হাবাস আক্রমণে মলিনা নরম, কর্তারা গরম

আটলেটিকো দে কলকাতা কি আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে? প্রশ্ন শুনে মাথা চুলকোতে শুরু করলেন হাবাস।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৪
Share:

টিম হোটেলে পস্টিগা। বৃহস্পতিবার।

আটলেটিকো দে কলকাতা কি আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে?

Advertisement

প্রশ্ন শুনে মাথা চুলকোতে শুরু করলেন হাবাস। ‘‘চ্যাম্পিয়ন কেউ একটা হলেও হতে পারে। তবে গ্রুপ লিগ আর সেমিফাইনাল কিন্তু এক নয়। নক আউট ম্যাচ জিততে অন্য মনোভাব নিয়ে নামতে হয় মাঠে।’’ কূটনীতিকের ঢঙে উত্তর দেওয়ার পর পুণে সিটি কোচের মুখটা কেমন যেন কঠিন হয়ে উঠল।

টুর্নামেন্ট থেকে হাবাসের পুণে বিদায় নিয়েছে। প্রাক্তন কলকাতা কোচের সেই যন্ত্রণার মধ্যেই আইএসএলে এটিকের শেষ চারে ওঠার হার্ডল পেরিয়ে গিয়েছেন জোসে মলিনা। বর্তমান কলকাতা কোচের ছোঁয়া শুধু বাকি প্রাক্তনের আইএসএল ওয়ান-এ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণ। হাবাস যে ধরনের মানুষ, এই অবস্থায় তাঁর খিটখিটে মেজাজটা বেরিয়ে আসবে মোটামুটি জানা ছিল। এবং বুধবার দুপুরে সেটা বেরিয়েও এল বারবার। পেশাদারি মোড়কে হলেও সাংবাদিক সম্মেলনে মলিনার দেশোয়ালি বিপক্ষ স্প্যানিশ কোচের কথা শুনে বোঝা যাচ্ছিল, এটিকে এ বার আইএসএল ট্রফিটা ছুঁয়ে ফেলুন সেটা যেন পছন্দ নয় তাঁর।

Advertisement

শুক্রবার রবীন্দ্র সরোবরে হাবাস বনাম মলিনা মগজাস্ত্রের যুদ্ধ নিছক লিগের বিচারে গুরুত্বহীন। জিতলে লিগ টেবলে কলকাতার দু’নম্বরে শেষ করার সম্ভাবনা ছাড়া মলিনার সামনে নেই অন্য কোনও আলোকবর্তিকা। তা সত্ত্বেও ম্যাচটা বিশেষ মাত্রা পেয়ে যাচ্ছে সাদা শার্টের ‘টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিলেও কলকাতায় হারব না’ মনোভাবের জন্য। যার শুরু হাবাস করে দিয়েছিলেন শহরে পা দেওয়ারও আগে। ম্যাচের আগের দিন ভেনুতে অনুশীলন করা নিয়ে ঝামেলা পাকিয়েছেন। এ দিন আবার বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে স্টেডিয়ামে পুণের অনুশীলনের শুরুতে হাবাসের টিম মিটিং আর শরীর ভাষা দেখলে মনে হবে, যেন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ম্যাচ খেলতে নামবেন চব্বিশ ঘণ্টা পর।

‘সেমিফাইনাল অন্য ম্যাচ হয়’ বলে মলিনার কলকাতা নিয়ে ঘুরিয়ে সংশয়ী হলেও একটা সময় মাদ্রিদের পড়শি ‘বন্ধু’-র বিরুদ্ধে সরাসরি তেমন কিছু গোলাগুলি ছোড়েননি হাবাস। তবে হঠাৎ-ই কামান দেগে দিলেন এটিকে কর্তাদের বিরুদ্ধে। হাবাসকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দু’বছরের ঝলমলে ট্র্যাক রেকর্ড সত্ত্বেও কেন এ বার থাকলেন না কলকাতায়? উত্তর দেওয়ার জন্য একটুও সময় নিলেন না হাবাস। ‘‘আমি ওদের ফোনের জন্য অপেক্ষা করেছি অনেক দিন। তবে এটাও বলছি, এটিকে ছাড়ার পিছনে আর্থিক কোনও কারণ ছিল না।’’ প্রাক্তন কলকাতা কোচের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রাতে নজিরবিহীন ভাবে পাল্টা আক্রমণে এটিকে কর্তারা! দ্রুত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আটলেটিকো দে কলকাতা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, হাবাস ‘মিথ্যে’ বলছেন! এ বার এটিকে-কে কোচিংয়ের জন্য প্রায় ছয় কোটি টাকা চেয়েছিলেন সরাসরি না বললেও ফ্র্যাঞ্চাইজির পক্ষে সেই বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘‘হাবাস যা দাবি করেছিলেন বা শর্ত দিয়েছিলেন তা মানা সম্ভব ছিল না এটিকের।’’

তিন বছরের টুর্নামেন্টে প্রচুর ম্যাচ হয়েছে, কিন্তু কখনও কোনও টিমের প্রাক্তন কোচ বনাম কর্তাদের এ হেন বাগযুদ্ধ দেখেনি আইএসএল। হাবাস পুরনো টিমের শহরে পা রেখে যেটার সলতেতে আগুন ধরালেন!

এর পরে কি মলিনার টিমের আজ মাঠে মনোভাব বদলাবে? আরও বেশি আক্রমণাত্মক হবে এটিকে?

পুণেতে প্রথম সাক্ষাতে হাবাস জিতেছিলেন। শুক্রবার কি আপনার দলের বদলার ম্যাচ? প্রশ্ন শুনে শান্ত চেহারার মলিনা-ও ভ্রু কুঁচকোন! ‘‘কীসের বদলা? ও সব নিয়ে ভাবছি না। ওই তিন পয়েন্ট তো ওদের পকেটে চলেই গিয়েছে। নতুন তিন পয়েন্ট পাওয়ার জন্য কাল খেলব আমরা,’’ বললেন এটিকে কোচ। দেবজিৎ, পস্টিগা, সেরেনো-সহ পাঁচ জনের তিনটে করে হলুদ কার্ড রয়েছে। যাঁরা আর একটি কার্ড দেখলেই সেমিফাইনাল খেলতে পারবেন না। স্বভাবতই সেটা মাথায় রেখে লিগের শেষ ম্যাচে টিম নামাবেন ঠিক করে ফেলেছেন মলিনা। শোনা যাচ্ছে, দেবজিৎ-পস্টিগার মতো অপরিহার্যদেরও বিশ্রাম দেওয়া হতে পারে এই ম্যাচে। ‘‘সেমিফাইনালে আমার টিমের সব ফুটবলারকে সুস্থ আর কার্ড সমস্যা মুক্ত চাই। তার জন্য যা করার করব,’’ বলছেন মলিনা। আর টিমের অন্দরে নাতো-পিয়ারসনদের জন্য কলকাতা কোচের বার্তা, ‘‘তোমাদের সবাইকে সব ম্যাচে খেলাতে পারিনি। কাল জিতে প্রমাণ করো তোমরাও প্রথম টিমে খেলার যোগ্য। দেখাও আমাদের রিজার্ভ বেঞ্চও জিততে পারে।’’

দ্যুতিদের জন্য মলিনার এই টোটকা কতটা কাজে লাগবে সেটা সময় বলবে। তবে হাবাস যেমন ফের কলকাতাকে পিষে ফেলার জন্য মরিয়া সে রকম জেদের বহিঃপ্রকাশ নেই মলিনার গলায়। বরং কথা বললে ধরা পড়ে কলকাতা কোচের চোখ এখন অনেক দূরে— সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল। আইএসএল চ্যাম্পিয়নদের গ্রহে ঢোকার মানসিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তিনি।

হাবাস বা মলিনার কেউই এই ম্যাচটাকে ব্যক্তিগত যুদ্ধের স্তরে নিয়ে যেতে চাননি অন্তত খেলার আগের দিন। তবে বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে ঢোকা এবং বেরোনোর সময় অনেকটা যেন ইচ্ছাকৃত ভাবে কেউ কারও মুখোমুখি হতে চাইলেন না। এড়িয়ে গেলেন একে অপরকে। আজ জিতলে হাবাস সেটা কাকে উৎসর্গ করবেন সেটা জানা হয়নি। তবে মলিনা জিতলে কাকে উৎসর্গ করবেন বলে দিয়েছেন এ দিনই। এবং সেটা মাথা নিচু করে। ‘‘ক’দিন আগে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত চাপেকোয়েন্সের ক্লেভর সান্তানাকে। ও একটা সময় আটলেটিকো মাদ্রিদে খেলত,’’ বলতে বলতে ধরে আসে কলকাতার স্প্যানিশ কোচের গলা।

যুদ্ধে নামার আগে মৃত্যুর কথা! কে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারে? তা সে হাবাস যুদ্ধের যতই দামামা বাজানোর চেষ্টা করুন!

শুক্রবারে আইএসএল:

আটলেটিকো দে কলকাতা-এফসি পুণে সিটি (রবীন্দ্র সরোবর, ৭-০০)।

ছবি: উৎপল সরকার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement