জয়ের সঙ্কল্প থাকলেও মোহনবাগানের কাছে এএফসি কাপ দুয়োরানি

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে খেলতে নামার আগের দিন সকালে মোহনবাগান ড্রেসিংরুমের মনোভাবটা ঠিক কেমন ছিল?

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৮
Share:

এএফসি কাপের আগে অনুশীলনে মগ্ন সনি নর্দে। -সুদীপ্ত ভৌমিক

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে খেলতে নামার আগের দিন সকালে মোহনবাগান ড্রেসিংরুমের মনোভাবটা ঠিক কেমন ছিল?

Advertisement

সনি নর্দে- এ এফ সি কাপ নয়, আই লিগ-ই আমার কাছে সব সময়ই আগে। মলদ্বীপের সঙ্গে ড্র করলেই তো গ্রুপ লিগে চলে যাব। আমি চিন্তিত পরের তিনটি লিগ ম্যাচ নিয়ে।

ড্যারেল ডাফি- আই লিগ জেতার জেতার স্বপ্ন নিয়েই তো কলকাতায় আসা। পরপর ম্যাচ। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো ছাড়া কোচের উপায় নেই।

Advertisement

সঞ্জয় সেন—আই লিগ আমার প্রথম পছন্দ। তারপর এ এফ সি। দু’টোতেই ভাল করার চেষ্টা করতে হবে। টিম সেভাবেই বানানো হয়েছে।

দেবাশিস দত্ত (অর্থসচিব)—বেঙ্গালুরু গতবার এএফসি কাপের ফাইনালে উঠে যা প্রচার পেয়েছে তার চারগুণ ফেড কাপ বা আই লিগ জিতে আমরা পেয়েছি। সদস্য-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, তাঁরা এএফসি নিয়ে ভাবিত নয়। তাদের আই লিগ-ফেড কাপ চাই।

তারকা ফুটবলার-কোচ-কর্তাদের মন্তব্যগুলো আতশ কাচের নীচে ফেললে চৌম্বকে যে সত্যটা বেরিয়ে আসছে তা হল, আই লিগের পাশে এ বারও কাতসুমিদের কাছে দুয়োরানি হয়েই উদয় হচ্ছে এশীয় পর্যায়ের এই টুনার্মেন্ট।

কেন শুধুই কুয়োর ব্যাঙ হয়ে পড়ে থাকার ইচ্ছে দেশের অন্যতম সেরা ক্লাবের? কেনই বা সুযোগ পেয়ে আই লিগ জয়ের লক্ষ্যেই আটকে থাকতে চায় সওয়াশো বছর পেরিয়ে আসা নৌকো? বাবুঘাটে বহুদিন নোঙর করে রাখা সবুজ-মেরুন রংয়ের জাহাজটার মতোই কি স্থবির হয়ে থাকতে চায় গঙ্গাপাড়ের ক্লাব? ফুটবলপ্রেমীদের মনের মধ্যে উথলে ওঠা এ সব প্রশ্ন করলেই মোহনবাগান কর্তারা এমন সব পরিসংখ্যান দেন যা শুনলে চমকে যেতে হয়। ‘‘গত বছর রবীন্দ্র সরোবর বা যুবভারতী পাইনি। গুয়াহাটির স্টেডিয়ামে এএফসি-র ম্যাচ সংগঠন করতে গিয়ে প্রায় দেড় কোটির মতো টাকা ক্ষতি হয়েছিল ক্লাবের। কে দেবে সেই টাকা? এ বার তো এএফসি-র ম্যাচ দেখানোর জন্য একটা টিভি চ্যানেলকেও রাজি করাতে পারলাম না। আমাদের কোথায় টাকা দেবে, ওঁরাই পয়সা চায়।’’ স্পনসরহীন ক্লাবের এক কর্তার মুখে কথাগুলো আর্তনাদের মতো শোনায়।

তবুও আজ ‘দ্য সানরাইজার্স’-কে অস্তাচলে পাঠানোর জন্য নিজেদের অস্ত্রে শান দিতেই হচ্ছে সঞ্জয় সেনকে। তবে যথেষ্ট সর্তকতা নিয়ে। শাস্তির খাঁড়া আর জরিমানার ভয়ে ম্যাচ কমিশনারের রক্তচক্ষুর সামনে পড়ে মোহনবাগান কোচকে বাধ্য ছেলের মতো বলতে হচ্ছে, ‘‘মলদ্বীপের টিমটা ভাল। গোল খেয়ে গোল শোধ করেছে। ম্যাচটা আমরা জিততে চাই।’’

মালে-তে প্রথম পর্বের ম্যাচ ১-১ ড্র হওয়ায় সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে মোহনবাগান। পরিস্থিতি যা তাতে জিতলে তো কথাই নেই, ম্যাচ ড্র করলেই পরের পর্বে চলে যাবেন দেবজিৎরা। সোমবার সকালের অনুশীলনে তাই রক্ষণ সংগঠনের উপর জোর দিলেন মোহনবাগান কোচ। সঙ্গে পাল্টা চাপের স্ট্র্যাটেজির কথা ভেবে উইং প্লে আর সেট পিসের প্রস্তুতি। কিন্তু যা টিম নামাচ্ছেন সঞ্জয় তাতে তো দুয়োরানিরই ছায়া! টিমের এক নম্বর গোলদাতা ডাফিকেই টিমে রাখা হয়নি। নিজে খেলতে চাইলেও টিমের সবথেকে ধারাবাহিক কাতসুমি শুরুতে থাকছেন রিজার্ভ বেঞ্চে। তবে সনি আর এডুয়ার্ডো শুরু থেকেই নামছেন। দেবজিৎ গোলে ফিরলেও প্রীতম কোটাল আর প্রণয় হালদার নেই টিমে।

মলদ্বীপের ক্লাব ভ্যালেন্সিয়ার একটা ঐতিহ্য আছে। সে দেশের সর্বকালের সেরা গোলদাতা আলি আসফাকের তারকা হয়ে ওঠা এখান থেকেই। এখন অবশ্য এখানকার ওডাফা ওকোলির মতোই অবস্থা তাঁর। টিম খুঁজছেন। সনিদের বিরুদ্ধে আসফাকের মতো কেউ নেই। তিন জন বিদেশি। তাদের মধ্যে ওমোদু ওয়েস্ট গোল-টোল করেন। প্রথম পর্বে তাঁর গোলেই সমতায় ফিরেছিল ভ্যালেন্সিয়া। এমনিতে দলটা একেবারে নতুন করে গড়া। টিমটার গড় বয়স ছাব্বিশ। মরসুমের প্রথম টুনার্মেন্ট খেলছে। মলদ্বীপ জাতীয় দলের দুই ফুটবলার আছেন টিমে। কোচ আমেদ মুজতবা তা নিয়েই জেতার স্বপ্ন দেখছেন। কোনও রকম ভণিতা না করেই বলে দিলেন, ‘‘সনি বা অন্য কাউকে নিয়ে ভাবছি না। আমরা এখানে জিততে এসেছি। তারুণ্য আর জেদই আমার টিমের অস্ত্র।’’

সরোবর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে যা শুনে কঠিন হয় মোহনবাগান কোচের মুখ। দেখার, হেডস্যারের এই কাঠিন্য, কতটা জেদ হয়ে আছড়ে পড়ে তাঁর ছাত্রদের মধ্যে দিয়ে। আই লিগের ছায়া টপকে সনিরা এএফসি কাপেও রোদ আনতে মরিয়া হন কি না?

মঙ্গলবার এ এফ সি কাপে

মোহনবাগান: ক্লাব ভ্যালেন্সিয়া (রবীন্দ্র সরোবর ৪-০০)।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement