সিএবি-র নির্বাচনী বৈঠকে মধ্যমণি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। অন্যান্যদের মধ্যে আছেন (বাঁ দিকে) টিমের বোলিং কোচ রণদেব বসু ও (ডান দিকে) নির্বাচক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
লক্ষ্মীরতন শুক্লকে বঙ্গ অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেওয়া হল।
লক্ষ্মীরতন শুক্লকে আবার অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেওয়া হলও না।
হেঁয়ালি ছেড়ে সোজাসুজি বলা যাক। অগস্টের শেষাশেষি শ্রীলঙ্কা সফরে যে বাংলা টিম যাচ্ছে, তার অধিনায়ক হিসেবে পূর্বতন অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্লকে বেছে নিল সিএবি। কিন্তু আসন্ন রঞ্জি মরসুমে লক্ষ্মীই যে বাংলা অধিনায়ক থাকছেন, সেটা মোটেও নয়। বাংলা অলরাউন্ডারকে অধিনায়ক বাছা হল শর্তসাপেক্ষে। শ্রীলঙ্কায় তাঁকে ও তাঁর টিমকে পারফর্ম করতে হবে। সেখানে লক্ষ্মী যদি ভাল করতে পারেন, বাংলা অধিনায়ক হিসেবে থেকে যাবেন। যদি না পারেন, ভাবা হবে অন্য কাউকে।
প্রাক্-রঞ্জি প্রস্তুতিতে দু’টো টিমকে দু’জায়গায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল সোমবারের সিএবি বৈঠকে। লক্ষ্মীর নেতৃত্বে একটা টিম যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। যেখানে মনোজ তিওয়ারি, অশোক দিন্দা, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, শ্রীবৎস গোস্বামীরা আছেন। আর একটা টিম বুচিবাবু টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছে সৌরাশিস লাহিড়ীর নেতৃত্বে। যেখানে জুনিয়রদের প্রাধান্য বেশি। বলা হল, দু’টো টিমের যারা টুর্নামেন্টে ভাল খেলবে, তাদের মধ্যে থেকে রঞ্জি ট্রফির টিম নির্বাচন হবে। আর শ্রীলঙ্কা সফরের পারফরম্যান্স ঠিক করে দেবে রঞ্জিতে বাংলা অধিনায়ক কে। বৈঠক শেষে সিএবি যুগ্ম সচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও বলে গেলেন, ‘‘এটা শুধু শ্রীলঙ্কা সফরের ক্যাপ্টেন হল। এ বার ওখানে যে ভাল করবে, তাকেই রঞ্জি ক্যাপ্টেন বেছে নেওয়া হবে।’’
এ বার প্রথম থেকে বাংলা অধিনায়ক নিয়ে একটা ধোঁয়াশা ছিল। লক্ষ্মী না মনোজ— কে ক্যাপ্টেন হবেন, তা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই একটা জল্পনা চলছিল। কিন্তু আপাতত লক্ষ্মী আরও একটা সুযোগ পাচ্ছেন। শুধু ভাল অধিনায়কত্বই নয়, শ্রীলঙ্কা সফরে বোলার লক্ষ্মীকেও দেখতে চাইছে সিএবি।
‘‘সবই করব। আমি ঠিক করে ফেলেছি যে এ বার কোনও রকম বিতর্ক, ঝামেলার মধ্যে থাকব না। পুরো মরসুমটাকে ছকে ফেলেছি। আরও মন দিয়ে শুধু ক্রিকেটটা খেলব,’’ সন্ধেয় বলছিলেন বাংলা অধিনায়ক। কিন্তু এই যে তাঁর মতো সিনিয়র ক্রিকেটারের যে শর্তসাপেক্ষ নির্বাচন হল, সেটা কী ভাবে দেখছেন? এ বার লক্ষ্মীর জবাব, ‘‘ওটা আমি শুনিনি, তাই বলতে পারব না। শুধু এটা বলব যে, বাংলার হয়ে খেলাটা আমার কাছে কাজ নয়। দায়িত্ব। আর উপভোগ করছি বলেই খেলছি এখনও। যে দিন সেটা করব না, নিজেই চলে যাব। কাউকে বলতে হবে না। আমার ফার্স্ট রাউন্ড বা লাস্ট রাউন্ড কী হবে, সেটা আমিই ঠিক করব।’’
এ দিনের বৈঠকে অধিনায়ক নির্বাচন নিয়ে দ্বিমত, বিতর্ক কিছু ছিল না। প্রশ্ন উঠল বরং অন্য একটা ব্যাপার নিয়ে। নির্বাচনী বৈঠকে নির্বাচক প্রধান রাজু মুখোপাধ্যায়ের গরহাজিরা নিয়ে। চার নির্বাচকের মধ্যে বৈঠকে এ দিন উপস্থিত ছিলেন দু’জন। বাকি দুইয়ের মধ্যে একজন শহরের বাইরে বলে আসতে পারেননি। কিন্তু নির্বাচক প্রধান শহরে থেকেও অনুপস্থিত থেকে যান। ফোন করা হলে রাজু বললেন, ‘‘শারীরিক অস্বস্তির জন্য যেতে পারিনি। আসলে জ্বর-জ্বর লাগছে।’’ কিন্তু পরে আরও একটা কারণের কথা শোনা গেল। বলা হল, তাঁকে গাড়ি পাঠানো হয়নি বলে নাকি আসতে রাজি হননি নির্বাচক প্রধান। কেউ অবশ্য সরকারি ভাবে এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। এবং যে কারণেই হোক, এত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী বৈঠক শেষ পর্যন্ত করতে হল নির্বাচক প্রধানের উপস্থিতি ছাড়াই।
আরও একটা ব্যাপার নিয়ে কেউ কেউ পরে সিঁদুরে মেঘ দেখলেন। সেটা— বাংলা অফস্পিনার সৌরাশিস লাহিড়ীকে শ্রীলঙ্কার টিমে না রাখা নিয়ে। বলা হচ্ছে, এটা ভবিষ্যতের কোনও ইঙ্গিত কি না? কারণ, শ্রীলঙ্কার টিমে প্রজ্ঞান ওঝা (যিনি সাসেক্সের হয়ে খেলতে গেলে পরিবর্ত পাঠানো হবে) বাদেও দু’জন বঙ্গ স্পিনার আছেন। আমির গনি ও প্রদীপ্ত প্রামাণিক। যাঁরা সম্প্রতি ভাল পারফর্ম করেছেন। সৌরাশিস সেখানে জায়গা পেলেন না। তাঁকে যেতে হচ্ছে বুচিবাবু।