রেলে চাকরি নিয়ে মুম্বই চলে গিয়েছিলেন তনুকা
ঝিলিক। বয়স ১৯-২০। হাসিখুশি মেয়েটাকে হুগলির রঘুনাথপুরের সামন্তপাড়ার বাসিন্দারা একডাকে চিনতেন এই নামেই। মিষ্টি স্বভাব আর সাঁতারের জন্য পাড়ায় বেশ পরিচিত তো বটেই, বেশ জনপ্রিয়ও ছিলেন। জাতীয় স্তরের সাঁতার তাঁকে এনে দিয়েছিল তিনটে পদক। সে সূত্রেই বছর দুয়েক হল রেলে চাকরি নিয়ে মুম্বই চলে যান। সেখান থেকেই যখন গত বৃহস্পতিবার ঝিলিকের মৃত্যুর খবর আসে, প্রথমটা শুনে বিশ্বাস করতে পারেননি কেউই। গতকালই খবরের হেডলাইনে উঠে এসেছে জাতীয় পদক জয়ী বাংলার সাঁতারু তনুকা ধাড়ার অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর। কিন্তু তাঁদেরই আদরের ঝিলিকের কী করে এই পরিণতি হল সেটাই ভেবে পাচ্ছে না সামন্তপাড়া।
গত সোমবার পর্যন্ত রঘুনাথপুরের বাড়িতেই ছিল তনুকা। সে দিন একটি টেলিভিশন চ্যানেলের শুটিংয়ে হইহই করে কেটেছিল পরিবার এবং পাড়ার সঙ্গে। ওই প্রোগ্রামে চিফ গেস্ট হিসাবে তনুকাকে বাছা হয়েছিল। সে সব সেরে গত মঙ্গলবারই ফের মুম্বই ফিরে যান। বুধবার রাত ন’টা নাগাদ রুটিন মতো মায়ের সঙ্গে কথাও হয়েছিল ঝিলিকের। তার পর ঠিক কী হল এখনও পরিষ্কার নয় কারও কাছেই।
ছুটি কাটানোর ফাঁকে
গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তনুকাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। ফোন সুইচ অফ থাকায় তাঁর কলিগদের ফোন করেন তনুকার পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা গিয়ে দেখেন তনুকার ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ। দরজা ভেঙে উদ্ধার হয় তনুকার ঝুলন্ত দেহ। খবর পেয়েই মুম্বই পাড়ি দেন তনুকার বাবা অমলেশ ও মা শুক্লা।
জীবনের ট্র্যাকে থেমে গেল তনুকা
বাংলার প্রতিভাবান এই ডাইভার জিমন্যাস্টিক্সের হাত ধরে খেলার জগতে পা রাখেন। সাফল্যের সঙ্গে এগিয়েও যাচ্ছিলেন তনুকা। কিন্তু বাধ সাধে একটি দুর্ঘটনা। পায়ের হাড় ভেঙে যাওয়ায় জিমন্যাস্টিক্স ছাড়তে বাধ্য হন। তবে খেলা ছাড়েননি। কোচের উপদেশেই সাঁতার বেছে নেন বছর কুড়ির ওই তরুণী। সাঁতারেও সমান ভাবে সফল হয়েছিলেন তনুকা। জাতীয় স্তরে তিনটি পদকও ছিল তাঁর ঝুলিতে।
আরও পড়ুন: জাতীয় পদক জয়ী বাংলার সাঁতারু তনুকা ধাড়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু মুম্বইয়ে
হুগলির রঘুনাথপুরের বাসিন্দারা এখনও বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না তাঁদের ঝিলিক আর নেই। তনুকাদের প্রতিবেশী প্রভাত ময়রা বললেন, ‘‘আমাদের এলাকার গর্ব ছিল ঝিলিক। স্থানীয় এসবি কবাডি ক্লাব থেকে জিমন্যাস্ট কেরিয়ার শুরু করে।’’ শুধু যে খেলাধূলায় ভাল ছিলেন তা-ই কিন্তু নয়। তনুকার প্রাইভেট টিউটর নিরুপম নস্কর বলেন, ‘‘খেলাধূলা সেরে রাত আটটার সময় পড়তে আসত। কিন্তু কখনও ওকে ক্লান্ত হতে দেখিনি। পড়শুনায় ভীষণ ভাল ছিল। মাঝে মধ্যে রবিবারও পড়তে চলে আসত। রেলে চাকরি পাওয়ার পর মুম্বইয়ের একটি কলেজে ভর্তি হয়েছিল। ছুটিতে যখন এখানে আসত পড়তে চলে আসত আমার কাছে।’’
পদক নিয়ে তনুকা
সুরজমুল জালান গার্লস কলেজে আক্যাউন্টেন্সির দ্বিতীয় বর্ষের অর্নাসের ছাত্রী ছিলেন তনুকা। মুম্বইয়ে পেয়িং গেস্ট থাকতে থাকতেই ফ্ল্যাট কেনারও স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর দাদু প্রদ্যুত পাল বললেন, ‘‘ঝিলিক তো ২৬ লক্ষ টাকা দিয়ে একটা ফ্ল্যাট বুকও করেছিল। কিন্তু ওর স্বপ্ন আর পূরণ হল না।’’
গতকালই মুম্বই পুলিশ জানিয়েছে, তনুকার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তার রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।
ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে