এটিকে রক্ষণের শেষ প্রহরী। মঙ্গলবার প্র্যাকটিসে দেবজিৎ। ছবি: উৎপল সরকার
আমার বসিরহাটের বিধানসভা কেন্দ্র হোক কিংবা কলকাতা, ফুটবলের প্রসঙ্গ উঠলে সবার মুখে মুখে এখন একটাই প্রশ্ন— মুম্বইকে সেমিফাইনালে হারাতে পারবে এটিকে?
এখানে শুরুতেই যে কথাটা বলে রাখতে চাই সেটা হল, কোনও টুর্নামেন্টে গ্রুপ লিগ আর সেমিফাইনাল এক নয়। এবং আইএসএল সেমিফাইনালে বিপক্ষের নাম যখন মুম্বই সিটি, তখন কাজটা আরও কঠিন কলকাতার কাছে।
আমার মতে, এই আইএসএলের সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ফরোয়ার্ড লাইন মুম্বইয়েরই। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দামি স্ট্রাইকার দিয়েগো ফোরলানের সঙ্গে আই লিগের সেরা বিদেশি সনি নর্ডি তো ভারতের সেরা স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রীর সঙ্গে জ্যাকিচন্দ, হাওকিপ। চোখ ধাঁধানো লাইন আপ। মুম্বইয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি হল, গোল করার লোক তো আছেই, গোলের সুযোগ তৈরি করার লোকও আছে সমান ভাবে। যারা শুধু স্ট্রাইকারদের নয়, প্রয়োজনে নীচে এসে ডিফেন্ডারদেরও সাহায্য করতে পারে। এই মুম্বইকে আটকাতে হলে এটিকে-কে সবার আগে নিজেদের ডিফেন্স সামলাতে হবে। ডিফেন্সিভ থার্ডে জেড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা দরকার। আর আমার মতে কলকাতা এই জায়গায় পিছিয়ে।
টুর্নামেন্টের শেষের দিকে পৌঁছেও জোসে মলিনা এখনও তাঁর ফার্স্ট লাইন ডিফেন্স ঠিক করে উঠতে পারেননি। মুম্বইয়ের সুনীল-হাওকিপের মতো কলকাতার অর্ণব-প্রীতমও জাতীয় দলের নিয়মিত ফুটবলার। কিন্তু ওরা এখনও পর্যন্ত সেই ভাবে জ্বলে উঠতে পারেনি। মুম্বই-বাধা টপকাতে হলে নিজেদের সেরাটা দিতে হবে দু’জনকে। ওদের পারফরম্যান্সের উপর সেমিফাইনালের অনেক কিছু নির্ভর করছে। তবে একটা কথা এখনই বলে দিতে পারি। অর্ণবরা যেমনই খেলুক, মলিনাকে শুরু থেকেই দু’টো ডিফেন্সিভ ব্লকার লাগবে। হিউম আর দ্যুতিকে যে ভাবে বেঞ্চে রেখে শুরু করছেন, সেই ফর্মুলাই ধরে রাখতে হবে মলিনাকে।
কিন্তু এখানেও একটা ব্যাপার থাকছে। এ বার আইএসএলে দেখা যাচ্ছে এটিকে শেষ কুড়ি-পঁচিশ মিনিট খুব নড়বড়ে। এমনকী গোল করেও লিড ধরে রাখতে পারছে না। আসলে হিউম-দ্যুতি নামার পরে ডিফেন্স আলগা হয়ে যাচ্ছে। মলিনাকে মুম্বই ম্যাচে সেটা খেয়াল রাখতে হবে। নক আউট ম্যাচে এ রকম ভুল করা মোটেই চলবে না। এ বার আইএসএলে মার্কিদের মধ্যে মুম্বইয়ের ফোরলানকে আমার সবচেয়ে ফিট মনে হচ্ছে। ওর সঙ্গে সনি, সুনীলরা তো যে কোনও বিপক্ষ টিমের কাছেই বড়সড় মাথাব্যথা।
এটিকে-র একটা সুবিধে হল ঘরের মাঠে প্রথম সেমিফাইনালটা খেলা। লারা-পস্টিগাদের এই সুযোগে শুরুতেই গোল করতে হবে। যেটা এ বার লিগের ম্যাচে নিজেদের ঘরের মাঠে কেরল ব্লাস্টার্স করেছিল মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে। গোল করে নিজের ডিফেন্স আগলে চুপ করে বসে থাকো। গোল শোধ করতে না পারলে ফোরলানরাও চাপে পড়ে যাবে। আর ওদের যা টিম তাতে আমার মতে তার একটাই অ্যান্টিডোট— শুরুতে গোল তুলে নিয়ে নিজের ডিফেন্স আগলে বসে থাকো।
তবু বলতে বাধ্য হচ্ছি, সেমিফাইনালে মুম্বই-ই এগিয়ে।