হায়দরাবাদের হাইটেক সিটি গাচিবোলিতে ঋতুপর্ণা দাস।—নিজস্ব চিত্র
তর্কাতীত ভাবে ভারতের সফলতম ব্যাডমিন্টন কারখানা গোপীচন্দ অ্যাকা়ডেমির এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রতিভাবান প্লেয়ারের ভবিষ্যৎই সঙ্কটে!
এবং তিনি বাঙালি। হলদিয়ার অষ্টাদশী কন্যা ঋতুপর্ণা দাস। যাঁর গত সাত বছর হায়দরাবাদে কখনও গাচিবোলির অ্যাকা়ডেমিতে, কখনও ইন্দ্রনগরের ওয়ান-রুম ভাড়াবাড়ির জীবনের সম্ভবত গভীরতম দিন আজ। সোমবারই হাইটেক সিটির এক নামী বেসরকারি হাসপাতালে হাঁটুতে অস্ত্রোপচার র্যাঙ্কিং অনুযায়ী ভারতের এক নম্বর ব্যাডমিন্টন প্লেয়ারের (সাইনা-সিন্ধু শুধু আন্তর্জাতিক সার্কিটে খেলায় আইবিএ-র র্যাঙ্কিংয়ে অন্তর্ভুক্ত নন)। যাঁকে সাইনা-সিন্ধুর পরে এ দেশের সেরা মেয়ে প্রতিভা ভাবছেন গোপীচন্দ-প্রকাশ পাড়ুকোন সমেত অনেক প্রাক্তন মহাতারকা।
গত দু’বারের জাতীয় জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন এবং একই সঙ্গে দু’বারের জাতীয় সিনিয়র রানার্স ঋতুপর্ণা এ বছরের গোড়ায় কেরলে জাতীয় গেমসে ডান পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান। সেই নিয়ে খেলে তেলেঙ্গানাকে টিম চ্যাম্পিয়নে সোনা দেওয়া ছাড়া ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হন। তার পরে গোপী বাঙালি ছাত্রীর খেলার প্রবল আকুতি দেখে নিজের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁকে জাতীয় সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার অনুমতি দেন। নিয়ে যান এ মাসের গোড়ায় কলম্বোয় আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ টুর্নামেন্টেও। কিন্তু সেখানে গত ৩ জুন প্রথম রাউন্ডে সুইস প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে প্রথম গেমে ৯-৮ এগিয়ে থাকার সময় একটা হাই স্ম্যাশ মেরে ফলো-আপে বাঁ হাঁটুর মালাইচাকি ঘুরে কোর্টে পড়ে যান ঋতুপর্ণা। ভারতীয় টিম ফিজিওর অধীনে কলম্বোতেই তাঁর এমআরআই হয়। দেখা যায় লিগামেন্টে গ্রেড টু চোট। আর্থোস্কোপি করতেই হবে। ৯ জুন হায়দরাবাদে ফেরা ইস্তক শহরের প্রধান সড়কের উপর দোতলার একটা ঘরে দিনভর ক্যাঁচোরম্যাচোরের মধ্যে একফালি খাটে দিনরাত শুয়ে-বসে কাটছে ছটফটে স্বভাবের টিনএজার বাঙালি ব্যাডমিন্টন তারকার।
‘‘অপারেশনের পর ম্যাচ ফিট হতে গোপীস্যার বলেছেন কমপক্ষে পাঁচ সপ্তাহ। এর মধ্যে কানাডা ওপেন, আরও অনেকগুলো ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্ট মিস করব। কিন্তু আমার লক্ষ্য সামনের বছরের মাঝামাঝি বিশ্বের প্রথম তিরিশের (এখন র্যাঙ্কিং ১৭৫-এর আশপাশে) মধ্যে উঠে তার কয়েক মাস পরে রিও অলিম্পিকে খেলা। আমি জানি বাঙালি ব্যাডমিন্টন প্লেয়ারদের মধ্যে মধুমিতাদি (সিংহ বিস্ত) শেষ বার অলিম্পিক খেলেছেন। আমি সেই রেকর্ডটা ছুঁতে চাই,’’ বলছিলেন ছয় বছর বয়সে প্রথম র্যাকেট হাতে তোলা ঋতুপর্ণা। যিনি মুচকি হেসে বলে দিলেন, ‘‘সাইনাদি গোপীস্যারের অ্যাকাডেমি ছেড়ে চলে গেলেও ওর ম্যাচ থাকলেই এখনও আমরা সবাই মিলে দেখি। অ্যাকাডেমির ক্যাফেটেরিয়ায় আমাদের সঙ্গে বসে গোপীস্যারের মা-ও টিভি দেখেন। গোপীস্যারও নাকি তখন অফিসরুমে বসে টিভি দেখেন শুনেছি। আসলে সাইনাদিকে আমরা সবাই মিস করি।’’