ধাক্কা: চিলে ম্যাচে লাইন্সম্যানকে গালিগালাজ করে সাসপেন্ড আর্জেন্তিনার লিওনেল মেসি। ফাইল চিত্র
২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির বিরুদ্ধে হার।
টানা দুটো কোপা ফাইনালে চিলের বিরুদ্ধে হার।
আর্জেন্তিনা জার্সিতে লিওনেল মেসি মানেই হতাশা আর যন্ত্রণার কোলাজ।
বার্সেলোনার হয়ে একের পর এক রূপকথার অধ্যায়ের সাক্ষী থেকেছেন মেসি। কিন্তু আর্জেন্তিনার হয়ে ছবিটা সম্পূর্ণ উল্টো। রাশিয়া বিশ্বকাপকে ধরা হচ্ছে মেসির দেশের হয়ে ট্রফি জেতার শেষ সুযোগ। কিন্তু পরিস্থিতি যা দাঁড়াল তাতে এখন রাশিয়া বিশ্বকাপে পৌঁছতে হলে মেসিকে ছাড়াই তাঁর সতীর্থদের লড়াই করতে হবে।
বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে চিলে ম্যাচে দু’জন লাইন্সম্যান মার্সেলো ফান গাস ও ডিউসন সিলভার সঙ্গে অভব্য আচরণ করায় চার ম্যাচ সাসপেন্ড হলেন মেসি। তাও আবার বলিভিয়ার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ কোয়ালিফায়ার শুরুর ছ’ঘণ্টা আগে।
বলিভিয়ার মাঠ বরাবর বিপক্ষের কাছে চ্যালেঞ্জ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১ হাজার ফিট উচ্চতায় মাঠটা থাকায় অনেক সময় বিপক্ষ ফুটবলাররা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার উপরে আবার এই মাঠেই ২০০৯-তে ১-৬ হেরেছিল আর্জেন্তিনা। সেই অপয়া মাঠে খেলতে নামার আগে আর্জেন্তাইন শিবির ব়ড়সড় ধাক্কা খায় যখন ফিফার তরফ থেকে জানানো হয় চিলে ম্যাচে লাইন্সম্যানকে গালিগালাজ করায় ‘আর্টিকেল ৫৭’ অনুযায়ী আর্জেন্তিনার পরের চারটে কোয়ালিফায়ার থেকে সাসপেন্ড মেসি। বলিভিয়া ম্যাচ থেকেই মেসির শাস্তি শুরু হচ্ছে।
বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে আর্জেন্তিনা খুব একটা ভাল জায়গায় নেই। কনমেবল টেবলের তিন নম্বরে থাকলেও আর্জেন্তিনার সঙ্গে চার, পাঁচে বসে থাকা কলম্বিয়া ও ইকুয়েডরের পয়েন্ট পার্থক্য খুব একটা নয়। বলিভিয়া ছাড়াও উরুগুয়ে, ভেনেজুয়েলা ও পেরুর মতো বিপক্ষের বিরুদ্ধেও খেলতে পারবেন না এল এম টেন। মেসি যখন ফিরবেন তখন আর একটা ম্যাচ বাকি থাকবে। তাও আবার শক্তিশালী ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে। প্রথম চারে না থাকতে পারলে সরাসরি বিশ্বকাপে পৌঁছতে পারবে না আর্জেন্তিনা।
চিলে ম্যাচে মেসির গোলে জয় তুলে আনে আর্জেন্তিনা। কিন্তু ম্যাচ চলাকালীন ভিডিওতে ধরা পড়ে ফান গাসকে গালিগালাজ করছেন মেসি। ম্যাচ শেষে ডিউসন সিলভাকেও খারাপ কথা বলেন এল এম টেন। রেফারির রিপোর্টে মেসির বিরুদ্ধে অভিযোগ না জানানো হলেও ফিফা শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি কড়া শাস্তি নেয় রাজপুত্রের বিরুদ্ধে।
চার ম্যাচ সাসপেনশন ছাড়াও প্রায় ৯,৫৩০ ইউরো জরিমানাও করা হয়েছে মেসিকে। বলিভিয়া ম্যাচের আগে আর্জেন্তিনা কোচ এডগার্ডো বাউজা বলেছিলেন, ‘‘মেসি খুব গুরুত্বপূর্ণ দলের জন্য। কিন্তু দল ওর একার ওপরে নিভর্রশীল নয়।’’ কোচ এটা বললেও পরিসংখ্যান বলছে অন্য কথা। রাশিয়া বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে মেসিকে ছেড়ে মাত্র একটা ম্যাচ জিতেছে আর্জেন্তিনা।
ফিফার সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারছে না আর্জেন্তাইন ফুটবল ফেডারেশন। আর্জেন্তিনা দলের সচিব জর্জ মিয়াদসকুই জানিয়ে দিলেন, মেসির শাস্তির বিরুদ্ধে আবেদন জানানো হবে। ‘‘অবশ্যই আমরা আবেদন জানাবো। মেসি খুব হতাশ। ও বলিভিয়া ম্যাচে খেলতে চেয়েছিল। ওর খেলা উচিত ছিল। কিন্তু কী আর করা যাবে। আমাদের হাতে কোনও শক্তি নেই,’’ বলছেন জর্জ।
শতবর্ষের কোপা ফাইনালে হারের পর মেসি অবসর ঘোষণা করেছিলেন আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে। অসংখ্য ফুটবলভক্তের আবেদন ও কোচ এডগার্ডো বাউডার সঙ্গে আলোচনার পরে নিজের মত পাল্টে নেন মেসি। মেসি বহু বার বলেছেন, আর্জেন্তিনার হয়েও কিছু জিততে চান। তবে এই সাসপেনশনের পরে মেসির বিশ্বকাপ পৌঁছনোর রাস্তাটা একটু হলেও কঠিন হয়ে গেল।