১০০ মিটারে রুপোজয়ী কিশানে থম্পসন। ছবি: এক্স (টুইটার)।
‘অন ইয়োর মার্ক’ বলার পর কয়েক মুহূর্তের স্তব্ধতা। একটা গুলির শব্দ। তার পরের ১০ সেকেন্ডের জীবন! বেশি বলা হয়ে গেল। ১০ সেকেন্ডেরও কম। টেলিভিশনের সামনে বা স্টেডিয়ামের আসনে দর্শক ঠিক ভাবে বসার সময়টুকুও পান না। তার মধ্যেই সফল বা ব্যর্থর তকমা সেঁটে যায়! প্যারিস অলিম্পিক্সের ট্র্যাকেও ১০ সেকেন্ডের কম সময় ঠিক হয়ে গেল সব কিছু। চ্যাম্পিয়ন নোয়া লাইলসের সঙ্গে ৯.৭৯ সেকেন্ডে শেষ করেও কিশানে থম্পসনকে রুপোয় শেষ করতে হল।
ক্রিকেটপ্রেমীরা ক্রিস গেল, আন্দ্রে রাসেল, রভম্যান পাওয়েল, কোর্টনি ওয়ালস, মাইকেল হোল্ডিংদের সঙ্গে পরিচিত। উসাইন বোল্টের নাম জানেন না এমন ক্রীড়াপ্রেমী সম্ভবত নেই। সকলেই জামাইকার। এঁদের সকলের চোখ ছিল প্যারিসে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে থম্পসনের দিকে। ৬ ফুট ১ ইঞ্চির ২৩ বছরের যুবকের প্রতিটি পদক্ষেপের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে বোল্ট, গেল, দ্রে রাসদের হৃদস্পন্দন। কিন্তু ফটোফিনিশে পারলেন না থম্পসন।
পুরুষদের ১০০ মিটার দৌড়ে এখনও বিশ্বরেকর্ডের মালিক বোল্ট। ২০০৯ সালে ৯.৫৮ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করেছিলেন। অলিম্পিক্স রেকর্ডও তাঁর দখলে। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিক্সে দৌড় শেষ করেছিলেন ৯.৬৩ সেকেন্ডে। তিনিই এখনও পর্যন্ত বিশ্বের দ্রুততম মানব। জোড়া রেকর্ডের মালিকের চাপ হয়তো একটু বেশিই ছিল। কারণ তাঁরই দেশের থম্পসনের গতিতে ভেঙে যেতে পারত একটা বা দুটো রেকর্ডই।
গত বছর জুন মাসেও কেউ জানত না থম্পসনের নাম। ২৩ বছরের সেই ছেলেই এক বছরের মধ্যে বিশ্বের দ্রুততম মানব হওয়ার সেরা দাবিদার ছিলেন। জামাইকার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ৯.৭৭ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড়েছিলেন। ২০২৪ সালে এত কম সময় বিশ্বের আর কেউ দৌড় শেষ করতে পারেননি। স্বভাবতই জামাইকার ২৮ লাখ ২৪ হাজার মানুষের অন্যতম ভরসা ছিলেন থম্পসন। বোল্ট যখন দৌড়তেন, তখন অন্যরকম ব্যাপার ছিল। ১০০ মিটারের জামাইকার সেই একছত্র দাপট আর নেই। সোনা আসবেই, লিখে রাখা যায় না। প্যারিসে থম্পসনের লড়াই ছিল আমেরিকা নোয়া লাইলস, স্বদেশীয় অবলিক সেভিলে, দক্ষিণ আফ্রিকার আকানি সিমবিনে এবং বেঞ্জামিন রিচার্ডসন এবং কেনিয়ার ফার্দিনান্দ ওমানিয়ালা। ছিলেন আমেরিকার ফ্রেড কার্লেও। শেষ পর্যন্ত হারলেন লাইলসের কাছে।
নিঃসন্দেহে কঠিন লড়াই। তবু থম্পসনের দিকে তাকিয়ে ছিল জামাইকা। টোকিয়ো অলিম্পিক্সে বোল্ট ছিলেন না। জামাইকারও সোনা জোটেনি। ইটালিতে সোনা নিয়ে গিয়েছিলেন মার্সেল জেকবস। ১০০ মিটারের সোনা জামাইকায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার মূল দায়িত্ব যেন তাঁরই ছিল। কিন্তু এমন কী করে দেখিয়েছেন থম্পসন। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যিই, তেমন কিছুই নয়।
কয়েক বছর একাধিক চোট ভুগিয়েছে তাঁকে। ২০২৩ সালের জুন মাসে জামাইকার জাতীয় ট্রায়ালে ৯.৯১ সেকেন্ড সময় করে প্রথম নজর কেড়েছিলেন থম্পসন। গত বছর ২১ জুলাই মোনাকোয় আয়োজিত ডায়মন্ড লিগে ১০.০৪ সেকেন্ড সময় করে পঞ্চম হয়েছিলেন। তার পর গত সেপ্টেম্বরে চিনে আয়োজিত ডায়মন্ড লিগে ৯.৮৫ সেকেন্ড সময় করে দ্বিতীয় হন। গত ২৭ জুন জামাইকার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের হিটে দৌড় শেষ করেন ৯.৮২ সেকেন্ডে। ফাইনালে ৯.৭৭ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে চ্যাম্পিয়ন হন। অলিম্পিক্সের আগে পর্যন্ত এটাই তাঁর সেরা সময় ছিল। শুধু তাঁর নয়, ২০২৪ সালে পুরুষদের ১০০ মিটারে থম্পসনের এই সময়ই সেরা। সেটাকে ছাপিয়ে যেতে পারলে সোনা নিশ্চিত হতো তাঁর।
আন্তর্জাতিক সাফল্য তেমন কিছু ছিল না। তবু তাঁকে ঘিরেই আশা ছিল। গত এক বছরে ধারাবাহিক ভাবে সময় কমিয়েছেন জামাইকার স্প্রিন্টার। গতি বৃদ্ধি বা উন্নতির ধারাবাহিকতাই অলিম্পিক্সে সোনার দৌড়ে রেখেছিল কিংস্টনের যুবককে। তা-ও একটিও আন্তর্জাতিক খেতাব ছাড়াই। সেই খেতাব এখনও অধরা। চার ছর পর তিনিই আবার সেরা হওয়ার দাবিদার থাকবেন কি না, সেটা সময়ই বলবে।