আলেসান্দ্রো দেল পিয়েরো কি কাল আপনার আঠারো জনের দলে থাকবে?
প্রশ্ন শুনে ঢোঁক গিললেন দিল্লি ডায়নামোসের কোচ হার্ম ফান ভেলডোভেন। তারপর তেতো মুখ করে বললেন “টিম লিস্টে ওর নাম কাল থাকবে। আগের দু’টো ম্যাচে ওর পেটে সমস্যা ছিল তাই খেলেনি।”
কোচের সঙ্গে বিশ্বকাপজয়ী তারকার ঝামেলা চলছে বহুদিন। জানা গিয়েছে, মাঝে আইএসএলের সবথেকে দামি ফুটবলার ফিরে যেতে চেয়েছিলেন দেশে। কিন্তু দিল্লি টিম ও টুর্নামেন্টের ইউএসপি কমে যাবে বলে কোনওক্রমে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে ইতালিয়ান ফুটবলের ডার্লিংকে।
‘ঠোক দেঙ্গে গোল’ এই স্লোগানে ছয়লাপ নেহরু স্টেডিয়াম। যে ভূবনজয়ী স্ট্রাইকারের গোলের কথা মাথায় রেখে দিল্লি এই ক্যাচলাইন তৈরি করেছিল, সেই দশ কোটির দেল পিয়েরো এখন তাই শুধুই ‘শো পিস’! দেওয়াল জুড়ে পোস্টারে আছেন। মাঠে নেই। হোটেলে বসে ইউ টিউবে খেলা দেখেন আর পাঁপড় খান। টাকা রোজগার করতে গিয়ে ইতালির সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলদাতার কী হাল! দিল্লি টিমে তাঁর জায়গা কে কেড়ে নিয়েছে জানেন? গোয়ার ফ্রান্সিস ফার্নান্ডেজ! উইম কোভারম্যান্সের ভারতীয় দলে যিনি নিয়মিত সুযোগই পেতেন না!
আটলেটিকো দে কলকাতা বনাম দিল্লি ডায়নামোসের ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে। হাবাসের টিম জিতলে সেমিফাইনালে ওঠা কার্যত নিশ্চিত। আর দিল্লি জিতলে ঢুকে পড়বে শেষ চারে। দিল্লি কোচ সরাসরিই বললেন, “আমরা শেষ চারের দৌড়ে রয়েছি। পরপর দু’টো ম্যাচ জিতেছি। আমাদের সঙ্গে লিগ টেবিলের চার নম্বর টিমের ফারাক মাত্র দু’পয়েন্টের।” তিনি ভরসা করছেন গোলের মধ্যে থাকা ডেনমার্কের ম্যাডস জুনকরের উপর। মাঝমাঠে গুস্তাভো এবং হানস মুলডারের বল সাপ্লাইয়ের উপর। আর কলকাতার সেরা স্কিমার লুই গার্সিয়ার পিছনে দিল্লির বেলজিয়াম কোচ লাগাচ্ছেন পর্তুগালের হেনরিক ডিনিসকে। যিনি এ দিনই আবার বলে গেলেন, “গার্সিয়াকে নিয়ে ভাবতে যাব কেন? আমার কাজ সামনে যে পড়বে তাঁকে আটকানো। তা সে গার্সিয়াই হোক বা অন্য কেউ।” দেখতে শান্ত চেহারার ডিনিসের চ্যালেঞ্জের অভিমুখ দেখলেই বোঝা যায়, দু’টো জয়ের পর কী ভাবে গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে প্রায় তলিয়ে যাওয়া দিল্লি।
এটা যে কলকাতা টিম বোঝেনি তা নয়। আর বুঝেছে বলেই কাধে চোট সত্ত্বেও স্টপারে অর্ণব মণ্ডলকে নামানো হচ্ছে। কারণ পুরো টিমের মধ্যে একমাত্র অর্ণব-হোসেমি স্টপার জুটিই এখনও পর্যন্ত সবথেকে ধারাবাহিক। এ দিন টিম হোটেলে এক্স রে করতে যাওয়ার সময়ও দেখা গেল বেহালার ছেলে রীতিমতো ব্যথায় কাতর। দিল্লির জুনকরকে আটকানোর জন্য তবুও নামবেন, ঠিক করেছেন অর্ণব। টিম হোটেলের লাঞ্চে দেখা গেল লুই গার্সিয়া আর ফিকরু তেফেরা এক টেবলে বসে। গল্প করছেন। যে দৃশ্য স্বস্তি দিচ্ছে পুরো টিমকে। সম্ভবত দু’জনই বুঝে গিয়েছেন শেষ চারে যাওয়ার জন্য এই ম্যাচ জেতা কত জরুরি। ইগো সমস্যা দূরে সরিয়ে তাই দু’জনেই বাস্তবের মাটিতে।
মাত্র আধঘণ্টার জন্য নেহরু স্টেডিয়াম বরাদ্দ। ক্ষোভে তাই এ দিন দলকে নিয়ে অনুশীলনই করাতে নামেননি আন্তোনিও হাবাস। তবে টিম হোটেলে দু’ঘণ্টা জিম করিয়ে চাঙ্গা রেখেছেন দলকে। টিমে কিছু পরিবর্তন হচ্ছে নিশ্চিত। তবে সেটা কোথায় তার কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। টিম হোটেলে দাঁড়িয়ে এক ফুটবলার বললেন, “অনুশীলন হলে একটা আন্দাজ করা যেত। সেটা যখন হয়নি তখন কী হবে কোচ ছাড়া কেউ জানে না।” কার্ড সমস্যা মিটিয়ে নাতোর ফেরাটা স্বস্তি দিচ্ছে কলকাতাকে। যুবভারতীতে দিল্লিকে হারাতে পারেনি হাবাসের টিম। কলকাতা কোচ বলেও দিলেন, “ওই ম্যাচ আর কালকের ম্যাচ অনেক ফারাক। দু’দলের শক্তিরই অনেক পরিবর্তন হয়েছে।”
পরিবর্তনের পর কে কোথায় দাঁড়িয়ে সেটা দেখার জন্য আজ নেহরু স্টেডিয়ামের গ্যালারি তাই মুখিয়ে থাকবে।