও উপকার হতে পারে? রুদ্রপ্রতিম বলছেন, ‘‘ফোরলান একটা দারুণ পরামর্শ দিয়ে গিয়েছে প্রণয়কে। আমাদের দেশে ফুটবলাররা এই ট্রেনিং করলে অনেকেই হাসে। কিন্তু এটা জরুরি।’’

প্রণয়ের নতুন অ্যাথলেটিক্স কোচের ব্যাখ্যা, দৌড়ানোর সময় প্রণয়ের পা অনেকটা পিছন থেকে আসত। তাই হ্যামস্ট্রিংয়ে চাপ পড়ত বেশি। এ ছাড়াও ওঁর হাত, কাঁধ ও শরীর সোজা থাকত না। এতে ওর গতি কমত। ফলে অনেক সময় বলের কাছে পৌঁছাতে দেরি হত। যার সুযোগ নিত বিপক্ষ ফরোয়ার্ড। এ ছাড়াও বাড়ত চোট-আঘাত। দ্রোণাচার্য কোচের ছেলে বলে দেন, ‘‘আমাদের ট্রেনিংয়ে এই ভুলগুলো এ বার বেরিয়ে এসেছে। সমস্যার সত্তর শতাংশ সমাধান হয়ে গিয়েছে। বাকিটাও হয়ে যাবে। আই লিগে চোটমুক্ত নতুন প্রণয়কেই পাবেন বাগান কোচ।’’ এ বছর সোদপুরে ট্রেনিং করে আইএসএলে সাফল্য পেয়েছেন দেবজিৎ মজুমদার, প্রবীর দাসরা।

দেখার এ বার আই লিগে প্রণয়ের কী হয়?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement