একই সঙ্গে জোড়া স্বস্তি সবুজ-মেরুনের শাসক গোষ্ঠীর।
এক, শুক্রবারই মোহনবাগানের আসন্ন নির্বাচনে বিরোধী গোষ্ঠীর অন্যতম মুখ সুব্রত ভট্টাচার্যের দায়ের করা মামলাকে গুরুত্ব দিতে রাজি হল না কলকাতা হাইকোর্ট।
দুই, এ দিনই আই লিগে লাজং এফসি-র সঙ্গে বেঙ্গালুরু এফসি ১-১ ড্র করে দু’পয়েন্ট খোয়াল। যার মানে এ দিনের পর ১৭ ম্যাচে ৩২ পয়েন্ট হল বেঙ্গালুরুর। মোহনবাগানের সমান। কিন্তু বাগান ১৬ ম্যাচ খেলেছে। দু’দলই আর কোনও পয়েন্ট নষ্ট না করলে লিগের শেষ ম্যাচে মোহনবাগান যদি সুনীল ছেত্রীদের বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে তিন গোলের বেশি ব্যবধানে না হারে তা হলেই চ্যাম্পিয়ন হবে সঞ্জয় সেনের দল। কারণ ঘরের মাঠে বেঙ্গালুরুকে ৪-১ হারিয়েছিল বাগান। যেহেতু দুটো দলের পয়েন্ট সমান হয়ে গেলে হেড-টু-হেডের স্কোরলাইন দেখা হওয়াটা নিয়ম আই লিগে।
সারা দিনটা দেখার পর সন্ধেয় মোহনবাগানের সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসুর মন্তব্য, ‘‘আদালতের রায় একটা মানসিক স্বস্তি দিচ্ছে। আমরা যে অনৈতিক ভাবে নির্বাচনে নেই সেটা আজ প্রমাণ হয়ে গেল।’’ আর টিভিতে বেঙ্গালুরুর ড্র দেখার পর আই লিগ নিয়ে সবুজ-মেরুনের সহ-সচিব বললেন, ‘‘বাকি চার ম্যাচে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই আমরা রাজি নই। সেটা কোচ আর ফুটবলারদের বলেও দেওয়া হয়েছে।’’
বাগান মামলায় এ দিন হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় শুনানিতে জানান, নির্বাচনে কারচুপি হওয়ার সম্ভাবনা বা প্রকৃত ভোটদাতাদের ভোট দিতে না দেওয়ার যে আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে তা কাল্পনিক। বিচারপতি এ দিন সুব্রত ভট্টাচার্যের আইনজীবী অভ্রজিৎ মিত্রকে জানান, প্রাইভেট মেম্বারদের ক্লাবের নির্বাচনে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চাওয়া হবে কেন, তা তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়। অভ্রজিৎবাবু এ দিন আদালতে জানান, ক্লাবের কিছু সদস্য মারা গিয়েছেন তাঁদের ভোট অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। বিচারপতি তখন পাল্টা জানতে চান, সে রকম ভোটের সংখ্যা কত? সুব্রত্র আইনজীবী জানান, ১২ থেকে ১৫-র মতো। যা শোনার পর বিচারপতি জানান, মোহনবাগান ক্লাবের সদস্য সংখ্যা ন’হাজার। সেই সংখ্যার এক শতাংশও নয়, এই সংখ্যাটা। কেবল কাল্পনিক আশঙ্কার কথা বলে মামলার আবেদনকারী নিজের পক্ষে আদালতের কোনও নির্দেশ আদায় করতে পারেন না। যদিও বিচারপতি মামলাটির নিষ্পত্তি করেননি। পরবর্তী শুনানি হবে ১২ জুন।
পরে বাগানের বিরোধী গোষ্ঠীর ফুটবল-সচিব পদপ্রার্থী সুব্রত মিডিয়াকে বলে যান, ‘‘আদালতের রায় মানতেই হবে। কিন্তু কোনও রায়ে তো সবাই খুশি হয় না! তবে আপাতত কোর্ট নয়, ভোট চাই।’’
সুব্রতর মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাগান সহ-সচিবের চিমটি, ‘‘এই রায় সত্যের জয় আনল। যাঁরা রোজ আমাদের বিরুদ্ধে কাদা ছেটাচ্ছিলেন আজ তাঁরা আদালতেই প্রত্যাখ্যাত হলেন।’’
সুব্রত আবার যা শুনে এ দিন হাওড়ায় বিরোধী গোষ্ঠীর সভা থেকে পাল্টা বলে দেন, ‘‘যাঁরা নেতা-মন্ত্রীর হাতে-পায়ে ধরে ভোটের রাশ নিজেদের হাতে রাখতে চাইছেন, তাঁরা জেনে রাখুন, অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাগানে স্বচ্ছ প্রশাসন আনতে একাই লড়ে যাব।’’
এরই পাশাপাশি, এ দিন বেঙ্গালুরু পয়েন্ট খোয়ানোয় সবুজ-মেরুন শিবিরে খানিকটা স্বস্তির পরিবেশ। সন্ধেয় শাসক গোষ্ঠীর সভা ছিল বেলেঘাটায়। সভা থেকেই বেঙ্গালুরু ম্যাচের দিকে নজর রাখছিলেন কর্তারা। ম্যাচ শেষ হতেই হাসি ফোটে তাঁদের মুখে।
যদিও বাগান কোচ সঞ্জয় সেন আজকের এই ড্রয়ের পর তাঁর টিমের স্বস্তি মিলল কি না সেই প্রসঙ্গে ঢুকতে নারাজ। ‘‘বাকি চার ম্যাচে মনঃসংযোগ করতে দিন। আর কোনও কথা নয়।’’