অাবার ধোনি। চেনা মেজাজে সাংবাদিকদের মুখোমুখি।
মার্কিন মুলুকের ক্রিকেট-চত্বরে কথাটা খুব চলত। ক্রিকেট প্রশাসকদের মধ্যে বলাবলি চলত যে, এক বার ভারত পুরো টিম নিয়ে আসুক। যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেট-আগ্রহ কোথায় পৌঁছতে পারে, পৃথিবীকে বুঝিয়ে দেওয়া যাবে!
স্বপ্ন যে বাস্তব হবে, সম্ভবত ভাবতে পারেননি মার্কিন ক্রিকেট কর্তারা। এক মাস আগেও কেউ জানত না, টিম ইন্ডিয়া যুক্তরাষ্ট্রে যাবে টি-টোয়েন্টি খেলতে। প্রথম বার। যুক্তরাষ্ট্র এখন বুঝছে, স্বচক্ষে দেখছে ধোনি-কোহালিরা তথাকথিত ক্রিকেট-মরুভূমিতে ঢুকে পড়লে কী হয়!
ভারতীয় ক্রিকেটাররা যে হোটেলে আছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ফোন করে শোনা গেল তার সামনে নাকি প্রচুর ভিড়। বিরাট কোহালিকে দেখার আকুতি। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে ছবি তোলার প্রচেষ্টা। সবাই যে ফ্লোরিডাবাসী, তা নয়। শোনা গেল, এঁরা এসেছেন আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্য থেকে। কেউ আটলান্টা। কেউ লস অ্যাঞ্জেলিস। কেউ শিকাগো। কোহালিয়ানা দেখতে আমেরিকা মহাদেশটাই নিজ-নিজ প্রতিনিধি পাঠিয়ে দিয়েছে ফ্লোরিডায়!
সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড রিজিওনাল পার্কে শনিবার ধোনির ভারত মুখোমুখি হবে কার্লোস ব্রেথওয়েটের ওয়েস্ট ইন্ডিজের। টিকিটের দাম একশো, দেড়শো এবং আড়াইশো ডলার। কিন্তু কেউ তোয়াক্কা করলে তো? প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে উন্মাদনা এতটাই যে, পাঁচশো ডলার দিতেও তাঁরা তৈরি। আমদাবাদজাত বিশাল গাদিয়া যেমন। উইকএন্ডের টিকিট ‘বুক’ করে ফেলেছেন। কেন? ভবিষ্যতে নাতি-নাতনিদের বলতে পারবেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বচক্ষে প্রথম বিরাট-দর্শনের সময় মাঠে ছিলেন!
মেহফিল হলে যা হয়। ক্রিকেট ঘিরে, ক্রিকেটের পারিপার্শ্বিকে। বোর্ড কর্তাদের অধিকাংশ ঢুকে পড়েছেন ফ্লোরিডায়। সিএবি ও এনসিসির দুই প্রতিনিধি গৌতম দাশগুপ্ত এবং বিশ্বরূপ দে পৌঁছে গিয়েছেন। শুক্রবার মার্কিন সময়ে রাতের দিকে ঢুকে পড়ার কথা বোর্ড প্রেসিডেন্ট অনুরাগ ঠাকুরের। সন্ধেয় ব্রোওয়ার্ড কাউন্টি মেয়রের ডিনারে দু’টো টিমের সঙ্গে কর্তারাও নিমন্ত্রিত।
অচেনা উইকেটে কুম্বলে, কোহালিকে নিয়ে ধোনি। ছবি টুইটার
ক্রিকেটীয় ব্যাপারস্যাপারও যথেষ্ট আকর্ষণীয়। ক্রিকেট পরিকাঠামো থেকে ক্রিকেট-যুদ্ধ— সবই। ধোনি বা কুম্বলে ভাবতেও পারেননি, এতটা উন্নত ক্রিকেট পরিকাঠামো যুক্তরাষ্ট্রে পাবেন। ধোনি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেও দিয়েছেন, ‘‘সুযোগ-সুবিধে বিভিন্ন জায়গায় যা পাই, এখানেও আছে। স্টেডিয়ামটা বড় নয় হয়তো। কিন্তু প্লেয়িং এরিয়া নিখুঁত।’’ ক্যাপ্টেন কুলের আরও সংযোজন, ‘‘ক্রিকেটের এটা নতুন যাত্রা। কিছু আন্তর্জাতিক টিম খেলে গিয়েছে এখানে। টি-টোয়েন্টি লিগও হয়েছে। ক্রিকেটের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভাল বাজার। এখানে উপমহাদেশের প্রচুর মানুষ থাকেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজে ক্রিকেট দেখতে হত। এখন থেকে ওঁরা নিজেদের দেশেই দেখতে পাবেন।’’
ভারতীয় কোচ অনিল কুম্বলে বলে দিচ্ছেন, তিনি নিশ্চিত যে দু’টো টি-টোয়েন্টিতেই গ্যালারি ভরে যাবে। ‘‘যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের একটা নতুন যুগ শুরু হয়ে গেল। প্রচুর ভারতীয় টিম এর পর আসবে এখানে।’’
যুক্তরাষ্ট্র বলে নয়। যে টি-টোয়েন্টি শনিবার হতে যাচ্ছে তা বিশ্বের যে প্রান্তেই হোক না কেন, স্ট্যান্ড ফাঁকা থাকত না। ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিরাট কোহালি বনাম ক্রিস গেইল। সুনীল নারিন বনাম এমএস ধোনি। সবচেয়ে বড় কথা, ওয়াংখেড়েতে বিশ্বকাপ টি-টোয়েন্টি সেমিফাইনালের পর এই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দেখা হচ্ছে দু’টো টিমের। ওয়াংখেড়ের সেই রাতে কোহালি-শৌর্য কেড়ে নিয়েছিলেন লেন্ডল সিমন্স। এই দু’টো ম্যাচ কাপ-সেমিফাইনালের প্রতিশোধ মঞ্চ হতে পারে না। কিন্তু জিতলে জ্বলুনিতে একটু প্রলেপ দেওয়া যেতেই পারে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে টিম শনিবার নামবে, তারা বোধহয় টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বজয়ী টিমটার চেয়েও শক্তিশালী। চার ছক্কায় ইডেনে দেশকে বিশ্বকাপ দেওয়া ব্রেথওয়েট ক্যাপ্টেন। ডোয়েন ব্র্যাভো, সিমন্স, আন্দ্রে রাসেল, নারিন, কায়রন পোলার্ড, কে নেই! সর্বোপরি, গেইল। যাঁর ফ্লোরিডার মাঠে গড় মাত্র ১৩৮!
নতুন দেশের নতুন ক্রিকেট-বাজারে ক্রিকেট যুদ্ধটাও তাই একদম নতুন। সদ্যসমাপ্ত টেস্ট সিরিজের জীর্ণ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এই টিমের সঙ্গে মেলানো যায় না। অত ভাবার দরকার কী? টেস্ট ক্যাপ্টেন জেসন হোল্ডারের শনিবারের টিমে সম্ভবত জায়গা হচ্ছে না!