ইউরোপে ক্লে-কোর্ট মরসুম চলার মধ্যেই বিশ্বের সমস্ত পেশাদার টেনিস খেলোয়াড়ের ফোকাস এখন ফরাসি ওপেনে। ২২ মে থেকে প্যারিসে মরসুমের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যামের জন্য জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে সবার একই সঙ্গে।
ক্লে কোর্টে এ বার আমার প্রথম টুর্নামেন্ট মাদ্রিদ ওপেন। নতুন সঙ্গী কাজাখস্তানের ইয়ারাস্লোভা শ্বেদোভার সঙ্গে নেমেছিলাম ওখানে। তার পরে আমরা খেলছি রোমে (শনিবার সানিয়ারা সেমিফাইনালে উঠেছেন)। আমাদের জুটি কিন্তু একেবারে নতুন ভাবলে ভুল হবে। কয়েক বছর আগে ওয়াশিংটনে আমরা ডাবলস খেতাব জিতেছিলাম। ইয়ারাস্লোভাকে বন্ধুরা ডাকে ‘স্লাভা’। অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। গত বার উইম্বলডনে ডাবলস রানার্স ছিল স্লাভা। টিমিয়া বাবোসের সঙ্গে জুটিতে। ফাইনালে ওঠার পরে ওরা হেরে গিয়েছিল উইলিয়ামস বোনেদের কাছে।
জুনিয়র হিসেবে যখন আন্তর্জাতিক টেনিসে প্রথম পা রাখি, ইউরোপের লাল মাটি তখন আমার কাছে একেবারে অজানা। এ রকম কোর্টে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না তখন। মুভমেন্ট আর সঠিক টেকনিক খুঁজে পেতে যে জন্য সমস্যা হতো আমার। কেননা ভারতে যে ক্লে কোর্টে আমার খেলার অভি়জ্ঞতা ছিল তখন, তার সঙ্গে ইউরোপের ক্লে কোর্টের প্রচুর তফাত।
তারপর শুরু হল ক্লে কোর্টে ভাল পারফর্ম করার জন্য কঠোর পরিশ্রম। তার পরে সময় গড়িয়েছে। এখন আমার কাছে ২০১২ রোলঁ গ্যারোজ মিক্সড ডাবলস খেতাব রয়েছে, মহেশ ভূপতির সঙ্গে যা জিতেছিলাম, এখনকার মিক্সড ডাবলস পার্টনার ইভান ডডিজের সঙ্গে গত বার রানার্স হয়েছি, ২০১১-তে এলেনা ভেসনিনার সঙ্গে রানার্স হয়েছিলাম ডাবলসেও। এই রেকর্ডগুলো নিশ্চয়ই ক্লে কোর্টে মরসুমের এক মাত্র গ্র্যান্ড স্ল্যামে খেতাবের দৌড়ে থাকার আমার দাবিকে সমর্থন করছে।
বছরের গোড়ার দিকে হাঁটুর চোটে আমি কয়েক দিন ভুগেছি, তার পরে ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টগুলোর জন্য যখন প্রস্তুতি নিচ্ছি, ভোগালো ফ্লু। তবে এখন গ্র্যান্ড স্ল্যাম যত কাছাকাছি আসছে তত আমি ফিটনেসের চূড়োয় উঠছি আর টুর্নামেন্টে অনেক দূর এগোনোর লক্ষ্য নিয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
পুরুষদের সিঙ্গলসে এ বার রজার ফেডেরারের সরে দাঁড়ানো আর নোভাক জকোভিচ সে রকম ফর্মে না থাকায় নিশ্চিত ভাবে ট্রফি জেতার দৌড়ে প্যারিসের ক্লে কোর্টে ‘হট’ ফেভারিট রাফায়েল নাদাল। যে জায়গাটা রীতিমতো নাদালের সাম্রাজ্য হয়ে উঠেছে। স্প্যানিশ শিল্পীকে এ বার রোলঁ গ্যারোজে হারাতে পারাটা অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে বিরাট চ্যালেঞ্জ।
মেয়েদের সিঙ্গলসে এ বার অনামী অনেক খেলোয়াড়েরই ইতিহাসে নাম লেখানোর সুযোগ থাকছে। মা হতে চলেছে বলে সেরিনার না থাকা, সঙ্গে মারিয়া শারাপোভার ‘ওয়াইল্ড কার্ড’ না পাওয়ায় ফরাসি ওপেনে চ্যাম্পিয়নের দৌড়ে উঠে আসছে অনেক নতুন নামও। ব্যক্তিগত ভাবে আমি এগিয়ে রাখছি রোমানিয়ার সিমোনা হালেপকে। মাদ্রিদে সিঙ্গলসে ও দারুণ খেলেছে। ডাবলসে আমি ওর বিরুদ্ধে মাদ্রিদে মুখোমুখি হয়েছিলাম। দেখেছি কতটা নিখুঁত টাইমিং করছে মেয়েটা। আমার পুরনো বন্ধু আর প্রতিদ্বন্দ্বী শ্বেতলানা কুজেনেৎসোভাও নিশ্চয়ই এই সুযোগে আরও একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের জন্য মুখিয়ে থাকবে। আর এদের পাশাপাশি নজর থাকবে স্থানীয় খেলোয়াড় ফ্রান্সের ক্রিস্টিনা ম্লাদেনোভিচের উপরও।
সব মিলিয়ে টেনিসপ্রেমীদের সামনে আবার রোলঁ গ্যারোজে লাল মাটিতে পনেরো দিন দুরন্ত টেনিসের সাক্ষী থাকার সুযোগ।