আকর্ষণ: লম্বা চুলের ধোনি নজর টেনেছিল প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফেরও। ফাইল চিত্র
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে আমি বোর্ডের পরীক্ষা দিয়ে আম্পায়ার হই। নব্বই দশকের শেষের দিকে ওড়িশা, আগরতলা, বিহারে ম্যাচ করে বেড়াচ্ছি। সেখানেই প্রথম একটা লম্বা চুলের ছেলেকে দেখলাম, খুব জোরে বল মারছে। আম্পায়ারিং করতে করতেই জিজ্ঞেস করায় জানতে পারলাম, ছেলেটার নাম। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
এর পর অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টের ফাইনালে আমি আর যশপাল শর্মা আম্পায়ার। পঞ্জাব বনাম বিহার ম্যাচ। প্রথমে ব্যাট করে বিহার সাড়ে তিনশোর উপরে রান তুলল। ধোনি নামের সেই ছেলেটা ষাটের উপরে করল। কিন্তু কেউ ধোনি বা বিহারকে মনে রাখেনি। তার কারণ সেই ম্যাচে অন্য একটা ছেলে একাই সাড়ে তিনশোর উপরে করে দিয়ে গেল। তার নাম? যুবরাজ সিংহ।
একই সঙ্গে ভারতীয় ক্রিকেটের দুই দুর্দান্ত প্রতিভার উত্থান আমি কাছ থেকে দেখেছি। কিন্তু ধোনির ক্ষেত্রে অনেক বেশি করে আমি জড়িয়ে কারণ ওর ভারতীয় দলে ঢোকার সময় আমি আম্পায়ার থেকে হয়ে গিয়েছি জাতীয় নির্বাচক। বিহার তখন প্লেটে খেলে। সেখানকার একটা ক্রিকেটারকে দেখার খুব একটা আগ্রহ ছিল না বাকি নির্বাচকদের। আমি বলেছিলাম, প্লেটের দল বলে কি সেখানে প্রতিভা থাকতে পারে না? ঠিক হল, দুই নির্বাচক আসবেন ধোনিকে দেখতে। কিন্তু এমনই কপাল যে, দু’জনে আসতে পারল না।
শেষ পর্যন্ত দলীপ ট্রফি ফাইনালে নির্বাচকেরা আসবে বলে ঠিক হল। কিন্তু সমস্যা হল, ধোনি তখন পূর্বাঞ্চলের হয়ে উইকেটকিপিংই করছে না। তখন পূর্বাঞ্চলের কিপার দীপ দাশগুপ্ত। এর আগে কয়েকটি সভায় এ নিয়ে সহ-নির্বাচকেরা প্রশ্ন তুলেছে। বলেছে, ও তো তোমাদের পূর্বাঞ্চল দলেই কিপিং করছে না। তাকে ভারতীয় দলে নেওয়ার কথা কী বলছ? যাক, ফাইনালে ধোনিকে খেলানোর ব্যবস্থা করা গেল। দারুণ কিপিং বা দুর্ধর্ষ ব্যাটিং না করলেও নির্বাচকেরা বুঝল, এ ছেলের মধ্যে মশলা রয়েছে। মোটামুটি তাদের খাতায় ভাল নম্বরই তোলা থাকল ধোনির নামের পাশে।
আরও পড়ুন: চিরকালের অধিনায়ক তুমি, বার্তা কোহালির
আরও পড়ুন: করোনা ভেঙে দিল ‘জুটি’, চলে গেলেন চৌহান
এর পরে কিনিয়া সফরে ভারতীয় ‘এ’ দলের সঙ্গে পাঠানো হল ধোনিকে। সেই সফরে সেঞ্চুরি করে নিজের প্রতিভা বুঝিয়ে দিল। সেই সময় টেস্টে কিপার ছিল পার্থিব। ওয়ান ডে-তে পার্টটাইম কিপার রাহুল দ্রাবিড়। তবে রাহুলকে খুব আগ্রহী মনে হত না কিপিংয়ের ব্যাপারে। পার্থিবেরও নানা ত্রুটি ধরা পড়তে শুরু করেছে। ২০০৩ বিশ্বকাপের পরেই বাংলাদেশে একটি সফর ছিল। সেখানে সচিন, রাহুলের মতো অনেক তারকাই যায়নি। সৌরভ গিয়েছিল এবং ওখানেই প্রথম ভারতীয় দলে জায়গা পেল ধোনি। ওই সফরে তেমন কিছু করতে পারেনি কিন্তু দেশের মাঠে পাকিস্তান সিরিজে বুঝিয়ে দিল, ক্রিকেট দুনিয়ায় শাসন করতেই এসেছে। বিশাখাপত্তনমে সৌরভ ওকে তিন নম্বরে পাঠাল। ১২৩ বলে ১৪৮ করে আবির্ভাব ঘোষণা করে দিল মাহি। নেটে যে ভাবে ব্যাট করত, মাহির সে রকমই ভঙ্গি থাকত ম্যাচে। এটা এক জন বড় ক্রিকেটারের লক্ষণ।
২০০৫-এর একটা ঘটনা মনে পড়ছে। ভারতীয় দলের কোচ তখন গ্রেগ চ্যাপেল। আমাদের মনে হয়েছিল, কোচ তো শুধু জাতীয় দলে খেলা ১৫ জনকেই দেখছে। দ্বিতীয় সারিতে কারা আছে, তাদেরও দেখুক। দেশের প্রতিশ্রুতিমান ক্রিকেটারদের নিয়ে একটা শিবিরের ব্যবস্থা হল। প্রথম দিনের পরে গ্রেগকে জিজ্ঞেস করলাম, কাদের ভাল লাগল? গ্রেগ দু’টো নাম বলল। সুরেশ রায়না আর মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। শুধু তা-ই নয়, গ্রেগ সে দিনই বলে দিয়েছিল, ‘‘ধোনি ছেলেটা দারুণ। পরিষ্কার মাথা। ভবিষ্যতের ভারত অধিনায়ক।’’
আজও জানি না, শিবিরে গ্রেগের সঙ্গে ধোনির কী কথা হয়েছিল। তখন কে-ই বা ভেবেছিল, গ্রেগ ঠিক বলছে!