হাইতির দুই বন্ধুর লড়াই যুবভারতীতে

সোমবার বিকেলে মোহনবাগানের সনি আর নেরোকা এফ সি-র ফাবিয়ানকে দেখা গেল পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আঙুল তুলে ‘ভি’ দেখাতে।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:২৮
Share:

প্রতিদ্বন্দ্বী: বন্ধু যখন শত্রু। সনির সঙ্গে ফাবিয়ান। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দুই হাইতিয়ান বন্ধুর চমকপ্রদ নব্বই মিনিটের বৈরিতা কি আজ মঙ্গলবার দেখা যাবে যুবভারতীতে?

Advertisement

সনি নর্দে বনাম ফাবিয়ান হার্ভের লড়াই যদি শেষ পর্যন্ত হয়, তা হলে সেটা আজ অন্য মাত্রা দেবেই সমতল বনাম পাহাড়ের লড়াইয়ে।

সোমবার বিকেলে মোহনবাগানের সনি আর নেরোকা এফ সি-র ফাবিয়ানকে দেখা গেল পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আঙুল তুলে ‘ভি’ দেখাতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কে ‘ভিকট্রি’ নিয়ে মাঠ ছাড়বেন, তা অবশ্য জানা যাবে আজ রাতে। ভেতরের উত্তাপ সরিয়ে রেখে দুই যুযুধান টিমের মিডিও অবশ্য এ দিন একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন আবার নস্টালজিকও হলেন। দেশওয়ালি ভাইয়েরা বিদেশ বিভুঁইতে দেখা হলে যা করে থাকেন।

Advertisement

সনি যেমন অনুশীলন সেরে গাড়িতে ওঠার আগে বলে দিলেন, ‘‘ও আর আমি হাইতিতে একই কোচের কাছে ছোটবেলায় প্র্যাক্টিস করতাম। এক সঙ্গে অনূর্ধ্ব ২৩ হাইতি দলে পাঁচটা ম্যাচও খেলেছি। সিনিয়র টিমে কিছু ফ্রেন্ডলি ম্যাচও।’’ তেমনই আবার ফাবিয়ান বললেন, ‘‘ও আমার বহু দিনের বন্ধু। আমার বাড়ি থেকে সনি বাড়ি দশ মিনিটের রাস্তা। ভারতে খেলতে আসার আগে সনি-র পরামর্শ নিয়েছিলাম।’’

সনি নিজেই সংশয়ে রয়েছেন, কতক্ষণ খেলতে পারবেন। বলছিলেন, ‘‘পুরো ম্যাচ না পারলেও তিরিশ-চল্লিশ মিনিট খেলতে চাই। এই ম্যাচ জেতাটা টিমের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’ গ্যালারিতে বসে শিলং লাজং ম্যাচে দলের পয়েন্ট নষ্ট দেখেছেন, তাই খেলার জন্য মরিয়া। আবার চোট নিয়েও শঙ্কিত। এই আবহে দেশীয় অনুজ ভাইকে সে ভাবে চ্যালেঞ্জ না ছুড়লেও ভাই ফাবিয়ান কিন্তু বলে গেলেন, ‘‘ম্যাচের সময় আমি বন্ধু বলে ওকে জড়িয়ে ধরব না।’’

সনি খেললেও কতক্ষণ খেলবেন সেটা নিয়ে ধাঁধার মতোই অসংখ্য প্রশ্ন এখন সঞ্জয় সেনের শিবির ঘিরে। আনসুমানা ক্রোমা কি শেষ পর্যন্ত কুঁচকির চোট সারিয়ে মাঠে নামতে পারবেন? তিনি নিজেই যে সংশয়ে! স্টপার কিংসলে ওবুমেনেমে লালকার্ড দেখায় খেলতে পারছেন না। কর্নারের সময় কিংসলের মতো বিপক্ষের বক্সে গিয়ে হেড করবেন কে? সনি-ক্রোমা না থাকলে মোহনবাগান কি এক বিদেশি (দিপান্দা ডিকা) নিয়ে জিততে পারবে পাহাড়ি দলের বিরুদ্ধে? মোহনবাগান কোচ এ সব নিয়ে চিন্তিত হলেও এখন সামনে আনতে নারাজ। উল্টে বলে দিচ্ছেন, ‘‘বিদেশি যদি হাতে না থাকে, তা বলে কি কাঁদতে বসব? যারা আছে তারাই খেলবে। এত হইচই করার কিছু নেই। তিন বছর আগে যে বার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম, সে বারও শুরুটা এ রকমই হয়েছিল।’’ টিমের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এ সব অবশ্য কোচেদের বলতেই হয়। সঞ্জয় তার ব্যতিক্রম হবেন কেন?

শিলং-পাহাড়ে ধাক্কা খাওয়ার পর আজ ফের মণিপুরের পাহাড় টপকানোর লড়াই সনি-দিপান্দা ডিকাদের। এবং সেটা যে কঠিন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। শিল্টন পালদের প্রতিপক্ষ নেরোকা এফ সি নতুন এক ধারার বাহক হয়ে হাজির এ বারের আই লিগে। রেনেডি সিংহ, সোসো, গৌরমাঙ্গি সিংহদের মতো অসংখ্য ফুটবলার মণিপুর থেকে এসে ভারতীয় ফুটবলের ক্যানভাসে আলো ছড়িয়েছেন। কিন্তু উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ফুটবলার তৈরির অন্যতম সাপ্লাই লাইন হয়েও মণিপুরের কোনও টিম এত দিন ছিল না আই লিগে। নেরোকা সেই জায়গা নেওয়ার পর নতুন এক মঞ্চ পেয়ে গিয়েছেন ‘সিংহ’-রা। গৌরমাঙ্গি, সুশীল, বসন্ত, সুভাষ, নওবা, গোবিন—বিভিন্ন ক্লাবে খেলা পরিচিত সব ‘সিংহ’-ই হাজির এ বার নেরোকায়। ভূমিপুত্রদের এই ‘হৃদয় দিয়ে খেলা’ ফুটবল-মন্ত্রর উপরই ভরসা করে আছেন দলের কোচ গিফট রাইকেন। তিনি বলছিলেন, ‘‘মোহনবাগান নামটাকেই সমীহ করি। সেখানে ধাক্কা দিতে পারলে যে সেটা গৌরবের হবে, এটাও জানি।’’ রাইকেনের সুবিধা পাঁচ বিদেশিকেই নামাতে পারছেন। যে সুযোগ সঞ্জয়ের নেই। তিন ম্যাচের দুটিতে জিতে এসেছে নেরোকা। নেরোকা কোচ বলে দিলেন, ‘‘সনি ওদের সবথেকে ভয়ঙ্কর ফুটবলার। ওকে রুখতে হবে আমাদের!’’

কিন্তু সবুজ-মেরুন জনতার হার্টথ্রব কি মাঠে নামতে পারবেন আদৌ? নামলেও কতক্ষণের জন্য? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই রাতের ঘুম ছুটেছে মোহনবাগানের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement