সাড়ে তিনশো কিলোমিটারের গতি থেকে হুইলচেয়ার! পোডিয়ামের উচ্ছ্বাস মুছে নৈঃশব্দ!
তাঁর নাম উঠলেই ভেসে ওঠে বিদ্যুত্-গতিকে ছুটে চলা একটা গাড়ির ছবি। এক বছর আগে পর্যন্ত গতির দুনিয়াই ছিল তাঁর মৃগয়া, তাঁর পেশা, তাঁর নেশা। অথচ সেই মিশায়েল শুমাখারই এখন চলচ্ছক্তিহীন! অসহায় গতিহীনতায় হুইলচেয়ার বন্দি!
ফর্মুলা ওয়ানের সবচেয়ে ক্ষুরধার মস্তিষ্ক এবং সুবক্তা বলে যিনি পরিচিত, তিনি নিজেকে প্রকাশ করতে গিয়ে শব্দ হারিয়ে ফেলছেন। বার বার ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে স্মৃতি! সাত বারের ফর্মুলা ওয়ান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের দৃপ্ত চেহারাটার ক্ষয়িষ্ণু মোড়কের মধ্যে আপাতত বাস অসহায় এক জীবনযোদ্ধার। যাঁর সম্পর্কে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু, প্রাক্তন রেস চালক ফিলিপে স্ট্রেইফ বলছেন, “মিশায়েল উন্নতি করছে। তবে এই উন্নতিটা বড়ই আপেক্ষিক। ভীষণ কঠিন লড়াইয়ের সামনে ও।”
উন্নতি বলতে মাসের পর মাস কোমায় থাকা একজন হুইলচেয়ারে উঠে বসতে পারছেন। চিকিত্সা শাস্ত্রে এটা উন্নতিই। তবে ১৯৮৯-এ ব্রাজিলে প্রি সিজন টেস্টিংয়ে দুর্ঘটনায় নিজেও চলচ্ছক্তি হারিয়ে হুইলচেয়ারবন্দি স্ট্রেইফ জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে খুবই অসহায় লাগছে পঁয়তাল্লিশ বছরের শুমাখারকে।
গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ফরাসি আল্পসে স্কি-দুর্ঘটনার পর প্রায় এগারো মাস কেটে গিয়েছে। এই এগারো মাসে প্রথম কিংবদন্তি চালকের প্রকৃত অবস্থা নিয়ে মুখ খুলেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ কেউ। ৫৯ বছরের স্ট্রেইফ ফরাসি রেডিওয় সাক্ষাত্কারে বলেছেন, “মিশায়েল এখন আমার মতোই পুরোপুরি হুইলচেয়ার নির্ভর। প্যারালাইসড। স্মৃতি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। কথা বলতে গেলে সব জড়িয়ে যাচ্ছে।”
শুমাখার পারিবারিক সূত্রে অবশ্য স্ট্রেইফের বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। শুধু শুমাখারের প্রচারবিদ স্যাবাইন খেম বলেছেন, “উনি যা বলেছেন, সেটা ওঁর মত। আমাদের সঙ্গে উনি যোগাযোগ করেননি।”
স্বামীর দেখভালের সুবিধা হবে বলে বাড়িটাকে প্রায় হাসপাতাল করে ফেলেছেন শুমাখারের স্ত্রী কোরিনা। দু’জনের প্রেম সেই ছোটবেলা থেকে। দুর্ঘটনার পর থেকে অবিরাম স্বামীর সঙ্গে তিনি। সেই কোরিনা এক বার বলেছিলেন, “রেসিংয়ের প্রতি মিশায়েলের আবেগটাই ওর আসল পরিচয়। আমিও ওকে প্রথম চিনেছিলাম রেসিংয়ের জন্যই। এই আবেগটা হারিয়ে ফেললে মিশায়েল বোধহয় আর মিশায়েল থাকবে না!”
গতির প্রতি টান এমনই যে, প্রথম বার ফর্মুলা ওয়ান থেকে অবসর নেওয়ার পরে মোটর বাইক রেসিংয়ে নেমে পড়েছিলেন। দ্বিতীয় বার ফর্মুলা ওয়ান থেকে অবসর নিয়েও সেই গতির টানেই ছুটে গিয়েছিলেন বরফ ঢাকা আল্পসে স্কি করতে।
শেষে গতির অমোঘ আকর্ষণই গতিহীন করে দিল কিংবদন্তিকে!