ক্ষুব্ধ: সমর্থকদেরও সচেতন হতে হবে, বলছেন সঙ্গকারা। —ছবি এএফপি।
বর্ণবৈষম্যের পাশাপাশি অনেক ধরনের বিদ্বেষের শিকার হন খেলোয়াড়েরা। আর এই বিদ্বেষ-মুক্ত পৃথিবী গড়ার জন্য পড়তে হবে ইতিহাস। কোনও সংশোধিত ইতিহাস নয়। যে ইতিহাস সবার জন্য লেখা, সেটাই পড়ার অনুরোধ করেছেন প্রাক্তন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক কুমার সঙ্গকারা।
বৃহস্পতিবার ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের পক্ষে কথা বললেন সঙ্গকারা। সেখানেই প্রাক্তন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক জানিয়েছেন, মূল্যবোধ ছাড়া শিক্ষা যতটা অপ্রয়োজনীয়, একতরফা ইতিহাসও ততটাই ভয়ঙ্কর। এক ক্রিকেট ওয়েবসাইটকে সঙ্গকারা বলেছেন, ‘‘আপনি কতটা শিক্ষিত, তার উপরে কিছুই নির্ভর করে না। এমন অনেক শিক্ষিত ব্যক্তিকে দেখেছি, যারা ভয়ঙ্কর সব কাজ করেছে।’’
মূল্যবোধ ছাড়া শিক্ষা যে অন্যের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, তা সাফ জানিয়ে দিলেন প্রাক্তন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান। সঙ্গকারা বলেছেন, ‘‘তোমার শিক্ষার মধ্যে যদি নৈতিক মূল্যবোধই না থাকে, তার কোনও মূল্য নেই। প্রকৃত শিক্ষিত হয়েই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুক্তি দেওয়া যায়। ভুল ধারণার বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়।’’
বর্ণবৈষম্য অবশ্যই এক রকমের বিদ্বেষ। সমাজে আরও অনেক ধরনের বিদ্বেষের শিকার সাধারণ মানুষ ও খেলোয়াড়েরা। সব ধরনের বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সঠিক ইতিহাস জানার অনুরোধ সঙ্গকারার। বলছিলেন, ‘‘বিদ্বেষ শুধুমাত্র বর্ণভিত্তিক হয় না। অনেক ধরনের বিদ্বেষ দেখা যায় সমাজে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের সন্তানদের সঠিক ইতিহাস শেখানো উচিত। যে ইতিহাস ভালকে ভাল বলে, খারাপকে খারাপ বলতে শেখায়। স্যানিটাইজ় করা ইতিহাস পড়িয়ে কোনও সমস্যার সমাধান হবে না।’’
সঙ্গকারা আরও বলেন, ‘‘যখনই আসল ইতিহাস জানতে শুরু করবে, আচরণেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। প্রত্যেককে বুঝতে হবে, এটাই সভ্যতার শেষ নয়। এখনও অনেক কিছু শিখতে হবে, জানতে হবে। এ ভাবে যে দিন সমাজ বুঝতে শিখবে, সে দিন থেকে আর কোনও বিদ্বেষ থাকবে না।’’
ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম টেস্ট শুরু হওয়ার আগে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মাইকেল হোল্ডিং। তিনিও অনুরোধ করেছিলেন, সঠিক ইতিহাস পড়ানোর। বলেছিলেন, ‘‘যে অত্যাচার করে, তারাই ইতিহাস লেখে। অত্যাচার যারা সয়, তারা ইতিহাস লেখার সুযোগ পায় না।’’ সঙ্গকারার বক্তব্যেও ফুটে উঠেছে এ ধরনের মনোভাব। যদিও তিনি বলে গেলেন, ‘‘এক দিনের মধ্যে সব বদলাবে না। এক মাস প্রতিবাদ করে পরের মাসেই ভুলে গেলাম, তা করলে চলবে না।’’
সমর্থকদের বিনোদনের জন্যই ক্রিকেট। কিন্তু সমর্থকেরাই যদি দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কাজ করেন, সেটা কি আদৌ গ্রহণযোগ্য? জোফ্রা আর্চারের প্রতি সর্থকদের একাংশের বিদ্বেষে এই প্রশ্ন উঠছে। সঙ্গকারার কথায়, ‘‘দর্শকেরাই আমাদের উত্থানের মঞ্চ তৈরি করে দেন। কিন্তু তাঁরা তো আর সমাজের বাইরে নন। দায়িত্ববোধ এড়িয়ে গেলে চলবে কী করে?’’
শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন অধিনায়কের অনুরোধ, ‘‘বিশ্বজুড়ে বহু খেলোয়াড় অথবা দলকেই দেখা যায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। অনেক ছবি দেখলেই মনে হয় বিষয়টি সাজানো। মানুষ হিসেবে অন্যের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য। জেনে বুঝে কারও ক্ষতি করা উচিত নয়।’’