নায়ক: কল্যাণীতে ধোনি। জেতালেন ঝাড়খণ্ডকে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
পাঁচ দিন আগে ব্যাট হাতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে বাইশ গজে দেখা যায়নি। তাই হতাশার অন্ত ছিল না কল্যাণীর!
অবশেষে নদিয়ার ক্রিকেট জনতার সেই আশ মিটল সোমবার। বিজয় হজারে ট্রফির গ্রুপ লিগের শেষ ম্যাচে জম্মু ও কাশ্মীরের বিরুদ্ধে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি শুধু ব্যাট-ই করলেন না। নব্বই বল বাকি থাকতেই ছয় মেরে ঝাড়খণ্ডকে পৌঁছে দিলেন কাঙ্ক্ষিত জয়ে।
সকালে তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাস ছিল না সে রকম। তাঁর একটা বড় কারণ টসে জিতে জম্মু ও কাশ্মীরের ব্যাট করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে নড়েচড়ে বসল শেষ বেলায়। ঘড়ির কাটায় তখন তিনটে। সৌরভ তিওয়ারি আউট। ব্যাট হাতে বাইশ গজে হাজির এমএসডি। ক্রিজে রইলেন মিনিট পঁচিশ। ১৭ বলে করলেন ১৯ রান। যার মধ্যে দু’টো চার আর একটা বিশাল ছয়। আর সেই ছ’য়েই ম্যাচ পকেটে ঝাড়খণ্ডের। পরভেজ রসুলের জম্মু ও কাশ্মীরকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বিজয় হজারে ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে গেল ধোনির রাজ্য ঝাড়খণ্ড। যেখানে তাঁদের প্রতিপক্ষ বিদর্ভ। তবে ম্যাচ হেরেও জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাপ্তি ধোনির ‘পেপটক’। মেহজুর আলির শর্ট বলে হুক করে ধোনি খেলা শেষ করতেই জম্মু ও কাশ্মীর অধিনায়ক পরভেজ রসুল ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন ধোনিকে। সেখানেই ‘ক্যাপ্টেন কুল’-কে তাঁর অনুরোধ, ‘‘মাহি ভাই। আমাদের ড্রেসিংরুমে যাবে! ছেলেরা তোমার কথা শুনতে চায়।’’ যা শুনেই প্যাড না খুলে জম্মু ও কাশ্মীর ড্রেসিংরুমে চলে যান ধোনি। সেখানেই মিনিট পনেরোর আলাপ-আলোচনা, পরামর্শ দেওয়ার পালা।
রসুলদের ড্রেসিংরুমে ঢুকেই প্রথমে ধোনি বলেন, ‘‘এই টিমটায় প্রতিভা আছে। তবে এতে আত্মতুষ্ট হয়ো না। আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াতে গেলে আরও ঘসামাজা দরকার।’’ এখানেই শেষ নয়। জম্মু ও কাশ্মীরের দ্বিতীয় কিপার রমন থাপলুকে ক্ষিপ্রতা বাড়ানো, অফ ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যান ইয়ানদেব সিংহকে ফর্মে ফেরার টোটকাও দেন প্রাণখুলে। যা শুনে এসে পরভেজ রসুল বলে গেলেন, ‘‘মাহি ভাইয়ের কথা মন দিয়ে শুনছিলাম। এত বড় মোটিভেটরকে হাতের কাছে পেয়ে ছাড়া যায় নাকি! বললেন, বিপক্ষের মনটা আগে পড়ে ফেলতে হবে সাফল্য পেতে গেলে। আর রান খরা কাটানোর একটাই দাওয়াই—নেটে ব্যাট করে যাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আউট হওয়া চলবে না।’’
ম্যাচ শেষে কল্যাণী ও তার আশপাশ অর্থাৎ রানাঘাট, হালিশহর, মদনপুর থেকে আসা ধোনি অনুরাগীরা তুলে ধরেছিলেন প্ল্যাকার্ডটা। যেখানে জ্বলজ্বলে হরফে লেখা, ৬ মার্চ—ধোনি দিবস। সঙ্গে লেখা ব্যাখ্যাটা। দু’বছর আগে এই দিনেই বিশ্বকাপে ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে জয়। গত বছর এই দিনেই বাংলাদেশে এশিয়া কাপ জয়। আর এ দিন ঝাড়খণ্ডকে জিতিয়ে বিজয় হাজারে ট্রফির নকআউট পর্বে নিয়ে যাওয়া। তার সুবাদেই এই দাবি ভক্তদের। চব্বিশ ঘণ্টা আগেও ঝাড়খণ্ডের নকআউটে যাওয়া নিয়ে অনেক ‘যদি’, ‘কিন্তু’ ছিল। ধোনির টিমকে কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে গেলে সার্ভিসেসের কাছে হারতে হত হায়দরাবাদকে।
সোমবার সকাল এগারোটার মধ্যেই মাঠে খবর চলে আসে ইডেনে সার্ভিসেসের বিরুদ্ধে ৮৮ রানে গুটিয়ে গিয়েছে হায়দরাবাদ। কল্যাণীতেও ততক্ষণে পরভেজ রসুলদের বিরুদ্ধে ৪২ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে ধোনির টিমকে চালকের আসনে বসিয়ে দিয়েছেন স্পিনার শাহবাজ নাদিম।
যদিও ‘ধোনি শো’ তখন দূর অস্ত! সকালে ম্যাচ শুরুর আগে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে সংবর্ধনা নিয়ে মাঠে নেমেই টসে হার। ফলে ফিল্ডিং। উইকেটকিপার ধোনিকে দেখতে তেমন ভিড় জমেনি। উল্টে মাঠের পাশ্ববর্তী স্কুল থেকে ভেসে আসছিল কচিকাঁচাদের আফসোস—কোথায় ধোনি? আজ কি ও খেলছে না! দর্শকসংখ্যাও আদের দিনের চেয়ে কম। আশেপাশের বাড়িগুলোর ছাদেও ভিড় নেই। ওয়েইস শাহ (৫৯) আর পরভেজ রসুলের (৪৫) দেখতে কে-ই বা মাঠে এসেছে। মেরেকেটে যে হাজার খানেক দর্শক ভিড় জমিয়েছিলেন তাঁরা তখন দেখলেন অধিনায়ক ধোনিকে। পেসাররা সুবিধা করতে পারছে না দেখে নিয়ে এলেন দুই স্পিনার কুশল সিংহ (২-৩১) এবং শাহবাজ নাদিমকে। দুই স্পিনারের দাপটে জম্মু ও কাশ্মীরের ইনিংস শেষ ১৮৪ রানে। কোন ম্যাজিকে হঠাৎই মাঠমুখো। কিন্তু ধোনি নামবেন কখন? আগের দিনের মতো এ দিনও দশর্কদের কাছে তাই ভিলেন বনে গিয়ে সৌরভ তিওয়ারিকে শুনতে হল ‘‘হায় হায় তিওয়ারি।’’