Sports news

অলস ফিল্ডিংয়েই হার, মনে করছেন ক্ষুদ্ধ মাশরাফি

ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে সিডনিতে ৯ দিনের প্রাক প্রস্তুতি অনুশীলনের সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। খেলেছে দু’টি বোনাস প্রস্তুতি ম্যাচ। প্রথম ওয়ানডেতে কিন্তু তার কোনও কিছুরই প্রভাব পড়ল না। ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে ওয়ানডেতে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দলকে সেই চেহারায় দেখা গেল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:০৬
Share:

জিতে যাওয়ার পর। ছবি: এএফপি।

ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে সিডনিতে ৯ দিনের প্রাক প্রস্তুতি অনুশীলনের সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। খেলেছে দু’টি বোনাস প্রস্তুতি ম্যাচ। প্রথম ওয়ানডেতে কিন্তু তার কোনও কিছুরই প্রভাব পড়ল না। ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে ওয়ানডেতে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দলকে সেই চেহারায় দেখা গেল না। ২১ মাস আগে হ্যামিল্টনে কিউইদের বিপক্ষে যে লড়াকু বাংলাদেশকে দেখেছে বিশ্ব, ছন্দপতন হয়ে সেই বাংলাদেশ সোমবার ক্রাইস্টচার্চে হারল ৭৭ রানের বিশাল ব্যবধানে। ২৬ বছর আগে শারজায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে করা রেকর্ড স্কোর (৩৩৮/৪) টপকে গিয়ে করেছে ৩৪১। শেষ পাওয়ার প্লে’র ৬০ বলে ১০৩ রান করে বাংলাদেশ বোলারদের একেবারে পাড়ার বোলারদের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা। ১৯৯০ সালে শারজায় অস্ট্রেলেশীয় কাপে তখনকার সর্বোচ্চ স্কোরে (৩৩৮/৪) মূল ভুমিকা ছিল প্রথম উইকেট জুটিতে মার্টিন ক্রো-জন রাইটের রেকর্ড ১৫৮ রানের পার্টনারশিপ। কাকতালীয় হলেও শারজার সেই স্কোরকে টপকে যওয়া ইনিংসে সোমবার নিউজিল্যান্ডের ৫ম জুটিতে লাথাম-মুনরোর অবদানও সেই ১৫৮। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের আগের ২৫টি মুখোমুখি লড়াইয়ে ২১ মাস আগে হ্যামিল্টনে মাহামুদুল্লাহর সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ১২৮ রানের হার না মানা ইনিংসটিও লাথামের ১৩৭ রানের কাছে হার মেনেছে। ২৭ রানের মাথায় রান আউটের সুযোগ এবং ৮৩ রানের মাথায় মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া কলিন মুনরোর ব্যাটিংয়ে ছিল টি-২০ আমেজ ( ৬১ বলে ৮ চার ৪ ছক্কায় ৮৭) ।

Advertisement

নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৩২২ তাড়া করে অতীতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ২১ মাস আগে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে নেলসনে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০৯ তাড়া করে জয়ের ইতিহাসও রয়েছে। ৩ বছর আগে ফতুল্লায়। তাই বলে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রবল প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৪২ চেজ করবে কী ভাবে? তারই প্রতিফলন ছিল সাকিবদের ব্যাটিংয়ে। ৫ম জুটিতে মুশফিকুরের সঙ্গে দারুন বোঝাপড়ায় ৫৭ বলে ৬২ রানে বাংলাদেশকে ম্যাচে রেখেছিলেন সাকিব। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩২তম অর্ধশতরান ইনিংসকে (৫৪ বলে ৫ চার ২ ছক্কায় ৫৯) আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু ফার্গুসনকে পর পর ছক্কা মারতে গিয়ে নিজের এবং দলের বিপদ ডেকে আনলেন। দ্রুত সিঙ্গল নিতে যেয়ে মুশফিকুর (৪৮ বলে ৪২) এমন সময়ে চোট পেলেন যে, ম্যাচ থেকে ছিটকে গেল বাংলাদেশ। উপর্যুপরি ২ ওয়ানডে সিরিজে তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে মানিয়ে নেয়া সাব্বির জানিয়ে দিলেন লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং তার পছন্দ নয় (১৬)। সব হারিয়ে স্যান্টনারকে ২ এবং সাউদিকে এক ছক্কায় ৬ষ্ঠ ম্যাচে এসে প্রথম হাফ সেঞ্চুরির মুখ দেখা মোসাদ্দেকের ( ৪৪ বলে ৫ চার ৩ ছক্কায় ৫০) অভিষেক ফিফটি পেয়েছে হাততালি। তবে অন্য কারও ব্যাটিং চাহিদা মেটাতে পারেনি।

আইসিসির বর্ষসেরা উদীয়মান মুস্তাফিজুর রহমান এবং ওয়ানডের বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার সাকিবকে নিয়ে শিষ্যদের সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড কোচ। তার এই আশঙ্কা ভুল প্রমানিত হয়নি। হাফ ফিট মুস্তাফিজুর ১৩ মাস পর ওয়ানডে ম্যাচে খেলতে নেমে দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। প্রথম ব্রেক থ্রুটি দিয়েছেন তিনি। স্লোয়ার ডেলিভারিতে কিউই ওপেনার মার্টিন গাপ্টিলকে মিড অনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করা মুস্তাফিজুরের প্রথম স্পেলটি ছিল অসাধারন(৪-০-১৩-১)। ২ উইকেটের ইনিংসে পরের ২টি স্পেল ছিল ৩-০-২২-০ ও ৩-০-২৭-১। যার মধ্যে ফুলার লেন্থ ডেলিভারিতে ম্যাচ সেরা লাথামকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন শেষ স্পেলে। অন্য দিকে অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পরও সিরিজের প্রথম ম্যাচে দুই ডিপার্টমেন্টেই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মধ্যে সেরা সাকিব। সর্বোচ্চ ৩টি শিকারের (৩/৬৯) পাশে সর্বোচ্চ ইনিংসটিও তাঁর।

Advertisement

সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারের কারণ হিসেবে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন বোলিং এবং ফিল্ডিংকে। তাঁর মতে, “ওদের শর্ট বলগুলো ছিল আমাদের মাথা সমান উচ্চতায়। সেখানে আমাদের শর্ট বল ছিল ওদের বুকসমান উচ্চতায়। এ ধরনের ডেলিভারি ওরা অনায়াসেই খেলতে পেরেছে। তাছাড়া আমরা অনেক বেশি শর্ট বল করেছি। আর আমাদের ফিল্ডিংকে অলস ফিল্ডিংই বলব। যে শটে এক রানের বেশি হওয়ার কথা নয়, সেই শটে ওরা ২ রান নিয়েছে, আর দুই রানকে তিন রানে পরিণত করেছে। এখানেই অন্তত ২০ রান বেশি পেয়েছে ওরা। কেন যেন মনে হয়েছে, ফিল্ডিংয়ে আমরা হতোদ্যম ছিলাম। ফিল্ডিং ভাল করলে বোলাররা হাল ছাড়ত না। বোলিং-ফিল্ডিং ভাল করলে ওদের ইনিংসে অন্তত ৪০টি রান কম হত। বাড়তি ওই রানই আমাদের ভুগিয়েছে।”

লন্ডনের বুপা ক্রমওয়েল হাসপাতালে কাঁধের অস্ত্রোপচারের কারণে ক্রিকেটের বাইরে ৫ মাস কাটাতে হয়েছে মুস্তাফিজুরকে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলার আগে ফিল্ডিং কোচের রিপোর্ট ছিল না মুস্তাফিজুরের পক্ষে। খেলার সিদ্ধান্তের ভারটা মুস্তাফিজুরের উপরই ছেড়ে দিয়েছিলেন হেড কোচ হাতুরুসিংহে। খেলার পক্ষে মত দিয়েছেন মুস্তাফিজুর। পুরোপুরি ফিট হওয়ার আগেই মাঠে নেমে সেই মুস্তাফিজুর প্রত্যাবর্তন ম্যাচে দিয়েছে আস্থার প্রতিদান (২/৬২)। তাতেই খুশি মাশরাফি বলেন, “মুস্তাফিজের ব্যাপারটি আলাদা। অনেক দিন পর এসেছে। আরও তিন চার মাস খেলতে খেলতে আগের অবস্থায় আসবে। এত দিন পর খেলতে এসে শূন্য থেকে শুরু করেছে ছেলেটি। মোটামুটি ঠিকঠাক ছিল। সময়ের সঙ্গে আরও উন্নতি করবে। আশা করছি খেলতে খেলতেই নিজেকে পুরোপুরি ফিরে যাবে।”

মুশফিকুর রহিমের বাঁ পায়ের হ্যামস্ট্রিং চোট বড় দূর্ভাবনায় ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ দলকে। ২ দিন বিশ্রামের পর এম আর আই স্ক্যান রিপোর্টের উপর নির্ভর করছে মুশফিকুরের ভাগ্য। বৃহস্পতিবার নেলসনে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি এক অর্থে অনিশ্চিতই হয়ে পড়েছে মুশফিকুরের।

আরও পড়ুন: করুণদের ভাল খেলার জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য বিরাটদের

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement