নায়ক: ১৭৬ রান। ব্যাটসম্যান স্টোকসের দিন। রয়টার্স
ক্রিকেটের অভিধানে যোগ হয়েছে নতুন শব্দ— ‘বায়ো বাবল এনভায়রনমেন্ট’। বুঝিয়ে বলতে গেলে, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে যে মাঠে ম্যাচ চলবে, সেই স্টেডিয়ামের ভিতরে এক বার ঢুকে গেলে আর বাইরে যাওয়া চলবে না। স্টেডিয়ামের ভিতরেই হোটেল। সেখানেই খাকবেন ক্রিকেটারেরা, ধারাভাষ্যকারের দল, কর্মরত প্রত্যেকে। বাইরে থেকেও কেউ আসতে পারবেন না ভিতরে।
ইংল্যান্ডের মিডিয়া ম্যানেজার ড্যানি রিউবেনের থেকে জানা গেল, ভিতরে আরও সব অদ্ভুত নিয়ম মেনে চলতে হচ্ছে দু’দলের ক্রিকেটারদের। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। স্টেডিয়ামেই অবস্থিত হোটেলে আছেন দু’দলের ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার, এক কথায় মাঠে আসা সকলে। মোট ৩০০ জন রয়েছেন সেই হোটেলে। ১৫০ জনকে দেওয়া হয়েছে ব্যক্তিগত রুম। বাকি ১৫০ জন থাকছেন ডর্মিটরি ও ডাবল স্যুটে। ক্রিকেটার, কোচ, ধারাভাষ্যকারদের ব্যক্তিগত রুম দেওয়া হয়েছে।
হোটেল জুড়ে বিভিন্ন চিহ্ন দিয়ে বোঝানো হয়েছে ক্রিকেটারেরা কোথায় যেতে পারবেন, কোথায় যেতে পারবেন না। দু’দলের জন্য আলাদা ডাইনিং রুমের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ডিনার টেবল প্রত্যেকের আলাদা। একটি টেবলে একজনই বসতে পারবেন। একসঙ্গে বসে ম্যাচ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে-করতে নৈশভোজ উপভোগ করার রীতি এখন অতীত। ব্রেকফাস্টের আগে প্রত্যেকের টেবলে দেওয়া হচ্ছে একটি করে ‘হেল্থ চার্ট’। সেখানে বিভিন্ন শারীরিক দুর্বলতার উল্লেখ করা আছে। ক্রিকেটারেরা যদি মনে করেন, তাঁর জ্বর-জ্বর লাগছে অথবা মাথা যন্ত্রণা করছে, সে ক্ষেত্রে সেই ‘হেল্থ চার্টে’ দাগ দিতে হবে। পাশেই থার্মাল চেক-আপ মেশিন। প্রত্যেককে নিজেদের তাপমাত্রা মেপে লিখে দিতে হবে।
ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার অথবা সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডে লাগানো রয়েছে ‘মাইক্রো চিপ’। তাতে জিপিএস বসানো থাকছে। ট্রেনিং ও ম্যাচ চলাকালীন অথবা রুমের মধ্যে থাকাকালীন সেই কার্ড খুলে রাখা যাবে। রুমের বাইরে পা দিলেই গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে কার্ড।
ড্যানি বলছিলেন, ‘‘ধরুন কোনও ক্রিকেটারের করোনা পরীক্ষার ফল পজিটিভ এল। সে ক্ষেত্রে জিপিএস ট্র্যাক করে দেখা যাবে, সেই ক্রিকেটারের সংস্পর্শে কারা এসেছিল। সেই অনুযায়ী তাদেরও পরীক্ষা করা হবে।’’
হোটেলের লিফ্টে কনুই দিয়ে বোতাম টিপতে হবে। আঙুল ব্যবহার করলে সেন্সরই কাজ করবে না। এমনকি লিফ্টের ভিতরে দু’জনে যদি একে অন্যের মুখোমুখি দাঁড়ায়, সে ক্ষেত্রেও অ্যালার্ম বেজে উঠবে। কারও কাছে রুমের চাবি নেই। দরজায় নেই হ্যান্ডল। হোটেলের নিজস্ব একটি অ্যাপ আছে। তার মাধ্যমেই দরজা খোলা ও বন্ধ করা যায়। ‘মাস্ক’ না পরে রুমের বাইরে পর্যন্ত যাওয়া নিষেধ। ক্রিকেটারেরা একে অন্যের রুমে যেতে পারবেন? ড্যানি বললেন, ‘‘একে অন্যের রুমে যেতে পারবে, কিন্তু তিন জনের বেশি এক জায়গায় থাকা যাবে না। ধারাভাষ্যকার অথবা অন্যান্য স্টাফদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের যেন কোনও যোগাযোগ না থাকে, তার জন্যও কড়া নিরাপত্তা জারি করা হয়েছে।’’
এত কিছু নিয়মের পরোয়া না করে জোফ্রা আর্চার নিজের বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে চলে গেলেন। আপাতত হোটেলেই একটি রুমে রয়েছেন জোফ্রা। জানা গিয়েছে, আর্চারের করোনা পরীক্ষা হওয়ার কথা শুক্রবার। নিয়ম ভাঙার জন্য টেস্ট থেকে বাদ পড়েছেন আর্চার। তাঁর অনুপস্থিতিতে নায়ক অবশ্য বেন স্টোকস। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে দ্বিতীয় টেস্টে উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়ার পরে ১৭৬ রানের ইনিংস উপহার দিলেন ইংল্যান্ডের বর্তমান তারকা। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই ভাল শুরু করেছিলেন স্টোকস। কিন্তু বড় ইনিংসে পরিণত করতে পারেননি। শুক্রবার সেই সুযোগ নষ্ট করেননি। ওপেনার ডমিনিক সিবলিও টেস্ট জীবনের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেলেন শুক্রবার। ১২০ রান করেন তিনি। ৯ উইকেট হারিয়ে ৪৬৯ রান করে ডিক্লেয়ার করে ইংল্যান্ড। পাঁচ উইকেট রস্টন চেজের। দিনের শেষে এক উইকেট হারিয়ে ৩২ রান ওয়েস্ট ইন্ডিজের।