দুই নায়ক। মনোজ তিওয়ারি ১০১ বলে ১৩০। বীরপ্রতাপ সিংহ ৫১ রানে ৬ উইকেট।
ঝলসে উঠল মনোজ তিওয়ারির ব্যাট। বল হাতে প্রতাপ দেখালেন তরুণ পেসার বীর প্রতাপ সিংহও। এক জনের বিধ্বংসী ১৩০ আর অন্য জনের একারই ছ’উইকেটের দাপটে বাংলা জাতীয় ওয়ান ডে টুর্নামেন্ট বিজয় হাজারে ট্রফির সেমিফাইনালে। এই নিয়ে শেষ আট বারের মধ্যে সাত বারই।
ম্যাচের আগের দিন দু’দলের কোচই যেমন বলেছিলেন, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, বৃহস্পতিবার রাজকোটের স্টেডিয়ামে বাংলা-বিদর্ভ কোয়ার্টার ফাইনাল ঠিক তেমনটাই হল। বাংলা ১৭ রানে জিতল ঠিকই, কিন্তু টস হারার পরেও বিপক্ষের সামনে ৩১৮-র পাহাড় গড়া সত্ত্বেও কেন শেষের দিকে তাদের এত লড়তে হল, ম্যাচের পর সেই প্রশ্ন যেন বেশি করে উঠছে।
যে প্রশ্নে অবশ্য বাংলার ক্যাপ্টেন আর কোচ দুই মেরুতে। লক্ষ্মীরতন শুক্ল ফোনে যেখানে বলছেন, “এ রকমই ক্লোজ ম্যাচ হওয়ার কথা। কারণ দু’দলেরই ভাল ব্যাট করার মতো উইকেট ছিল। সেটাই হয়েছে।” কোচ অশোক মলহোত্র আবার বলছেন, “আমাদের ফিল্ডিং আজ ভাল হয়নি। তিনটে ক্যাচ পড়েছে (দিন্দা, সুদীপ ও দেবব্রত)। সে জন্যই বিদর্ভ এত রান করার সুযোগ পেল। ওরা আর একটু হলেই আমাদের ধরে ফেলেছিল!” দলের ফিল্ডিং যে ভাল হয়নি, তা অবশ্য স্বীকার করে নিচ্ছেন লক্ষ্মীও। তবে তিনি এই মুহূর্তে কোয়ার্টার ফাইনালের নেতিবাচক দিকগুলো ভুলে সেমিফাইনালের দিকে তাকাতে চান। রবিবার আমদাবাদে বাংলাকে নামতে হবে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিদর্ভের চেয়েও অনেক কঠিন কর্নাটক অথবা মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে।
এ দিনের ম্যাচ দেখতে উপস্থিত ছিলেন অন্যতম নির্বাচক বিক্রম রাঠৌড়। জাতীয় নির্বাচকদের বৈঠকে যাঁর গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ওয়াকিবহাল মহল তাচ্ছিল্যের হাসি হাসেন। তাই তাঁর সামনে মনোজ তিওয়ারির ১০১ বলে ১৩০-এর ইনিংসটা কতটা দামি, সেটা একটা বড় প্রশ্ন বইকি। বিধ্বংসী ইনিংসের পর বিশ্বকাপের সম্ভাব্য তালিকায় তাঁর জায়গা হওয়া উচিত কি না, এই প্রশ্ন শুনে এ দিন মনোজ বললেন, “সে তো নির্বাচকরা ভাববেন। আমার কাজ আমি করেছি।” বাংলার প্রাক্তন কোচ পরশ মামরের বর্তমান দলের বোলারদের চার বার বাউন্ডারি পার করিয়ে এবং ন’বার সোজা গ্যালারিতে পাঠানোর পর মনোজের প্রতিক্রিয়া, “ঘরের মাঠে তো আর আমরা এমন ব্যাটিং স্বর্গ পাই না। এখানে যখন পেলাম, তখন বড় রান করাই উচিত ছিল। সুযোগটা কাজে লাগাতে পেরে আমি খুশি। বাকিটা আমার হাতে নয়।”
রাজকোটের মতো তাঁর পয়া শহরে, যেখানে চার বছর আগে রঞ্জিতে ২৩৩ আর সাত বছর আগে ইরানি ট্রফিতে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন, সেখানে এ দিন বিদর্ভ বোলারদের বারবার স্টেপ আউট করে উড়িয়ে দেন মনোজ। পাল্টা ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় দলে খেলা এস বদ্রীনাথ এবং ওপেনার ফয়েজ ফজলও সেঞ্চুরি পান। কিন্তু মনোজের মতো বিধ্বংসী মেজাজ ছিল না তাঁদের ব্যাটিংয়ে। বাংলার স্কোরবোর্ডেও দুটো সেঞ্চুরি জ্বলজ্বল করত যদি না ফর্মে থাকা ওপেনার-উইকেটকিপার শ্রীবত্স গোস্বামী ৮৪-তে আউট হয়ে যেতেন। টুর্নামেন্টে পাঁচ ম্যাচে চারশোর উপর রান করা এই ওপেনারের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ১৪০ যোগ করেন মনোজ।
কিন্তু রান তাড়া করতে নামা বিদর্ভ যখন ৩৬ ওভারে ২১১-২, তখন বাংলা শিবিরে দুশ্চিন্তার মেঘ। ঠিক ওই সময় বিপক্ষের ব্যাটিং পাওয়ারপ্লে-তে বীরপ্রতাপ বদ্রীদের লকগেট খুলতে না পারলে বাংলার জয়ের স্বপ্ন আর মনোজের সেঞ্চুরি হয়তো সেখানেই চুরমার হয়ে যেত। বছর বাইশের তরুণ পেসার টুর্নামেন্টে শিকারসংখ্যায় (১২) দিন্দাকেও (১১) ছাড়িয়ে গেলেন। ম্যাচের পর বীর প্রতাপ বলেন, “ওই সময় শুধু উইকেট নেওয়ার কথাই ভাবছিলাম। বোলিংয়ে ভেরিয়েশন এনেই সেটা সম্ভব হল।”
বীরের প্রতাপের দিনে বাংলার সবচেয়ে অভিজ্ঞ পেসার দিন্দা অপ্রত্যাশিত ভাবে নির্বিষ। দুটো ক্যাচ নিলেন অবশ্য। তবে সহজ একটা ক্যাচ ফেলেও। তবে তাঁর দলের তরুণ বোলারের মহাসাফল্যে খুশি লক্ষ্মী বলেন, “লাইন-লেংথটা নিখঁুত রেখেই সাফল্য পেল বীরপ্রতাপ। ওই সময় এ রকম বোলিংই দরকার ছিল।” বিদর্ভ ২১১-২ থেকে আচম্বিত ২৭৩-৬ হয়ে যাওয়ার পরেই ম্যাচে চালকের আসনে বসে পড়ে বাংলা।
অন্য ম্যাচে গোয়াকে মাত্র এক রানে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠল পূর্বাঞ্চলের আর এক দল ওড়িশাও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা ৩১৮-৫ (মনোজ ১৩০, শ্রীবত্স ৮৪, ঠাকুর ২-৭৭)
বিদর্ভ ৩০১-৮ (ফজল ১০৫, বদ্রী ১০০, বীরপ্রতাপ ৬-৫১)