নিজের তিনশোতম গোলের দিন রক্তাক্ত নেইমার। বলিভিয়া ম্যাচে দেখলেন হলুদ কার্ডও।-এএফপি
এক মহাতারকা খেললেন, টিমকে পাঁচ গোলে জেতালেন, তাঁকে রক্তাক্ত করেও প্রতিপক্ষের লাভ হল না। তাঁর টিম বেরোল বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচে বিজয়ীর মুকুট পরে, গ্রুপে নিজেদের দু’নম্বরে তুলে এনে। দ্বিতীয় মহাতারকা খেলেননি। তাঁর টিমও পারেনি জিততে। পেরুর সঙ্গে তাদের ফিরতে হয়েছে ড্র করে, দেখতে হয়েছে টিম নেমে যাচ্ছে গ্রুপের তলার দিকে, পাঁচ নম্বরে।
নেইমার জুনিয়র এবং লিওনেল মেসি।
নেইমার এমন খেললেন যে, ব্রাজিল টানা তিনটে প্রাক্-বিশ্বকাপ ম্যাচ জিতে লাতিন আমেরিকান গ্রুপে দু’নম্বরে উঠে এল। উরুগুয়ের ঠিক পরেই এখন তারা। উল্টো দিকে পেরুর বিরুদ্ধে আর্জেন্তিনার জার্সিতে নামেননি মেসি। তাঁর চোট। আর্জেন্তিনা দু’বার ম্যাচে এগিয়ে গেল। কিন্তু তার পরেও জিতে বেরোতে পারল না।
ব্রাজিল অবশ্য বলিভিয়াকে ম্যাচে ঢোকার কোনও সুযোগই দেয়নি। প্রথমার্ধেই তারা চার গোল দিয়ে দেয়। দ্বিতীয়ার্ধে আসে পঞ্চম গোলটা। ম্যাচের এগারো মিনিট থেকে ব্রাজিলের গোল-ঝড় শুরু হয়ে যায়। প্রথমে গ্যাব্রিয়েল জেসাসের সঙ্গে নিখুঁত ওয়ান-টু খেলে নেইমার গোল-গেট খুলে দেন। যে গোলে নিজের তিনশো নম্বর গোল হয়ে গেল নেইমারের। দেশের জার্সিতে ৪৯-তম। সেটাও মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে। নেইমার গোল করার কাজটা শুরু দেওয়ার পর বলিভিয়ার পক্ষে সম্ভব ছিল না ব্রাজিলকে থামানোর। ফিলিপে কুটিনহো, ফেলিপে লুইস, গ্যাব্রিয়েল জেসাস— প্রত্যেকে গোল করে চলে যান। পাঁচ নম্বর গোলটা করেন রবার্তো ফির্মিনহো।
তবে এত বড় জয়ের আনন্দের মধ্যেও কিছুটা দুঃখ মিশে থাকল। সেটা— নেইমারকে নিয়ে। একে তো প্রতিপক্ষ ফুটবলারের কনুইয়ের গুঁতোয় মাথা ফেটে যায় নেইমারের। দরদরিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। তার উপর আবার হলুদ কার্ড দেখে বসা। যে কারণে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে পরবর্তী ম্যাচে খেলতে পারবেন না বার্সেলোনা বম্বার। ব্রাজিল কোচ তিতে কিছুটা অসন্তুষ্ট নেইমার নিয়ে। পাঁচ গোলে জেতার পরেও যিনি বলে দিয়েছেন, নেইমারের থেকে আরও দায়িত্ববোধ আশা করেন তিনি। পরিষ্কার, ব্রাজিল মহাতারকার হলুদ কার্ড হজমই চটিয়ে দিয়েছে তিতেকে।
‘‘নেইমারকে বুঝতে হবে যে, এ রকম পরিস্থিতিও আসবে। আর সেটা এলে ও রকম হলুদ কার্ড দেখার মতো ভুল করলে চলবে না। নিজেকে আরও পরিণত করে তুলতে হবে,’’ বলে দিয়েছেন তিতে। তবে টিমের জয়ের সম্পূর্ণ দায়িত্বভার চব্বিশ বছরের নেইমারের একার উপর তুলে দিতে চান না তিতে। বরং ডাক দিচ্ছেন, নেইমারের অনুপস্থিতিতে টিমকে দায়িত্ব নিতে। বলছেন, ‘‘নেইমারের উপর সব চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। সেটা অন্যায়ও। বাকি টিমকে মানসিক ভাবে শক্তিশালী থাকতে হবে।’’
নেইমারকে শুধু পরের ম্যাচে পাবে না ব্রাজিল। আর্জেন্তিনাকে সেখানে তো মেসি ছাড়া গত দু’টো প্রাক্-বিশ্বকাপ অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে হয়েছে। এবং দু’টোতেই ড্র। আর্জেন্তিনা ডিফেন্ডার ফুনেস মোরি সম্ভবত রাতটা ঘুমোতে পারবেন না। তাঁর পা থেকেই পেরু জয়ের স্বপ্ন শুরু হয়েছিল আর্জেন্তিনার। প্রথম গোলটা তো তাঁরই। কিন্তু মোরির পা-ই আবার আর্জেন্তিনার পেরু-বধের স্বপ্নটা কেড়ে নিল। ম্যাচের চুরাশি মিনিটে তাঁর ট্যাকলেই পেনাল্টি পায় পেরু। এবং গোল করে ম্যাচ তারা ড্র করে দেয়। অবশ্য পুরো দোষ মোরিকে দেওয়াও যায় না। গণ্ডগোল তো বাঁধিয়েছিলেন আসলে মাসচেরানো। ব্যাক পাস করতে গিয়ে। ম্যাচ ড্র হওয়ার পর নিজের উপর ক্ষোভে ফেটেও পড়েন মাসচেরানো। ক্ষিপ্ত ভাবে বলে দেন, ‘‘আমার, স্রেফ আমার জন্য আজ দু’টো পয়েন্ট মাঠে ফেলে আসতে হল টিমকে। আমার একটা ভুলের জন্য এত খাটাখাটনি সব নষ্ট হয়ে গেল।’’ সঙ্গে মাসচেরানো আরও বলতে থাকেন, ‘‘অসহ্য লাগছে। তিনটে পয়েন্ট নিশ্চিত ছিল আমাদের। কী করে যে এ রকম মারাত্মক একটা ভুল করে ফেললাম, বুঝতে পারছি না।’’ মোরি ছাড়া পেরুর বিরুদ্ধে আর্জেন্তিনার হয়ে গোল করেন গঞ্জালো ইগুয়াইন। পেরুর দু’টো গোল—গুরেরো এবং কুয়েভার।
প্রাক্-বিশ্বকাপে ইউরোপিয়ান গ্রুপে আবার স্পেন-ইতালি হেভিওয়েট লড়াই ১-১ ড্র থাকল। ঘরের মাঠে কিংবদন্তি ইতালীয় গোলকিপার বুফনের অপ্রত্যাশিত ভুলে ভিটোলো স্পেনকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। ম্যাচের শেষ দিকে ডি রোসি পেনাল্টি থেকে সমতা ফিরিয়ে ইতালির মুখরক্ষা করেন।