বোর্ডের সাত সদস্যের কমিটিতে রাখা হল সৌরভকে

সংস্কারের তোয়াক্কা না করে শ্রীনি-রাজ

সভা ছিল দু’দিন ব্যাপী। প্রথম দিন অর্থাৎ রবিবার, বিভিন্ন রাজ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা বসেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রের্‌স (সিওএ)-এর সঙ্গে।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ০৪:৪৪
Share:

প্রবল প্রতিকূল হাওয়া বইছে তাঁর বিরুদ্ধে। তবু সরকারি ভাবে কোনও পদে না থেকেও এন শ্রীনিবাসন এখনও বোর্ডের সর্বময় কর্তা। রবিবার এবং সোমবার আরব সাগরের পারে বোর্ডের মহাসস্মেলনে আরও এক বার শ্রীনি তা প্রমাণ করে দিয়েছেন।

Advertisement

সভা ছিল দু’দিন ব্যাপী। প্রথম দিন অর্থাৎ রবিবার, বিভিন্ন রাজ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা বসেছিলেন সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রের্‌স (সিওএ)-এর সঙ্গে। সেখানে বিনোদ রাই-রা বোঝান, লোঢা কমিটির সংস্কার মেনে নিতেই হবে। বোর্ড কর্তারা জানান, কোন কোন সংস্কার মেনে নিতে তাঁদের আপত্তি রয়েছে।

যেমন এক রাজ্য-এক ভোটের নীতি। যেমন তিন বছর পদাধিকারী থাকার পরেই কুলিং অফে যাওয়ার নিয়ম। শ্রীনি তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে শুধু সেই বৈঠকে হাজিরই হয়ে যাননি, সিওএ সদস্যদের মুখে মুখে তর্কও জুড়ে দিয়েছিলেন। যদিও কারও কারও মনে হচ্ছে, সিওএ-কে উত্তেজিত করে দিয়ে আরও সর্বনাশই ডেকে আনছেন শ্রীনি। এর পর সুপ্রিম কোর্ট বোর্ডের সভায় তাঁর প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিলে অবাক হওয়ার থাকবে না।

Advertisement

কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে শ্রীনি অবশ্য মুম্বই পৌঁছে গিয়েছিলেন শনিবারেই। সভার আগে দল গুছিয়ে নেওয়ার জন্য ডিনার হোস্ট করেন। অনেকে তাঁর নিমন্ত্রণ গ্রহণও করেন।

আরও পড়ুন: প্রিয় উইম্বলডনে আসছি ক্ষুধার্ত সেই রজার হয়ে

কিন্তু শ্রীনির আসল ‘খেল্‌’ শুরু হয় সোমবার সকালে। ঠিক ছিল, লোঢা কমিটির কোন কোন সুপারিশ নিয়ে আপত্তি থাকছে বোর্ড সদস্যদের, তা চূড়ান্ত করে একটি ড্রাফ্‌ট তৈরি করা হবে। সেই ড্রাফ্‌টে দু’টো গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ রাখা হয়নি প্রথমে। এক) সত্তর বছর হয়ে গেলে আর পদাধিকারী হওয়া যাবে না এবং দুই) পদাধিকারী হিসেবে ৯ বছর হয়ে গেলে সংস্থা থেকে বিদায় নিতে হবে।

এই দু’টি সংস্কারই শ্রীনির স্বার্থ বিরোধী। ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি নিজস্ব ‘নেটওয়ার্ক’ চালু করে দেন। ড্রাফ্‌ট করার দায়িত্বে থাকাদের মধ্যে ছিলেন মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার নতুন প্রেসিডেন্ট অভয় আপ্তে। কিন্তু শ্রীনি হাত মিলিয়ে ফেলেন প্রাক্তন বোর্ড সচিব অজয় শিরকের সঙ্গে। যিনি ব-কলমে এখনও মহারাষ্ট্র ক্রিকেট সংস্থার প্রধান কর্তা। তাঁর মাধ্যমে আপ্তের গুরুত্ব কমিয়ে দেন মুহূর্তে।

এর পর সভায় ঢুকেও শ্রীনিই ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেন। সভা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দক্ষিণাঞ্চলের একনিষ্ঠ শ্রীনি-অনুরাগী টি সি ম্যাথু-কে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কর্তাদের চমকে দিয়ে প্রবল আগ্রাসী সুরে সভা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন স্বয়ং শ্রীনি। সমস্ত বিষয়েই তিনি কথা বলতে থাকেন শাসকের ঢংয়েই।

শোনা গেল, বোর্ডের সচিব অমিতাভ চৌধুরীকে সভায় সকলের সামনেই শ্রীনি বলেন, আইসিসি বৈঠকে গিয়ে তোমরা বোর্ডের ক্ষতিই করে এসেছ। প্রচুর টাকা কম পাচ্ছে বোর্ড। এমনকী, তাঁর ইচ্ছায় বিশেষ সাধারণ সভার মিনিট্‌সে পর্যন্ত এই পর্যবেক্ষণ ‘রেকর্ড’ করতে হয় যে, আইসিসি বৈঠকে ভারতের টাকা কমেছে এবং তাতে বোর্ডের ক্ষতিই হয়েছে। অমিতাভকে সচিব পদে বসিয়েছিলেন শ্রীনিই। নতুন খবর যে, অমিতাভ এখন নিজের মতো চলতে চাইছেন। শ্রীনির কাছেও সেই ইঙ্গিত পৌঁছয়নি, হতে পারে না। সভায় তোপ দাগা হয়তো সেই কারণেই।

লোঢা কমিটির সুপারিশ নিয়ে আলোচনার জন্য নতুন কমিটি গঠনের প্রস্তাব তিনিই দেন। মঙ্গলবার সেই কমিটি তৈরি হল। তাতে আছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাজীব শুক্ল, অমিতাভ চৌধুরী, বোর্ডের কোষাধ্যক্ষ অনিরূদ্ধ চৌধুরী, টি সি ম্যাথু, অমিত শাহের ছেলে জয় শাহ-রা। সাত সদস্যের কমিটিতে শ্রীনির লোক অন্তত চার জন। বোর্ডের অন্দরমহলে এটাও কারও নজর এড়াচ্ছে না যে, অমিত শাহের পুত্র জয় শাহের গুরুত্ব বাড়তে শুরু করেছে। মুম্বইয়ের বৈঠকে গুজরাত ক্রিকেট সংস্থার প্রধান জয় শাহ মোটামুটি ভাবে শ্রীনির মতকে সমর্থনই করছিলেন। নতুন কমিটিতেও তিনি আছেন। কারও কারও মনে হচ্ছে, বিজেপি হাইকম্যান্ডের সঙ্গে বোর্ডের যোগাযোগের সেতু আর অনুরাগ ঠাকুর নেই। সেটা আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে অমিত শাহ-পুত্রের হাতেই।

হিমাচল প্রদেশের বিজেপি হেভিওয়েট অনুরাগকে বোর্ডের প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরে যেতে হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের আদেশেই। এখনও সেই নিষেধাজ্ঞা ওঠেনি বলে মুম্বইয়ের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও তিনি থাকতে পারেননি।

বোর্ড মহলে কেউ কেউ এখনও অরুণ জেটলির মনোভাব জানার অপেক্ষায়। ক্রিকেট বোর্ড নিয়ে বিজেপি কী নীতি নেবে, সে ব্যাপারে জেটলিই বরাবর শেষ কথা বলেছেন। আবার তিনি যে দীর্ঘ দিন ধরে চুপচাপ আছেন, সেটাও কারও চোখ এড়াচ্ছে না। মুম্বইয়ের বৈঠকের আগেও জেটলি ফোন করে কোনও বার্তা দেননি।

তা হলে কি ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বের দিক থেকে কোনও বদল আসন্ন? বোর্ডের জেটলি-ঘনিষ্ঠ সদস্যরা এখনও মনে করেন, শ্রীনিকে ঠেকাতে পারতেন একমাত্র তিনিই। তাঁকে বাতিল করে শশাঙ্ক মনোহরকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট করার সময়েও সক্রিয় ভূমিকা ছিল বিজেপি অর্থমন্ত্রীর। রাজনীতি আর ক্রিকেট-রাজনীতি কখনও মেশাতেন না জেটলি। তাঁর বন্ধুত্ব ছিল সর্ব দলের সঙ্গে। কিন্তু বোর্ড সদস্যদের কাছ থেকে যত দূর ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, অমিত শাহের হাতে নিয়ন্ত্রণ চলে গেলে জেটলির উদারনীতির দরজা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ‘অমিত-বিক্রমে’ তখন বিজেপি মুখই বেশি প্রাধান্য পাওয়ার সম্ভাবনা।

পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে ক্রিকেট বোর্ডে। তবে লোঢা সংস্কার নিয়ে নয়, তাতে সেই রাজনীতিরই রং!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement