এনটিআর নয়, এটিআর।
নিজামের শহরে এখন এটিআরের জয়-জয়কার। জনপ্রিয়তায় এনটিআর বরাবর এগিয়ে থাকলেও অন্তত এই ক’টা দিন বোধহয় তাঁকে জায়গা ছেড়ে দিতেই হবে। বৃহস্পতিবার মোতেরার সেঞ্চুরির পর তো বটেই।
এটিআর কে, আন্দাজ করা সহজ। অম্বাতি তিরুপতি রায়ডু। যাঁর সেঞ্চুরিতে বুধবার কেঁপে উঠেছিল নরেন্দ্র মোদীর শহর। আর এনটিআর এ শহরের প্রিয় নায়ক। যাঁকে আদর করে ডাকা হয় এনটিআর জুনিয়র। বিখ্যাত এনটি রামারাওয়ের নাতি!
কিন্তু মোতেরার সেঞ্চুরির পর জনপ্রিয়তায় রুপোলি পর্দার নায়ককেও নাকি পিছনে ফেলে দিয়েছেন রায়ডু। হায়দরাবাদের এক টিভি চ্যানেলের সমীক্ষায় উঠে এসেছে এই তথ্য। শহরের যুবকরা ক্যামেরার সামনে বলছেন, এনটিআর জুনিয়রের মারকাটারি অ্যাকশন ছেড়ে তাঁরা রায়ডুর বিধ্বংসী ইনিংস দেখতে বেশি আগ্রহী। সেই সুযোগও পেয়ে যাচ্ছেন রবিবার। সে দিনই ঘরের মাঠে নামছেন এটিআর। আর তাঁর আর একটা দুর্দান্ত ইনিংস দেখার আশায় উপ্পলের রাজীব গাঁধী স্টেডিয়ামে ভিড় উপচে পড়ার সম্ভাবনা ষোলো আনা।
হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার এক কর্তা বলেই দিলেন, “উপ্পলে কোনও ম্যাচে গ্যালারি ফাঁকা গিয়েছে বলে শুনিনি। এ বারও যাবে না। তবে রায়ডুর সেঞ্চুরির পর না টিকিট নিয়ে মারপিট শুরু হয়ে যায়! একেই রবিবার। তার উপর ঘরের ছেলে সেঞ্চুরি করে ঢুকছে।” তেলঙ্গানা রাজ্য হওয়ার পর হায়দরাবাদে এটাই প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও প্রধান অতিথি হয়ে আসবেন বলে কথা দিয়েছেন। এই উত্সবের আবহে যদি ফের জ্বলে ওঠে স্থানীয় তারকার ব্যাট, তা হলে পোয়াবারো। দেশের প্রাক্তন অফস্পিনার ও এইচসিএ প্রধান আরশাদ আয়ূবের তেমনই আশা। “রায়ডু বরাবরই ভাল ব্যাটসম্যান। কিন্তু এত দিন ওকে নিয়ে হইচইটা হয়নি। হায়দরাবাদ ম্যাচের ঠিক আগে সেঞ্চুরি করে ফেলায় টাইমিংটা দুর্দান্ত হয়েছে।”
রায়ডুর ছোটবেলার কোচ বিজয় পল বলছেন, “তিন বা চার নম্বরটাই ব্যাটিং অর্ডারে অম্বাতির প্রিয়। এত দিন ওই জায়গায় ব্যাট করতে পারছিল না বলেই বড় রান পাচ্ছিল না। একটা ম্যাচে নিজের আসল জায়গাটা পেয়েই দেখিয়ে দিল, ও কেমন ব্যাটসম্যান। রবিবার ওই জায়গায় নামলে আবার ভাল রান পাবে।” সাত বছর দু’মাস বয়স থেকে রায়ডুকে পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেটার বানিয়েছেন হায়দরাবাদের মফস্বল শহর সৈনিকপুরির বিজয়। রায়ডুও থাকেন সেখানেই। বিজয় বললেন, “জিমখানা মাঠে ওকে আমার কাছে প্রথম নিয়ে আসে ওর বাবা। আমিই ওর ক্রিকেট অভিভাবক বলতে পারেন। ছোট থেকেই ওর ক্রিকেট প্রতিভা অসাধারণ। কিন্তু খুব শান্ত ও ঘরোয়া বলেই বোধহয় ও তারকা হয়ে উঠতে পারল না।” মাঠে ও মাঠের বাইরের রায়ডুর চরিত্রের পার্থক্যটাও আশ্চর্য। বিজয় বলছিলেন, “ব্যাট হাতে ক্রিজে গেলেই অম্বাতি পাল্টে যায়।”
কিন্তু খ্যাতির বিড়ম্বনা সামলাতে পারবেন তো ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন তারকা? রবিবার ঘরের মাঠের দর্শকদের প্রত্যাশার চাপ নিয়ে ভাল ইনিংস দিতে পারবেন তো?
বাইশ বছর ধরে ক্রিকেটার রায়ডুকে চিনে আসা বিজয় বললেন, “চাপ সামলানোর ক্ষমতা ওর অদ্ভুত ভাল। আমিও মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই। ওকে কখনও টেনশন করতে দেখিনি। সব সময় ঠান্ডা, হাসিখুশি। দেখে মনে হয় না চাপে আছে। এটাও ও সে ভাবেই সামলে নেবে।”
সেটা করতে পারলে বোধহয় এনটিআর জুনিয়রকে বরাবরের জন্যই জায়গাটা ছেড়ে দিতে হবে!