জোড়া গোলের নায়ক।
ইস্টবেঙ্গল ৩ (ডুডু-২, র্যান্টি-পেনাল্টি)
ভারত এফসি ০
শেষ পর্যন্ত ছক পাল্টাতেই বাজিমাত সতৌরির। সাঁইত্রিশ দিন পরে ইস্টবেঙ্গলের গুমোট শিবিরে আবার ফুরফুরে বাতাস। চৈত্রের তপ্ত সময়েও।
র্যান্টি-ডুডু স্ট্রাইকার জুটির ঠিক পিছনেই উইথড্রন ফরোয়ার্ড লোবো। যে গোয়ান ফুটবলারকে প্রথম দলে নতুন জায়গায় নামিয়ে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছিলেন লাল-হলুদের নতুন কোচ। চোট সারিয়ে অভিজ্ঞ মেহতাবও ফিরেছিলেন দলে। ভারত এফসি-র রক্ষণাত্মক কৌশলের মেরুদণ্ড যেটা সেই পাঁচ জনের মাঝমাঠের দৌরাত্ম থামাতে।
এই দু’টো পরিবর্তনেই ইস্টবেঙ্গল যেন খোঁচা খাওয়া বাঘে রূপান্তরিত বুধবার পুণের বালেওয়াড়ি স্টেডিয়ামে।
অথচ ম্যাচ শুরুর আগেই লাল-হলুদ ড্রেসিংরুমে এ দিন এসেছিল টিমের নিয়মিত ফুটবলার জোয়াকিম আব্রাঞ্চেসের বাবার মৃত্যুর খবর। তার চেয়েও আশঙ্কার ছিল, গুমোট ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমের আরও মানসিক চাপে পড়ে যাওয়া।
সেই চাপ কাটিয়ে র্যান্টি-ডুডু-লোবোর ত্রিমুখী আক্রমণে তিন-তিনটে গোল। ডেম্পো ম্যাচের পর আবার যেন বহমান লাল-হলুদ। যে ইস্টবেঙ্গলকে দেখে স্টেডিয়ামে বসা করিম বেঞ্চারিফার কপালের বলিরেখার ভাঁজগুলো চওড়া হয়ে গেল। করিমের পুণে এফসির সঙ্গেই তো পরের ম্যাচে এই মাঠেই মুখোমুখি হবে ইস্টবেঙ্গল। সতৌরির ছেলেদের মেপে নেওয়ার পর ফোনে পুণের মরক্কান কোচ মেনে নিলেন, ‘‘একা ডুডু বা র্যান্টি নয়। পুরো ইস্টবেঙ্গল টিমটাই আজ ভাল খেলেছে। আমাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।’’
মাঠে এ দিন মেহতাব, লোবো, খাবরাদের দেখে মনে হচ্ছিল দাঁত, নখ বার করা এক একটা লাল-হলুদ বাঘ। রহিম নবিদের শিকার করার জন্য ছটফট করছে! গোড়া থেকেই গৌরমাঙ্গী, ওমর জারুন, ববি হাসেলদের রক্ষণের বাঁধ ভেঙে একের পর এক আক্রমণের ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগল। একটা সময় স্টুয়ার্ড ওয়াটকিসের দলের দশ জন মিলে নিজেদের বক্সে নেমে আসছিলেন ডিফেন্স করতে।
উপেক্ষিত লোবোই এ দিন সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা নিলেন ইস্টবেঙ্গলকে জয়ের সরণিতে ফেরানোর পিছনে। প্রথমার্ধে ডুডু ওমাগবেমির করা দুটো গোলই লোবোর দুরন্ত পাস থেকে। ডুডুও গোলের খরা কাটিয়ে নিজে যেমন স্বস্তি পেলেন, তেমনই স্বস্তি দিলেন কোচ আর টিমকে। লিও বার্তোসও প্রথম দলে ফিরে মাঝমাঠে বিপক্ষের নবি, লেস্টার ফার্নান্ডেজদের স্বাভাবিক খেলার সামনে যেন তাঁদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। আর কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর ফুটবলে অভ্যস্ত ভারত এফসি যখনই আক্রমণে উঠেছে, তাদের সামনে প্রাচীর হয়ে উঠছিলেন মেহতাব। সব মিলিয়ে বহু দিন পর ইস্টবেঙ্গল এ দিন ‘টিম ইস্টবেঙ্গল’ হয়ে খেলল। সাফল্যও পেল।
তবে প্রচণ্ড চাপের থেকে বেরিয়ে এটা যে তাঁদের কাছে হাঁফছাড়া, পুরোপুরি বাঁচা নয় সেটাও বোধহয় বুঝতে পারছেন ডুড়ুরা। খেলার পর ফোনে এ দিনের জোড়া গোলের নায়ক বললেন, ‘‘গোল করেছি, টিম জিতেছে, ভাল লাগছে। তবে একটা জয় দিয়ে কী হবে? পরের পুণে এফসি ম্যাচ জিততে হবে। তার পর আরও ম্যাচ রয়েছে।’’ অধিনায়ক খাবরার গলাতেও বাস্তবের সুর। ‘‘আই লিগে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। একটা ম্যাচ জিতে উচ্ছ্বাসের কিছু নেই।’’
যদিও চব্বিশ ঘণ্টা আগেও ‘একটা জয়ই টিমের চেহারা বদলে দেবে’—এমনটাই দাবি করে আসছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ থেকে ফুটবলাররা প্রত্যেকে। ‘চেহারা’ বদলাল কি না সেটা শনিবারই জানা যাবে। পুণেতেই। করিম বনাম সতৌরি ধুন্ধুমার যুদ্ধ তো সে দিনই !
ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, রবার্ট, সুসাক, অর্ণব, খাবরা, মেহতাব, লালরিন্দিকা (রফিক), লোবো (বলদীপ), বার্তোস (রাজু), ডুডু, র্যান্টি।