পঞ্চাশ পেরোতেই উৎসব শুরু

শহরের রিংটোন ‘মাহি মার রহা হ্যায়’

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ব্যাট একবার চলতে শুরু করলে কী হয়, গোটা ভারতবর্ষ জানে। বেশি দূর পিছোতে হবে না। এই ইংল্যান্ড সিরিজের আগে ব্রেবোর্নের ওয়ার্ম আপ ম্যাচটাই মনে করা যাক।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

রাঁচী শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪০
Share:

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ব্যাট একবার চলতে শুরু করলে কী হয়, গোটা ভারতবর্ষ জানে। বেশি দূর পিছোতে হবে না। এই ইংল্যান্ড সিরিজের আগে ব্রেবোর্নের ওয়ার্ম আপ ম্যাচটাই মনে করা যাক। অধিনায়ক ধোনির শেষ ম্যাচ। যেখানে তাঁর ব্যাটিং বিক্রম দেখে নিরাপত্তার কাঁটাতারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মাঠে ছিটকে ঢুকে পড়েছিলেন এক ভক্ত। স্রেফ মহানায়কের পা-টা ছোঁবেন বলে।

Advertisement

মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ব্যাট একবার চলতে শুরু করলে রাঁচীর কী হয়, তা-ও এত দিনে সবার জানা উচিত। এমএসডি-র শহর যে তার প্রিয় আত্মজের দর্প দেখে মোহিত হয়ে পড়বে, উন্মাদনার স্রোতে নিজেদের ভাসিয়ে দেবে, এ তো স্বাভাবিক, খুব স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু বৃহস্পতিবার যে এমএসডি-র বায়োপিকের একটা লাইন গোটা রাঁচী শহরটারই রিংটোন হয়ে যাবে, ভাবা যায়নি।

“ভাবছিলাম শুরুটা ভাল হলে কত রান তুলতে পারতাম! প্রথমে ব্যাটিং ভাল হয়নি। কিন্তু তার পরে দুই গ্রেট উঠে দাঁড়াল।
২৫-৩ থেকে ৩৮১ তোলা অবিশ্বাস্য। ইংল্যান্ড ইনিংসের সময় জানতাম যে উইকেট পাব, কিন্তু আমরা কঠিন সময় বল করছিলাম।
শেষে বেশ ভাল ভাবেই জিতেছি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে এই সিরিজ জয় খুব দরকার ছিল। সেরা ওপেনিং জুটি এ বার ঠিক করতে হবে।
অশ্বিন আর জাডেজা টেস্ট সিরিজে দুর্দান্ত খেলার পরে আজও ভাল বল করল। ওরা উইকেটগুলো না পেলে জানি না ম্যাচটা কোথায় গিয়ে শেষ হতো।
আমি বলব, আমরা নিজেদের ক্ষমতার ৭৫ শতাংশে এসেছি।” —বিরাট কোহালি

Advertisement

ধোনির হাফসেঞ্চুরি হয়ে গিয়েছে তখন। টিভিতে ছাত্রের খেলা দেখছিলেন ধোনির ছোটবেলার প্রথম কোচ কেশব বন্দ্যোপাধ্যায়। দেখা গেল, ধোনির হাফসেঞ্চুরি হওয়ামাত্র ফোন তুলে বন্ধুবান্ধবদের নম্বর ঘোরানো শুধু করে দিলেন। বক্তব্য একটাই। কথা একটাই।

মাহি মার রহা হ্যায়!

দেখলে, শুনলে ধোনির বায়োপিকের সেই কিশোরকে মনে না পড়াটাই আশ্চর্যের। যেখানে হরমু মাঠে ধোনি-বিক্রমের কথা গোটা শহরকে জানাতে যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল গোটা রাঁচী। সাইকেলে চেপে, মুখে একটাই কথা নিয়ে— মাহি মার রহা হ্যায়! বৃহস্পতিবারের রাঁচী ঠিক যেন সেই দৃশ্যের রিপিট টেলিকাস্ট দেখল। সাইকেল শুধু নেই। কিশোর শুধু নেই। কিন্তু বার্তাটা সেই একই।

‘‘ধোনির ক্যাপ্টেন্সি ছাড়া নিয়ে অনেক কথাবার্তা হচ্ছিল। ও কিছুটা মানসিক চাপেও ছিল। কিন্তু আজ সব চাপ হঠিয়ে ব্যাট করল। ফ্রি মাইন্ডে খেলল ইনিংসটা,’’ বলছিলেন কেশব। ধোনির আর এক বাঙালি কোচ চঞ্চল ভট্টাচার্য় আবার বললেন, ‘‘আমি তো আগেই বলেছিলাম যে, ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দিলে পুরনো ধোনিকে দেখা যাবে। বলে দিচ্ছি, এখন থেকে এ রকম ধোনি ধামাকাই দেখা যাবে।’’

এ দিন কিছুটা হলেও ফাঁকা ছিল রাঁচীর রাস্তাঘাট। আসলে বহু দিন পর সেঞ্চুরি এল শহরের ছেলের। এ জিনিস ছাড়া যায় নাকি? ধোনির বাল্যবন্ধু শ্রীমন্ত লোহানি যেমন। ছোট থেকে প্রিয় মাহির খেলা দেখেন। এ দিনও মিস করেননি। বলছিলেন, ‘‘গাওস্কর বলেছিলেন ধোনি খেলা ছেড়ে দিলে তিনি ধর্নায় বসতেন। কেন কথাটা বলেছিলেন, বোঝা গেল।’’ শুধু একটাই যা দুঃখ। ধোনি সেঞ্চুরি করলেন। গোটা ছয়েক ছক্কা হাঁকালেন। কিন্তু ব্যাট থেকে একটাও হেলিকপ্টার শট বেরোল না। সেন্ট্রাল কোল ফিল্ডে ধোনির এক সময়ের অধিনায়ক আদিল হুসেন বলছিলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, একটা হেলিকপ্টার শট দেখব। সব হল। কিন্তু কবে যে ওই শটটা ফিরবে!’’

সে যখন ফেরার ফিরবে। কিন্তু এত দিন পর যে ধোনি-ধামাকা আবার দেখা গেল, এবং তা যদি এখন থেকে প্রায়ই চলতে থাকে, কম কিছু হবে?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement