স্মরণীয়: সেই মুহূর্ত। ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের পরে সতীর্থদের কাঁধে ওয়াংখেড়ে প্রদক্ষিণ সচিনের। ফাইল চিত্র
বিরাট কোহালির এই ভারতীয় দলের ইংল্যান্ড থেকে বিশ্বকাপ জিতে আসার ক্ষমতা রয়েছে। বলছেন, তিরাশি সালে ইংল্যান্ড থেকেই ভারতে প্রথম বিশ্বকাপ নিয়ে আসা অধিনায়ক কপিল দেব। এবং, তাঁর সেই মন্তব্যের সঙ্গে একমত কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত, রজার বিনি, সৈয়দ কিরমানির মতো তিরাশির সতীর্থরাও।
মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে তিরাশির সেই ঐতিহাসিক জয়ের স্মৃতিচারণে আয়োজিত ব্রিটানিয়া সংস্থার এক অনুষ্ঠানে কপিল বলে দিলেন, ‘‘কোহালির এই দলটা টেস্টে বিশ্বের এক নম্বর। এ বার বিশ্বকাপও জিততে পারে। তবে তার জন্য বিশ্বাস রাখতে হবে নিজেদের ক্ষমতার উপর।’’ হরিয়ানা হারিকেন এর পরেই উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, দেহের ৭০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ার পরেও বাঁচবই, এই বিশ্বাস থাকায় কোনও কোনও মানুষ বেঁচে যায়। আবার কেউ কেউ এই মনের জোরটা না থাকার জন্যই ৩০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ার পরেও বেঁচে ফেরে না।’’ কপিল বলে চলেন, ‘‘বর্তমান ভারতীয় দলে বিরাট সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়। বিশ্বকাপ জিতবই, এই আত্মবিশ্বাসটা ওকে দলের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে চোট-আঘাত। ছত্রিশ বছর আগে কাপ জেতার সময় এই কাজটাই আমি করেছিলাম। বিরাটও সেটাই করুক।’’
মঙ্গলবারই ছিল ভারতের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের অষ্টম বর্ষপূর্তি। ২০১১ সালের ২ এপ্রিল ওয়াংখেড়েতে কাপ জিতেছিলেন ধোনি, যুবরাজরা। এই বিশেষ দিনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কপিল আসন্ন বিশ্বকাপে বিরাটদের দলের চার নম্বর কে হতে পারেন তা নিয়েও সম্পূর্ণ অন্য মত প্রকাশ করলেন। দেশের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার এই প্রশ্নে বলছেন, ‘‘বর্তমান ভারতীয় দলে এক থেকে সাত নম্বর— সবাই যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতে পারে। এটা নিয়ে গত কয়েক দিনে প্রচুর কথা কানে এসেছে। আমি একটাই কথা বলব, বিশ্বকাপ জিততে গেলে দলে ম্যাচউইনার চাই। আমার দলে যেমন ম্যাচউইনার ছিল মোহিন্দর অমরনাথ, সন্দীপ পাটিল, মদনলালেরা।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
প্রত্যয়ী: কোহালিদের প্রতি ভরসা রাখছেন কপিল। নিজস্ব চিত্র
চার নম্বর নিয়ে সোজাসাপ্টা বক্তব্য পাওয়া গেল কপিলের বিশ্বজয়ী দলের আগ্রাসী ওপেনার কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তের থেকে। আট বছর আগে ধোনির দলের বিশ্বকাপ জয়ের সময় যিনি ছিলেন জাতীয় নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান। বললেন, ‘‘কপিল ঠিকই বলেছে। ম্যাচউইনার দরকার। বিরাটদের দলে উপরের দিকে, মাঝের দিকে, শেষের দিকে ভাল ব্যাটসম্যান রয়েছে। বোলিংটাও দুর্দান্ত। কিন্তু চার নম্বরে এমন একজনকে দরকার যে মাঠে নেমে একাই ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা ধরে।’’ কে হতে পারেন সেই ব্যাটসম্যান? জানতে চাইলে শ্রীকান্তের জবাব, ‘‘আমি নির্বাচক হলে চার নম্বরে ঋষভ পন্থকে নিতাম। ও ম্যাচউইনার। ছেলেটা ইংল্যান্ডে গত বছর টেস্টে সেঞ্চুরি করেছে। ওখানকার পরিবেশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। বিরাটের উচিত ওকে উৎসাহ দিয়ে মন খুলে খেলতে দেওয়া। কপিল যে রকম আমাকে খেলতে দিত। সেটা যদি বিরাট করতে পারে, তা হলে ঋষভ ন’টা ম্যাচের মধ্যে অন্তত তিনটে জিতিয়ে ফিরবে।’’
পাশ থেকে তখনই কপিল জানিয়ে দেন, ঋষভকে এখনও অনেকটা পথ যেতে হবে। কপিলের কথায়, ‘‘কোনও ক্রিকেটার বোলিং ও ব্যাটিং করলেই অলরাউন্ডার হয় না। কিপারও অলরাউন্ডার হতে পারে। তিরাশিতে আমাদের দলে ছিল এমনই একজন উইকেটকিপার। যে ব্যাটটাও করতে জানত। কিরমানি ছিল আমাদের সেই কিপার-অলরাউন্ডার।’’ কপিল যোগ করছেন, ‘‘বিরাটের দলে সেই উইকেটকিপার-অলরাউন্ডারটা হল মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে শেষ চার দশকে সেরা তিন কিপার-অলরাউন্ডার কুমার সঙ্গকারা, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও ধোনি।’’ এখনকার তরুণদের নিয়ে বলতে গিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ঋষভ পন্থ, সঞ্জু স্যামসনরা হয়তো সম্প্রতি ভাল খেলছে। কিন্তু ধোনি যে উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে গিয়েছে, সেখানে পৌঁছতে গেলে ঋষভকে অনেকটা পথ হাঁটতে হবে এখনও।’’
উঠে আসে আসন্ন বিশ্বকাপে ভারতীয় বোলিং নিয়ে প্রশ্নও। ভুবনেশ্বর কুমার, যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামির পরে ইংল্যান্ডে ভারতীয় দলের চতুর্থ পেসার কে হতে পারেন? তিরাশি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী রজার বিনি বলে দেন, ‘‘বিরাটরা যেন মাথায় রাখে, ইংল্যান্ডের পরিবেশ, আবহাওয়ায় সিম এবং সুইং বোলারেরা সফল হবে। সেক্ষেত্রে উমেশ যাদবের কথা ভাবা যেতেই পারে। কারণ, ওর বলে গতি আছে। হাতে সুইংও আছে। বিপক্ষ ব্যাটসম্যানেরা সমস্যায় পড়তে পারে।’’ তবে তাঁর সতর্কবার্তা, ‘‘ইংল্যান্ডে কিন্তু স্পিনাররা ম্যাচ জেতাবে না। সেখানে চমক দেবে সুইং বোলারেরা। বিশ্বকাপের দল বাছার সময় এটা মাথায় রাখতে হবে।’’
সব শেষে প্রশ্ন সেই পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে। এ বার শ্রীকান্তদের থামিয়ে দলনেতা কপিল কথা বলেন। তাঁর কথায়, ‘‘পাকিস্তানের সঙ্গে বিশ্বকাপে ভারতের খেলা উচিত কি না তা বিশেষ কোনও ক্রিকেটার ঠিক করতে পারে না। এটা দেশের ব্যাপার। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি যদি বলে খেলতে হবে না, তা হলে সেটাই মেনে চলতে হবে আমাদের।’’