চমক হতে পারেন শঙ্কর, পরীক্ষা ঋষভের, চিন্তায় রাখলেন রায়ডু

আচমকাই রান হারিয়ে যাওয়া দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং শিখর ধওয়নকে নিয়ে দুশ্চিন্তা কী করে মিটবে?

Advertisement

সুমিত ঘোষ

রাঁচী শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০৪:২৪
Share:

সেঞ্চুরি করেও দলকে জেতাতে পারলেন না কোহালি।—ছবি পিটিআই।

অম্বাতি রায়ডুর কি শেষ মুহূর্তে এসে বিশ্বকাপের বিমান থেকে পা হড়কে যাবে?

Advertisement

ঋষভ পন্থ কি ইংল্যান্ড যাত্রার টিকিট পাবেন?

আচমকাই রান হারিয়ে যাওয়া দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং শিখর ধওয়নকে নিয়ে দুশ্চিন্তা কী করে মিটবে?

Advertisement

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসেবে কে যাবেন?

চতুর্থ পেসার নিয়ে যাওয়া হবে না কি দ্বিতীয় অলরাউন্ডার?

প্রতি নিয়তই যেন কোয়েশ্চেন পেপার পাল্টে যাচ্ছে কোহালিদের সামনে। তার মধ্যেই খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে উত্তরের। বিশ্বকাপের দল নির্বাচন সংক্রান্ত যে ক’টি ধাঁধা রয়েছে টিম ইন্ডিয়ার সামনে, তার সম্ভাব্য সমাধান কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোকপাতের চেষ্টা হল—

রায়ডুর খারাপ ফর্ম

যেন বহু দিন ধরে গ্যারাজে পড়ে থাকা পুরনো গাড়ি। ধাক্কা দিয়ে, ঠেলেঠুলে চালাতে হচ্ছে। আর তিনি ঘড়ঘড় শব্দ তুলে একটু এগিয়েই আবার দাঁড়িয়ে পড়ছেন। ভারত থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, নিউজ়িল্যান্ড নানা দেশের হাওয়া খেয়ে বেড়ালেন হায়দরাবাদের ব্যাটসম্যান। কিন্তু এখনও জায়গা পাকা করতে পারলেন না। একটা ম্যাচে রান করেন তো পরের তিন-চারটেতে অন্ধকার। আত্মবিশ্বাসের ছিটেফোঁটা নেই। টেকনিক্যালিও একেবারেই নিখুঁত নন। ক্রমশ একটা ধারণা তৈরি হচ্ছে তাঁকে নিয়ে যে, দলের জন্য নয় নিজের জায়গা বাঁচানোর জন্য খেলছেন। এই মনোভাব নিয়ে অতীতের ভারতীয় দলে পার পাওয়া যেত। কোহালি প্রজন্মে টিমে থাকা কঠিন।

ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন

তেমনই কোহালির এই দলের কাছে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফিটনেস। রায়ডু সেখানেও ফেলটু মেরে বসে আছেন। এক বার ইয়ো ইয়ো টেস্টে ব্যর্থ হয়েছেন। ফিল্ডিংয়ে কোথায় তাঁকে লুকনো হবে, তা ভাবতে হয়। ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচ নেওয়ার ছবি কেউ কখনও দেখেনি। তেত্রিশ বছর বয়সে তিনি হঠাৎ কোথা থেকে ‘বিস্ময় মধ্যবয়স্ক’ হিসেবে উদয় হলেন, সেটাই রহস্য!

বিকল্প হতে পারেন কে

রাঁচীর শুক্রবারের ম্যাচ ধরে চলতি বছরে রায়ডু দশ ম্যাচে করেছেন মোট ২৪৭ রান। সর্বোচ্চ ৯০। দশ ইনিংসে মাত্র একটাই হাফ সেঞ্চুরি। শুক্রবারের ম্যাচে ২ করার পরে বিশ্বকাপের টিকিট ভীষণ ভাবেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। মোহালি এবং দিল্লিতে বাকি দুই ম্যাচে দেখা হবে ঋষভ পন্থ এবং কে এল রাহুলকে। সে রকম হলে এঁদের দু’জনের কেউ বিকল্প হতেই পারেন। শোনা যায়, রায়ডুর বাড়িতে না কি দারুণ হায়দরাবাদি বিরিয়ানি রান্না হয়। এ রকম ফর্ম নিয়ে সেই উত্তম বিরিয়ানি খাইয়েও বিশ্বকাপের দলে জায়গা করা কঠিন হবে।

চাঁদের পাহাড়ে শঙ্কর

সত্যিই সেই অবিশ্বাস্য অভিযানের কাহিনি মনে পড়বে বিজয় শঙ্করের যাত্রা দেখে। শ্রীলঙ্কায় নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে মন্থর ব্যাটিং করায় খলনায়ক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কী ভাগ্যিস, দীনেশ কার্তিক ম্যাচটা জিতিয়ে দিয়েছিলেন ছক্কার ঝড় তুলে। না হলে ‘ম্যাচ কা মুজরিম’ হয়েই থাকতে হত শঙ্করকে। কিন্তু ব্যর্থতার সেই রাত তাঁকে তলিয়ে দিতে পারেনি। বরং আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে এসেছেন। হার্দিক পাণ্ড্যর সঙ্গে দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে তাঁকে তৈরি করার কৃতিত্ব পাওয়া উচিত হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর। চাপের মুখে শঙ্করের ব্যাটিং দেখে সকলেই প্রভাবিত। স্টাইল ভাই হার্দিকদের মতো বেপরোয়া গাড়ি চালান না। বরং খেলার সঙ্গে আচরণেও খুব শান্ত, সংযত ভাব। শুধু তাঁর বোলিংয়ে উন্নতি ঘটাতে হবে। সেই প্রক্রিয়া এখন চলছে বোলিং কোচ বি. অরুণের অধীনে। নাগপুরে শেষ ওভার বল করতে এসে ম্যাচ জেতানো দেখে আশাবাদী অনেকেই।

শঙ্করের সম্ভাবনা

বিশ্বকাপের উড়ানে চমক হতে পারেন তামিলনাড়ুর অলরাউন্ডার। ভারতীয় দল পরিচালন সমিতি এবং জাতীয় নির্বাচকেরা ভাবছেন, চতুর্থ পেসার না নিয়ে গিয়ে বাড়তি অলরাউন্ডার নিয়ে যাবেন। তাতে সম্ভাবনা আরও বেড়ে গিয়েছে শঙ্করের। ইংল্যান্ডে কপিলের সেই বিশ্বকাপজয়ী দলের রজার বিনি, মদন লালদের মতো তাঁর মধ্যম গতির বোলিং কাজে লাগতে পারে। শুধু বিশ্বকাপ বলে নয়, বিজয় শঙ্করের মধ্যে টেস্ট অলরাউন্ডারের মশলাও দেখতে পাচ্ছেন অনেকে।

সম্ভাবনা বাড়ছে রাহুলের

শোনা যাচ্ছে, কর্ণ জোহরের শো-তে গিয়ে এমন বিপদে পড়েছিলেন যে, কফির নিমন্ত্রণ পেলেই তৎক্ষণাৎ বাউন্ডারিতে পাঠানোর মতো বিদায় করে দিচ্ছেন কে এল রাহুল। বিশ্বকাপের উড়ানে বোর্ডিং পাস পাওয়ার সম্ভাবনা অবশ্য ক্রমশ বাড়ছে। টি-টোয়েন্টিতে রান করেছেন। সম্ভবত মোহালি এবং দিল্লিতে শেষ দুই ম্যাচে তাঁকে খেলানো হবে। ওপেনারদের খারাপ ফর্ম বিশেষ ভাবে সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে তাঁর। প্রয়োজনে বিকল্প ওপেনার হিসেবে ভাবা যেতে পারে রাহুলকে, আবার রায়ডুকে নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে চার নম্বরেও খেলানো যেতে পারে।

ঋষভের ভাগ্যে কী আছে

বিশ্বকাপের আগে আর পড়ে থাকল দু’টি এক দিনের ম্যাচ। শেষ দু’টি ম্যাচে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি বিশ্রাম নেবেন। দেশের মাটিতে দেশের জার্সিতে ধোনি শেষ ম্যাচ খেলতে চেয়েছিলেন নিজের ঘরের মাঠে, এমনই ছিল খবর। শোনা যাচ্ছে, মোহালি এবং দিল্লিতে উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলবেন ঋষভ পন্থ। সেই দুই ম্যাচে ভাল কিছু করতে না পারলে হাতে পড়ে রইল শুধু আইপিএল। সেখানে লাগাতার ব্যাটের ঝড় তুললে তখন দেশশুদ্ধ জোরাল দাবি উঠতে পারে তাঁকে দলে নেওয়ার। তখন হয়তো নির্বাচকদের পক্ষেও তাঁকে বাইরে রাখা কঠিন হবে। না হলে শুক্রবার পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, বিশ্বকাপের দলে পাকা নন ঋষভ।

ঋষভ বনাম কার্তিক

নির্বাচকদের একটা অংশ দীনেশ কার্তিককে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে। ঋষভের সামনে দু’ভাবে সুযোগ খুলতে পারে। হয় তিনি চলতি সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ এবং আইপিএলে দারুণ ঝড় তুলে কার্তিককে হারিয়ে দিলেন ফটোফিনিশে। অথবা কার্তিকের সঙ্গে তিনিও ঢুকলেন। সেক্ষেত্রে কলকাতা নাইট রাইডার্স অধিনায়ক গেলেন দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসেবে, ঋষভ গেলেন বাড়তি ব্যাটসম্যান হয়ে। তখন তাঁর সঙ্গে লড়াই হতে পারে কে এল রাহুল, অম্বাতি রায়ডুদের। কারও কারও যদিও স্পষ্ট মনে হচ্ছে, ঋষভকে বাদ দিয়ে বিশ্বকাপের দল হয় না। প্রত্যেক দলে পাওয়ারহিটার রয়েছে, ভারতেরই শুধু নেই। সেই অভাব দূর করতে পারেন ঋষভই। তিনশোর উপরে রান তাড়া করতে গেলে যে রক্তাল্পতায় ভুগছে দল, তা তো ফের দেখা গেল রাঁচীতে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement