রঞ্জি ফাইনালে কি অভিমন্যু ঈশ্বরন, অভিষেক রামন ভরসা দেবেন ওপেনিংয়ে?
ইডেনে কর্নাটকের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে বাংলার প্রথম উইকেট পড়েছে বোর্ডে কোনও রান ওঠার আগেই। দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম উইকেট পড়ছে দলীয় এক রানে। সেমিফাইনালে দুই ইনিংস মিলিয়ে ওপেনার অভিষেক রামনের সংগ্রহ ১! অভিমন্যু ঈশ্বরন করেছেন ২৬। কটকে ওড়িশার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম ইনিংসেও বাংলার প্রথম উইকেট পড়েছে মাত্র ১৭ রানে। সেখানে দুই ইনিংস মিলিয়ে ঈশ্বরন করেছেন ৩৭। সঙ্গী ওপেনার কৌশিক ঘোষ প্রথম ইনিংসে ৯, দ্বিতীয় ইনিংসে ৪১। কর্নাটকের বিরুদ্ধে কৌশিককে খেলানো হয়নি। কটকে তিন নম্বরে নামা রামন সঙ্গী হন ঈশ্বরনের। তবে ত্রয়ীর যে দু’জনই ওপেন করুন, একেবারেই নির্ভরযোগ্য দেখাচ্ছে না ওপেনিং জুটিকে। পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, ওপেনারদের পারফরম্যান্স রঞ্জি ফাইনালের আগে হয়ে উঠছে মাথাব্যথার কারণ।
কোথায় সমস্যা হচ্ছে অভিমন্যু-অভিষেকদের? সমাধানের উপায়ই বা কী? ওপেনিংয়ে ভরসা ফেরাতে কী করা উচিত দু’জনের? আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে মুখ খুললেন বাংলার রঞ্জিজয়ী দলের দুই ওপেনার, প্রণব রায় ও ইন্দভূষণ রায়। উত্তরসূরিদের কী পরামর্শ দিলেন দুই পূর্বসূরি, জেনে নেওয়া যাক।
ওপেনারদের রান না-পাওয়ার কারণ কী?
ইন্দুভূষণ: সমস্যা হল, ওপেনাররা তাড়াতাড়ি শট খেলে ফেলছে। আমাদের সময়, আমরা উইকেটে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতাম। টিকে থাকতে চাইতাম। এখন এরা দেখছি বড্ড দ্রুত স্ট্রোক নিয়ে ফেলছে। শটে নিয়ন্ত্রণ আর বল বাছাইয়ে জোর দিতে হবে। একটু বেশি ঝুঁকি নিচ্ছে। অ্যাডভেঞ্চারাস হয়ে উঠছে। তার ফলেই ভুগছে। পর পর ফেল করে যাচ্ছে । চাপেও পড়ে যাচ্ছে। দেখুন, রঞ্জি ফাইনালে টপঅর্ডারকে রান পেতেই হবে। ওপেনারদের উইকেটে থাকতেই হবে।
প্রণব: ব্যাটসম্যান হিসেবে ঈশ্বরন ও রামন, দু’জনেই খুব ভাল। রান না পেলে মনোবল দুর্বল হয়ে যায়। ক্রিকেটটা মাইন্ড গেম হয়ে যায়। তবে তার মানে এটা নয় যে ওরা বাজে ব্যাটসম্যান। এদের গুড লেংথ স্পট অনেক বড় দেখাচ্ছে। এদের দেখে মনে হচ্ছে, সব বলই যেন খুব ভাল হচ্ছে, প্রতিটাই যেন গুড লেংথ স্পটে পড়ছে। আবার অনুষ্টুপ মজুমদারকে দেখে মনে হচ্ছে, অধিকাংশ বলই সাদামাটা হচ্ছে। যা মারা যায়। অনুষ্টুপের গুড লেংথ স্পট অনেক ছোট। শাহবাজেরও তাই। এরা খুব ছোট একটা জায়গাতেই বল পড়লে শুধু ডিফেন্স করছে।
ইন্দুভূষণ রায় ও প্রণব রায়। রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন দলের দুই ওপেনার।
রানে ফিরতে ওপেনারদের কী করা উচিত?
ইন্দুভূষণ: উইকেটে টিকে থাকায় জোর দিতে হবে। প্রথমেই একগাদা শট খেলা ঠিক হবে না। নিজের শটগুলোকে শুরুতে ছেঁটে ফেলো। পাঁচ দিনের খেলা তো। তাড়াহুড়োর দরকার কী। আমরা ভাল ডেলিভারিতে পরাস্ত হলেও উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসতাম না। সেই মানসিকতা আনতে হবে।
প্রণব: প্রথমেই গুড লেংথ স্পটটা ছোট করে ফেলতে হবে। আর ইতিবাচক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, ক্রিকেটে রান করাটাই আসল। ব্যর্থতার ভয় কাটিয়ে উঠতে হবে। যদি আবার ব্যর্থ হই, তখন তো সমালোচনা হবে, এটা ভাবলে পুরোপুরি মনোনিবেশ করা যায় না। ক্রিকেটে ‘কী হবে’র কোনও জায়গা নেই। বলের মেরিট অনুসারে খেলার কথাই শুধু মাথায় রাখতে হবে। খোলা মনে নামতে হবে। প্রেশার নিয়ে তো রান আসছে না! ফাইনালের আগে প্র্যাকটিসে তাই গুড লেংথ স্পট ছোট করতে হবে। আর আক্রমণাত্মক থাকতে হবে। এটা বড় ব্যাপার নয়। কিন্তু নেগেটিভ দিকটা ভাবলে মুশকিল।
অভিমন্যু ঈশ্বরনে ফিরছি। নয় ম্যাচে ১৬ ইনিংসে ২৪৯ রান। গড় মাত্র ১৭.৭৮। নেতৃত্বের চাপ কি প্রভাব ফেলছে খেলায়?
ইন্দুভূষণ: গত বছর ও ন’শো রান করেছে। এত রান করা ব্যাটসম্যান হঠাৎ ফর্ম হারিয়ে ফেলবে, এটা হতে পারে না। এ বছর একেবারে রান করেনি, তা কিন্তু নয়। জয়পুরে রাজস্থানের বিরুদ্ধে যে ম্যাচ জিতলাম, তাতে ৬২ করেছিল। তবে হ্যাঁ, নেতৃত্বের একটু চাপ তো রয়েইছে। এটা হতে পারে যে, নেতৃত্ব ব্যাটিংকে সমস্যায় ফেলছে। আমি ‘হতে পারে’ বলছি। ‘হয়েইছে’ বলছি না কিন্তু। কারণ, এর মধ্যেই তো দলকে ফাইনালে তুলে দিয়েছে। তাই নেতৃত্বকে ‘চাপ’ বলাটাও ঠিক লাগছে না। তবে ছেলেটা যে কোনও দিন বড় রান পাবে। ও পারবে না, বলা যায় না কোনও ভাবেই। হয়তো ফাইনালেই বড় সেঞ্চুরি করে দিল! সেই ক্ষমতা কিন্তু ওর রয়েছে।
আরও পড়ুন: যেন প্রতিবিম্ব! কিউয়িদের দেশে টেস্ট সিরিজ হারে সৌরভ ও বিরাটের ভারতের মিলগুলো চমকে দেবে
আরও পড়ুন: টেল এন্ডারদের সঙ্গে ব্যাট করাও একটা শিল্প, বলছেন ম্যাচের সেরা অনুষ্টুপ
প্রণব: ওর টেকনিকে সমস্যা নেই, সমস্যা হল মানসিকতায়। মানসিক সমস্যা দু’ধরনের হয়। একটা চোকড হয়ে যাওয়া, অন্যটা প্যানিকড হয়ে যাওয়া। আমার মনে হচ্ছে, ঈশ্বরন ব্যাট হাতে গিয়ে প্যানিকে ভুগছে। যখন ওর পরিকল্পনা অনুসারে খেলা এগোচ্ছে না, তখন মনে হচ্ছে খারাপ বলটাও খুব ভাল ডেলিভারি। এটা অভিমন্যু ঈশ্বরন বা প্রণব রায়ের ক্ষেত্রেই শুধু নয়, সকলের জন্যই প্রযোজ্য। এই মানসিক অবস্থা কাটিয়ে উঠতে ইতিবাচক থাকতে হবে। ভাবতে হবে যে, আমি দুর্দান্ত ব্যাটসম্যান। আর আমার জন্য বড় রান অপেক্ষা করছে। মারার বলকে মারতে হবে। পরে মারব, ভাবলে চলবে না। যখনই বাজে বল আসবে, সেটাকে মারতে হবে। একবার ইতিবাচক মানসিকতা এসে গেলে বল ভাল দেখা যাবে, পায়ের নড়াচড়া আরও ভাল হবে, বল ভাল ছাড়া যাবে। এটা আসলে ব্যর্থ হওয়ার আতঙ্ক। এর ফলে, শরীর একশো শতাংশ রিঅ্যাক্ট করছে না। রান করছে না বলে এটা অভিমন্যুর মধ্যে কিছুটা এসে গিয়েছে। আবার বলছি, পজিটিভ মাইন্ডসেটই এর সমাধান। বল মারতে তাই যেন দ্বিধায় না ভোগে। নিজের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে যা, সেটাতেই মন দিক। অনুশীলন করুক, ইতিবাচক থাকুক। রান না পেলে কী হবে, সেটা ভাবার দরকার নেই একদমই। গ্যাপে দুটো-চারটে বল মারলেই ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে। অনুষ্টুপ যখন ব্যাট করছিল তখন মনে হচ্ছিল এর থেকে ভাল উইকেট হয় না। অন্যদের বেলায় উল্টোটা মনে হচ্ছিল। আমি কী করতে পারি, সেই ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা অনুষ্টুপের মতো আনতে হবে ঈশ্বরনকেও। যেমন বল আসবে, তেমনই খেলব, এটা ভাবুক। সেই মতো ঘাম ঝরাক এই ক’দিন।
১০ ম্যাচে ১৭ ইনিংসে ৪০৬ রান। গড় ২৫.৩৭। রঞ্জির শুরুতেই কেরল ও অন্ধ্রর বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি। তার পর থেকে বড় রান আসছে না। অভিষেক রামনের সমস্যা কোথায় হচ্ছে?
প্রণব: ওরও একই সমস্যা। ও হয়তো অহেতুক বেশি চিন্তা করছে। বেশি ভাবছে। বর্তমানে থাকা দরকার। এখানে হান্ড্রেড করলে সামনে কী সুযোগ পাব, সেগুলো ভাবার দরকার নেই। দলকে কী দিতে পারে, সেটাই শুধু মাথায় রাখুক। বোলারকে মাথায় চড়তে দেওয়া যাবে না। ক্রিকেটের ফর্মুলা খুব সিম্পল। অহেতুক জটিল করে লাভ নেই।
সেমিফাইনালে ঈশ্বরন ও রামন ওপেন করেছে। কোয়ার্টার ফাইনালে কৌশিক ঘোষ ওপেন করেছে। তিনে এসেছে রামন। আবার মাঝখানে ঈশ্বরন নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের সফরে থাকায় খেলতে পারেননি। ওপেনিংয়ে বার বার রদবদল কি থিতু হতে দিচ্ছে না?
ইন্দুভূষণ: এটা টিম ম্যানেজমেন্টের চাহিদা অনুসারে হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুসারে, কাদের পাওয়া যাচ্ছে, সেই অনুসারে বদলগুলো হয়েছে। কে থাকছে না, সেটাও দেখতে হচ্ছে। তবে অভিমন্যু, অভিষেক আর কৌশিক, তিন জনই ওপেনার। ফলে, অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আর ফাইনালে মনে হয় না ওপেনিংয়ে কোনও বদল ঘটবে। আমি অন্তত তা দেখতে চাই না। রামন দুটো সেঞ্চুরি করেছে এই মরসুমে। সেই কৃতিত্ব কেড়ে নেওয়া যায় না। আর বাকিরাও তো ব্যর্থ হয়েছে। তার উপর কটকে ওড়িশার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে ও খুব ভাল ব্যাট করেছে। তাই ঈশ্বরনের সঙ্গে রামনেরই ওপেন করা উচিত।
ঋদ্ধিমান সাহা ফিরছেন প্রথম এগারোয়। কে বাদ যেতে পারেন?
ইন্দুভূষণ: এটা দলই ঠিক করবে। আমার মনে হয় ওপেনিং কম্বিনেশন ডিস্টার্ব করা উচিত নয়। নিজে ওপেনার ছিলাম বলেই এটা বেশি করে অনুভব করছি। ঋদ্ধি এলে কে বসবে, এটা কঠিন প্রশ্ন। সুদীপ চট্টোপাধ্যায় আবার বিগ ম্যাচ প্লেয়ার। ওকে সরানো উচিত হবে না। তাই পড়ে থাকছে রামন আর শ্রীবৎসই। শ্রীবৎস গোস্বামী তো রানের মধ্যেই রয়েছে। ও কি শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলবে? সম্ভবত এদের মধ্যেই কেউ বাদ পড়বে। তবে ওপেনিংয়ে হাত দেওয়া ঠিক হবে না, আবার বলছি। এখানে মনোজ তিওয়ারির চোটের দিকটাও দেখতে হবে। মনোজ নির্ঘাত খেলে দেবে, যে অবস্থাতেই থাক না কেন। তবু যদি না পারে, তা হলে অবশ্য এত জল্পনারই দরকার পড়বে না।
১৯৮৯-৯০ মরসুমে কেমন চাপ ছিল আপনাদের উপর?
ইন্দুভূষণ: যে বছর চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম, তার আগের বছরও ফাইনালে উঠেছিলাম। ফিরোজ শাহ কোটলায় ফাইনালে সে বার দিল্লির কাছে উড়ে গিয়েছিলাম। পরের বছর ফের উঠলাম ফাইনালে। আমাদের সিনিয়ররা সবাই বড় প্লেয়ার। অরুণলাল, অশোক মলহোত্র, সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজা ভেঙ্কট। তাই আমরা, জুনিয়ররা চাপ অনুভবই করিনি। সে বার সিনিয়ররা গাইড করতে দারুণ ভাবে। খেলার মাঠে সবাই এককাট্টা থাকত। মাঠের বাইরে সমস্যা সব দলেই থাকে। আমি গত নয় বছর ধরে নির্বাচক ছিলাম। এই দলটার সম্পর্কেও কত কথা জানি। সেটা আসল নয়। মাঠে নেমে উজাড় করে দিচ্ছে কিনা, সেটাই দেখতে হবে।
প্রণব: আমি গোড়ায় দলের সঙ্গে ছিলাম না। ক্লাব ক্রিকেট খেলছিলাম। কামব্যাক করার জন্য খাটছিলাম, রান করছিলাম। মনের মধ্যে একটা যন্ত্রণা ছিল যে, বাংলা দলে থাকা উচিত আমারও। অবশেষে কোয়ার্টার ফাইনালে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ডাক পেলাম দলে। আমি তখন রীতিমতো আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। পরিশ্রম বাড়িয়েও দিয়েছিলাম। ডাক পাওয়ার পর মনে হল যে নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ পেয়ে গিয়েছি। এ বার যা করার করে দেখাতে হবে। বাকিটা তো ইতিহাস।
অরুণলালের অবদান কী ভাবে দেখছেন?
ইন্দুভূষণ: একজোট হয়ে খেলার ব্যাপারটা অরুণলাল এনে দিয়েছে। এটা আমাদের সময়েও অরুণলালের মধ্যে ছিল। ওকে আমরা গডফাদার হিসেবে ভাবতাম। অরুণলাল, অশোক মলহোত্র, সম্বরণ— এদের সেই চোখেই দেখতাম। জানতাম মাথার উপর এরা রয়েছে। এ বারও অরুণলাল বাংলা দলকে মানসিক ভাবে তরতাজা করে তুলেছে। কৃতিত্ব দিতেই হবে।
সে বারের রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন বাংলা দল। আর এ বারের ফাইনালে ওঠা দল। পাশাপাশি রাখলে কোনও মিল খুঁজে পাচ্ছেন?
ইন্দুভূষণ: সে বার আমাদের দল একটা পরিবারের মতো ছিল। মাঠের বাইরে গল্প-আড্ডা হত। এখন অনেক পেশাদারিত্ব। না হলে কয়েক বছরের মধ্যে চার বার ফাইনাল খেলতে পারতাম না। এই দলের যা টিম স্পিরিট, তা দুর্দান্ত। চারটে সরাসরি জয় এসেছে। এই দলে নিশ্চয়ই বাড়তি কিছু রয়েছে। শাহবাজের কথা আলাদা করে বলতেই হবে। অনুষ্টুপের ধারাবাহিকতা, মনোজের ট্রিপল সেঞ্চুরি রয়েছে। আমাদের যা দল, তাতে কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হবেই এরা।
প্রণব: সেমিফাইনালে হায়দরাবাদকে হারানোর পর বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলাম যে রঞ্জি ট্রফি জেতার এটাই সেরা সুযোগ। প্রথমে কেউ আউট হয়ে গেলেও পরের জন রান করবে, এমন ভরসা টের পাচ্ছিলাম সবার মধ্যে। কেউ ব্যর্থ হলেও আমাদের চারশো-পাঁচশো তোলার ক্ষমতা রয়েছে, এমন নির্ভরতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমাদের বোলিং আক্রমণও খুব ভাল ছিল। দত্তাত্রেয়, রাজীব শেঠ ছিল জোরে বোলিংয়ে। স্পিনে বাপ্পা (শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়), ডেভিড (উৎপল চট্টোপাধ্যায়) ছিল। রীতিমতো ভারসাম্য ছিল বোলিং বিভাগে। ফিল্ডিং নিয়েও প্রশ্ন ছিল না। সবাই ফিট। বিশ্বাস করতাম যে, সামনে দেশের যে দলই আসুক না কেন, বম্বে হোক, দিল্লি হোক, আমরা জিতবই। কেউ আমাদের হারাতে পারবে না। এই আত্মবিশ্বাস দারুণ ভাবে ঢুকে পড়েছিল সবার মধ্যে। আমার মনে হয়, ওটাই তফাত গড়ে দিয়েছে। ক্রিকেটে একটা দল হয়ে উঠতে হয়। সেটা এই দলের মধ্যেও রয়েছে। ধীরে ধীরে তা বেড়েছে। ফাইনালে কী হবে, তা জানি না। তবে এই বন্ডিং আগামী পাঁচ বছর বাংলাকে টানবে।
সে বার তো ফাইনালের আগে মনোজ প্রভাকররা অনেক কথাবার্তাও বলেছিলেন।
ইন্দুভূষণ: তখন তো ম্যাচ রেফারির কড়াকড়ি সে ভাবে ছিল না। ইডেনে ফাইনালের আগে মনোজরা রীতিমতো গালাগাল করছিল। একটা বলও ফেস করিনি, তার আগেই শুরু করে দিল ওরা। এগুলো সামলানো খুব সহজ নয়। এটা বিরাট মানসিক চাপ। তবে এখন বাংলা দল মানসিক ভাবে শক্তপোক্ত। চাপে বা কথায় ভেঙে পড়ার প্রশ্নই নেই। বরং বার বার ঘুরে দাঁড়িয়েছে কঠিন পরিস্থিতি থেকে।
প্রণব: আমি তো আগেও বলছি, ফাইনালে বিপক্ষে কতজন ইন্ডিয়া ক্রিকেটার রয়েছে, তা মাথায় রাখিনি। ওরা কে কী বলছে, সেটাও খেয়াল করিনি। সকালে দত্তাত্রেয়, রাজীব এমন বল করেছিল দিল্লির টপক্লাস সব প্লেয়াররা স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছিল। এখনও মনে আছে, দ্বিতীয় স্লিপ থেকে আমি এত চেঁচিয়েছিলাম বোলারদের উৎসাহ দিতে গিয়ে যে লাঞ্চের পর গলা চোকড হয়ে গিয়েছিল। আওয়াজই বেরচ্ছিল না তার পর। লাঞ্চের পর একদম চুপ করে গিয়েছিলাম। এতটাই এনার্জি লেভেল ছিল। রঞ্জি জেতার ক্ষমতা রয়েছে, এই বিশ্বাস নিয়েই খেলেছিলাম সকলে। এ বার তো তিনজন ইন্ডিয়া প্লেয়ার নিয়েও কর্নাটক হেরে গেল সেমিফাইনালে। ওরা আসলে বাংলার কাছে মানসিকতাতেই হেরে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: এই দলের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মশলা রয়েছে, বলছেন সম্বরণ
আরও পড়ুন: আমার হাতে জাদুদণ্ড নেই, দেশের সেরা একটা দল পেয়েছি, বলছেন অরুণ