কেকেআরের সঙ্গে আইপিএল নকআউট খেলতে নামার ঠিক চব্বিশ ঘণ্টা আগে সাক্ষাৎকার দিলেন সানরাইজার্স অধিনায়ক। আজ সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ট্র্যাভেল ডে বলে ইন্টারভিউ দেওয়ার কথা নয়। ফ্র্যাঞ্চাইজিরা কাউকে জাতীয় প্রেসের সামনে আনেওনি। কিন্তু ডেভিড ওয়ার্নার হলেন ডেভিড ওয়ার্নার! নিজের নিয়ম নিজে ঠিক করেন। এবিপি-কে এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ দিলেন আধ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে।
প্রশ্ন: কেকেআর যেখানে আগেই দিল্লি চলে এল, আপনারা এক্সট্রা দিন কলকাতায় বসে থাকলেন কেন?
ওয়ার্নার: আরে আমরা তো কালকের প্লেনে সিটই পেলাম না। অবশ্য পাইনি ভালই হয়েছে (হাসি)।
প্র: কেন?
ওয়ার্নার: ওদের কাল ট্র্যাভেল করে যা ভোগান্তি হয়েছে শুনলাম। সারাক্ষণ টার্বুলেন্সে। তার পর দিল্লির ওপর নাগাড়ে চক্কর দিতে দিতে জয়পুর চলে গেল।
প্র: ইডেনে হেরে যাওয়াটা কোটলায় আপনাদের মানসিকতাকেও দিল্লির কালকের আবহাওয়ার মতো করে রাখেনি তো?
ওয়ার্নার: একেবারেই না। সানরাইজার্স লাস্ট দুটো ম্যাচ হেরে গেছে মানে তাদের লাইটলি নেওয়া বা ভাবা যে, ওদের হারানো সহজ হবে, মারাত্মক ভুল হবে। আমরা সবাই জানি কালকেরটা ডু অর ডাই ম্যাচ! হারলে আর কিছু নেই। আউট।
প্র: মনে হচ্ছে নেহরা না থাকাটা হায়দরাবাদকে সমস্যায় ফেলছে। একমত?
ওয়ার্নার: নেহরার অভিজ্ঞতার বিকল্প হয় না। ও থাকা টিমের পক্ষে সব সময় ভাল। কিন্তু ওর বদলে যে খেলছে, সেই স্রান তো খারাপ করছে না। টি-টোয়েন্টি খেলাটার চরিত্র এমন যে, এক জনের ওপর আলাদা করে কিছু নির্ভর করে না। ১২০ বলের খেলা। যে কেউ ইম্পর্ট্যান্ট হয়ে যেতে পারে।
প্র: আগের দিন কুলদীপকে দিয়ে কেকেআরের চমকটা অনেকেই মনে করছেন কোটলায় থাকবে না। কেকেআরকে নতুন কিছু বার করতে হবে।
ওয়ার্নার: কুলদীপ চমক মানে?
প্র: কুলদীপ যাদব— বাঁ হাতি লেগস্পিনার!
ওয়ার্নার: ওহ। ইডেনে ছেলেটা খুব ভাল বল করেছে। কিন্তু আমার মনে হয় না কোটলায় ওই রকম পিচ থাকবে বলে। বল অত ঘুরবে না। হিটিং থ্রু দ্য লাইন অনেক বেশি সম্ভব হবে। ওই চমক-টমক খাটবে কি না, আমি শিওর নই। ইডেনের মতো ফ্লাইট দিতে পারবে তো? আমরা দেখব।
প্র: দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের হয়ে এক সময় খেলেছেন বলে কোটলা পিচ ভারতীয়দের মতোই চেনেন আপনি। কাল পিচ কেমন হবে মনে হয়?
ওয়ার্নার: বলা কঠিন। কোটলা পিচের চরিত্র গত ক’বছরে বদলে অনেক স্লো হয়ে গেছে। আমার তো মনে হয় প্রথম ব্যাট করে কেউ ১৬০ করলে সেটা টপকে যাওয়া কঠিন হবে।
প্র: কী বলছেন, ১৬০ উইনিং টোটাল হতে পারে প্লে-অফে?
ওয়ার্নার: হলে অবাক হব না।
প্র: মুস্তাফিজুর আপনার খুব বড় অস্ত্র। ওকে কাছ থেকে কেমন দেখলেন?
ওয়ার্নার: মুস্তাফিজ বড় ট্যালেন্ট। আমি চেষ্টা করেছি ওকে সতর্ক ভাবে ব্যবহার করতে। এমন সময় আক্রমণে আনতে যখন হয়তো ব্যাটিং পাওয়ার প্লে হয়ে গেছে। প্রচণ্ড মারের তোড়ের মধ্যে ওকে না ফেলতে।
প্র: বাংলাদেশ ক্রিকেটমহল খুব মন দিয়ে মুস্তাফিজের আইপিএল পারফরম্যান্স দেখছে। কেউ কেউ খুব তারিফও করছে যে ভাবে আপনি ক্যাপ্টেন হিসেবে ওকে ব্যবহার করছেন।
ওয়ার্নার: বললাম তো, ও বড় ট্যালেন্ট। আমি খুব ভালবাসি। ও যা ফিল্ড চায়, তা-ই দিই। ওর ভাষা সমস্যা কাটিয়ে উঠে ওকে যত পারি স্বচ্ছন্দ করার চেষ্টা করি। সবার বেলাতেই অবশ্য কমবেশি তাই করি। সানরাইজার্স হায়দরাবাদ একটা পরিবারের মতো।
প্র: শুনেছি ওঁর জন্য টিমে দোভাষী ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু দোভাষী তো মাঠে থাকেন না। তখন আপনি মুস্তাফিজের সঙ্গে কথা বলেন কী করে? আপনার ইংরেজিটাও একটু জড়ানো। মাঠের মধ্যে অত চিৎকারে সেটা বোঝা তো আরও কঠিন।
ওয়ার্নার: ক্রিকেটিং ল্যাঙ্গোয়েজে আদানপ্রদান করি। সিগন্যালও করি। ইয়র্কার দিতে বললে নীচে দেখাই। স্লোয়ার বললে হাত দিয়ে দেখাই।
প্র: চলতি আইপিএল থেকে আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য কী?
ওয়ার্নার: ব্যক্তিগত কোনও লক্ষ্য নেই। লক্ষ্য একটাই— হায়দরাবাদকে ট্রফি জেতানো। এটা শুধু টিম নয়, সাপোর্ট স্টাফ, স্পনসর, মার্কেটিংয়ের ছেলেগুলো, ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক, সকলের জন্য দরকার। আইপিএল জিতলে ওটা বেস্ট মিড-ইয়ার গিফট হবে নিজেদের জন্য।
প্র: আর সেই লক্ষ্যে সবচেয়ে বড় কাঁটা কাকে মনে হচ্ছে? আমি একটু অনুমান করব?
ওয়ার্নার: হুঁ।
প্র: বিরাট কোহালি?
ওয়ার্নার: বিরাট অসাধারণ ফর্মে খেলছে, প্রত্যেকটা ম্যাচ নতুন খিদে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, সব ঠিক। কিন্তু এটা মনে রাখবেন, ওদের এত দুর্ধর্ষ লাগার কারণ বিরাটের আশেপাশে কারা খেলছে আর তারা কী রকম সাপোর্ট দিচ্ছে। আমি কাউকে নিয়ে আলাদা করে ভাবছি না। শুধু বলছি, আইপিএলটা আমাদের একান্ত জেতা দরকার। প্রচণ্ড লড়বও। দেখা যাক না!