স্বাগত: হায়দরাবাদে ফেরার পরে পিভি সিন্ধুকে নিয়ে উচ্ছ্বাস ভক্তদের। ছবি: পিটিআই।
এমন ঘরে ফেরা খুব একটা দেখেননি পি ভি সিন্ধু। সাধারণত বিশ্ব মঞ্চে সফল হয়ে ফেরা কোনও তারকার জন্য যে রকম সংবর্ধনা মজুত থাকে, মঙ্গলবার হায়দরাবাদে সে রকম কিছু ছিল না।
কেউ আতসবাজি পোড়ায়নি তাঁর আগমনে। কোনও শোভাযাত্রা চোখে পড়েনি। বিমানবন্দরের ভিতরে শুধু কয়েক জন ভক্ত এসেছিলেন ব্যানার নিয়ে রুপোজয়ী কন্যাকে বরণ করতে। বরং গোপীচন্দের অ্যাকাডেমিতে যখন গুরু গোপী এবং তাঁর ছাত্রী চেয়ারে গিয়ে বসছেন, শ্রী গুরুদেবের স্তোত্র পাঠ হচ্ছিল। অ্যাকাডেমির ভিডিও বিশ্লেষক মকদুম জানালেন, স্তোত্র পাঠ হচ্ছিল মূলত গোপীচন্দকে সম্মান জানানোর জন্য। অলিম্পিক্সের পর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও গুরু গোপীর সাফল্য অব্যাহত। গোপী আবার খুব বেশি হই হুল্লোড় পছন্দ করেন না। সম্ভবত সেই কারণেই গুরুদেবের স্তোত্র পাঠের ব্যবস্থা। যদিও জনতার আগ্রহে গুরু নন, ছিলেন ছাত্রীই। অ্যাকাডেমিতে তাঁকে দেখতেই সকলে ব্যস্ত। আর অপেক্ষমান ভক্ত, শিক্ষার্থী এবং পরিচিতদের সামনে সিন্ধু বলে দিলেন, ‘‘পদকের রংটাকে ব্রোঞ্জ থেকে রুপোয় পরিণত করতে পেরেছি। রিও অলিম্পিক্সের পরে এটাই আমার সেরা টুর্নামেন্ট।’’
এই মুহূর্তে ভারতীয় খেলাধুলোর ‘পোস্টার গার্ল’ বলা হচ্ছে তাঁকে। গ্ল্যামার জগতেও তাঁকে নিয়ে বেশ হইচই পড়ে গিয়েছে। সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে সাইনা নেহওয়ালের চেয়েও জনপ্রিয়তায় এগিয়ে যাচ্ছেন সিন্ধু। কিন্তু সাফল্যের পিছনে যে হাড় ভাঙা পরিশ্রম থাকে, সেটা এ দিন ফের মনে করিয়ে দিলেন তিনি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সফল দৌড়ের পিছনে কারণ কী? জানতে চাইলে সিন্ধু কৃতিত্ব দিলেন গ্লাসগো যাওয়ার আগে গোপী স্যারের কাছে করা এক মাসের প্রস্তুতি শিবিরকে। তাঁর মতে, বিশেষ সেই ক্লাসই তফাত গড়ে দিয়েছে। ‘‘আমরা খুবই পরিশ্রম করেছিলাম। অন্যান্য টুর্নামেন্টের আগে প্রস্তুতির জন্য খুব বেশি সময় পাওয়া যায় না। যে হেতু প্রতিযোগিতাগুলি থাকে খুব গায়ে-গায়ে। কিন্তু এ বারে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের আগে এক মাস সময় পেয়েছিলাম। সেটাকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে আমরা খুব কঠোর প্রস্তুতি শিবির করি,’’ বললেন তিনি।
আরও পড়ুন: চিনের প্রাচীর উপড়ে নতুন সিন্ধু সভ্যতা
হায়দরাবাদে ফিরলেন সাইনা নেহওয়ালও। ছবি: পিটিআই।
জাপানের নজোমি ওকুহারার সঙ্গে তাঁর ফাইনাল মহাকাব্যিক আখ্যা পেয়ে গিয়েছে। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি না ছাড়ার যে প্রতিজ্ঞা দেখিয়েছেন, সেটা এখন লোকের মুখে মুখে। সব চেয়ে বিখ্যাত হয়ে গিয়েছে দ্বিতীয় গেমে তাঁদের ৭৩ শটের র্যালি। সিন্ধু মনে করছেন, ব্যাডমিন্টনে এখন এটাই নতুন ‘ট্রেন্ড’ হতে চলেছে। ‘‘সাম্প্রতিক টুর্নামেন্টগুলো ভাল করে দেখলেই বুঝবেন, র্যালি অনেক বেড়ে গিয়েছে। কেউ আর কোনও সহজ পয়েন্ট পাচ্ছে না। প্রত্যেকটা পয়েন্টের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। এখন এটাই চলব।’’
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে কঠিন সূচি নিয়ে আবার প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে। সাইনা নেহওয়ালও হারের জন্য সূচিকেই দায়ী করেছেন। জাতীয় কোচ অবশ্য মনে করেন সূচি নিয়ে ভেবে লাভ নেই, কঠিন সূচির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করাটাই ভাল। গোপীচন্দ বলেন, ‘‘সূচি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে এখন। কখনও কখনও কঠিন সূচির শিকারও হতে হয় খেলোয়াড়দের। সিন্ধুর ক্ষেত্রেও হয়েছে। শনিবার রাতে ওর ম্যাচ ছিল। সেটা শেষ করে প্রায় রাত ১টা ১-৩০-এ ঘুমোতে গিয়েছিল ও। আবার পরের দিন ফাইনাল খেলতে হয়েছে সকালে। কখনও এই ছোট ব্যাপারগুলোই লম্বা ম্যাচ খেলার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। যখন অতিরিক্ত এনার্জির দরকার হয়।’’ সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘‘তবে এটা কোনও অজুহাত নয়। এ রকম হতেই পারে। কঠিন সূচির সঙ্গে আমাদের মানিয়ে নিতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ।’’
এই সূচি সামলেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে চিনা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তাঁর দুর্দান্ত রেকর্ডের রহস্য কী? জিজ্ঞেস করা হলে সিন্ধুর কাছ থেকে অবশ্য নিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল। বললেন, ‘‘আমি আমার নিজের খেলা খেলে যাই। প্রতিপক্ষ কে, সেটা দেখি না। চিনের খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে আলাদা কিছু করি না আমি।’’ ফাইনালের হারের দিকে বার বার ফিরে তাকাতে চান না তিনি। বরং এগিয়ে যাওয়ার ভঙ্গিতে বলে দিচ্ছেন, ‘‘২০-২০ অবস্থায় যে কেউ জিততে পারত। আমি হেরে গেলাম। হতাশ হয়েছিলাম। সেই রাতটা খুব খারাপ লাগছিল। পরের সকালে নিজেকে বুঝিয়েছি, ফাইনালটা অতীত। এগিয়ো চলো। এখন ঠিক আছি। আমি খুশি যে পদক জিতেছি। খুশি যে, রুপো জিতে ফিরতে পেরেছি।’’
ভারতের খেলাধুলোয় সবচেয়ে জনপ্রিয় ধ্বনি ছিল ‘সচিন, সচিন’। এখন শোনা যাচ্ছে ‘সিন্ধু সিন্ধু’। তিনি কী ভাবে এই নতুন উন্মাদনাকে দেখছেন? সিন্ধু বলছেন, ‘‘অন্য খেলার সঙ্গে তুলনায় যেতে চাই না। সচিন তেন্ডুলকর বিরাট এক ব্যক্তিত্ব। তবে মানুষ আমার খেলা নিয়েও ভাবছে দেখলে ভাল লাগে। আমাকে ভাল খেলে যেতে হবে।’’
শুনতে শুনতে মনে হবে, এ মেয়ে রুপো নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না!