বিরাট-বিজয় জুটির শোভা

শনিবার কোহালি মাঠে নামার আগে থেকেই সেই যে তাঁর নামে জয়ধ্বনি দেওয়া শুরু হল কোটলার গ্যালারিতে, চলল বিকেলে খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত। যখন তিনি ১৫৬ রানে অপরাজিত থেকে রোহিত শর্মাকে নিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরছেন। ভারতের স্কোর ৩৭১-৪।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:১৭
Share:

নায়ক: ঘরের মাঠে সেঞ্চুরি বিরাটের। ছবি: পিটিআই।

ঠিক দু’বছর আগে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে এই কোটলাতেই তাঁর ব্যাটিং দেখে আনন্দের চেয়ে বেশি আফসোস হয়েছিল দর্শকদের। প্রথম ইনিংসে ৪৪ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৮৮ রান করে আউট হয়ে যান। শনিবার ফিরোজ শাহ কোটলায় সেই খেদ মিটিয়ে নিলেন বিরাট কোহালি।

Advertisement

শনিবার কোহালি মাঠে নামার আগে থেকেই সেই যে তাঁর নামে জয়ধ্বনি দেওয়া শুরু হল কোটলার গ্যালারিতে, চলল বিকেলে খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত। যখন তিনি ১৫৬ রানে অপরাজিত থেকে রোহিত শর্মাকে নিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরছেন। ভারতের স্কোর ৩৭১-৪।

এর মধ্যে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ক্রিজে থেকে ১৬টা বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন তিনি। দিনের শেষে মাঠ মাতিয়ে যখন ফিরছেন, তখন রেখে গেলেন এক ‘সুপার সানডে’-র ইঙ্গিত। বিকেলে ‘কাল তো একটা ডাবল সেঞ্চুরি দেখব মনে হচ্ছে’, সঙ্গীকে বোঝাতে বোঝাতে কোটলা ছাড়ছিলেন এমনই এক দর্শক।

Advertisement

শনিবারই গ্যালারিতে যা লোক দেখা গেল, তা একমাত্র ইডেন টেস্টের রবিবারকে মনে করাতে পারে। আগের দিনই শোনা গিয়েছিল হাজার দশেক সিজন টিকিট বিক্রি হয়েছে ডিডিসিএ থেকে। বাকিটা উপহারের টিকিট। সব মিলিয়ে হাজার পনেরো দর্শক দেখা গেল এ দিন। টেস্টের ভাল বিজ্ঞাপন।

কোটলায় বিনোদনে ভরা ক্রিকেট দেখতে আসা ক্রিকেটপ্রেমীদের নিরাশ করেননি মুরলী বিজয়ও। অধিনায়কের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ১৫৫ রানের ইনিংস এবং মুরলী-কোহালির ২৮৩ রানের পার্টনারশিপও এ দিনের প্রাপ্তি। নাগপুরে ১২৮ রান করে আসা বিজয়ের কাছেও অবশ্য এই প্রত্যাশাটা ছিলই।

বাড়তি পাওনা বিজয়ের সেঞ্চুরির পরে কোহালির সঙ্গে তাঁর ড্যাব ডান্স। সেঞ্চুরির পরে বিজয় ব্যাট তোলার আগে কোহালিই ব্যাট তুলে দিয়ে সবাইকে অবাক করে দেন। বার্তাটা স্পষ্ট, সতীর্থের সাফল্যে সবার আগে গর্বিত অধিনায়কই।

ভারত শুরুটাও করে সে ভাবে, ১০ ওভারে ৪২-১। তাও দশম ওভারের শেষ বলে অফ স্টাম্পের বাইরের বল সুইপ করতে গিয়ে আউট হন ধবন। ডিপ স্কোয়ার লেগে সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে সুরঙ্গা লাকমলের জুতো খুলে গিয়ে সে এক কাণ্ড। তা সত্ত্বেও ক্যাচটা নিয়ে নিজেই অবিশ্বাসে হেসে ফেলেন শ্রীলঙ্কার পেসার। দিলরুয়ান পেরেরার সেটা ১০০তম টেস্ট উইকেট।

এর পর থেকে অবশ্য শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের হাসিখুশি চেহারা আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়। এর পরে যে ম্যাচের কন্ট্রোল রুম চলে যায় দুই ‘ভি’-র দখলে। বিরাট ও বিজয়। এ দিন রাহুলের জায়গায় ধবনকে দলে নেওয়া হয়। কিন্তু তিন ওপেনারের দৌড়ে ধবন বেশ পিছিয়ে পড়লেন বলা যায়। দিনের শেষে সাংবাদিক বৈঠকে এসে তো তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার। টস জিতে কোহালি বলেছিলেন, ‘‘মনে হচ্ছে সকালের দিকে বোলারদের জন্য কিছু থাকবে। আমাদের ওপেনারদের সকালটা সামলে নিতে হবে।’’ দেখা গেল, উইকেট নিয়ে বোধহয় একটু বেশিই চিন্তায় ছিলেন ভারত অধিনায়ক। ব্যাট হাতে নেমে যা নিজেও বুঝতে পারলেন তিনি। দুই ব্যাটসম্যানকে দেখে মনে হল, চাপ ব্যাপারটাই তাঁদের অভিধান থেকে মুছে গিয়েছে বোধহয়।

একটাই চাপের ঘটনা ঘটেছিল। বিজয়ের মারা বল ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ওপেনার সাদিরা সমরাবিক্রমের হেলমেটের জালে গিয়ে সপাটে লাগে। তাতে ওপেনারের মাথায় বেশ ভালরকম ঝাঁকুনি লাগে। দিনের শেষে শ্রীলঙ্কা শিবিরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাঁর মাথায় স্ক্যান করা হয়েছে। সারা রাত তাঁকে পর্যবেক্ষণের পরে চিকিৎসকরা রবিবার সকালে জানাবেন, তিনি খেলতে পারবেন কি না।

টেস্টে ২০ নম্বর সেঞ্চুরিতে কোহালি পৌঁছন ১৪টা চার হাঁকিয়ে। এই এক সেঞ্চুরিতেই এক ঝাঁক মাইলফলক পুঁতে ফেললেন তিনি। ক্যাপ্টেন হিসেবে তিন হাজার টেস্ট রান। তিনিই প্রথম ক্যাপ্টেন, যিনি তিন টেস্টের সিরিজে সব ম্যাচেই সেঞ্চুরি করলেন। টেস্টে পাঁচ হাজার রানও হয়ে গেল কোহালির।

এক দিনে এত ক্রিকেট-বিনোদনের উপাদান শেষ কবে পেয়েছে কোটলা?

দিল্লি যে এত দিলদরিয়া, সেটাই বা কে জানত?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement