রিং লিডারের সঙ্গে। যে আমাদের অনুপ্রেরণা। —রবিচন্দ্রন অশ্বিন
শহরে বিজয়ার দশমী শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে দশেরা উৎসবের ইনদওরে আরও একটা উৎসবপালন হল মঙ্গলবার। টেস্ট ক্রিকেটের সিংহাসনে ভারতের বসার স্বীকৃতি অর্জনের উৎসব। যখন ভারতীয় টেস্ট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহালির হাতে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরের স্বীকৃতিস্বরূপ স্মারকদণ্ড তুলে দেন সুনীল গাওস্কর। তার পরে হোলকার স্টেডিয়ামে প্রচারমাধ্যমকে যা বলেছেন কোহালি...
• ভারতের বিশ্বসেরা হতে পারার মূল কারণ
আমাদের দলের মধ্যে একাত্মতা এক নম্বর হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ। এই ইন্ডিয়া টিমের বন্ডিং দারুণ।
• বিরাট মন্ত্র— ইতিবাচক ক্রিকেট
ইনদওরে আমাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের ধরন দেখলেই বোঝা যাবে এই ব্যাপারটা। ব্যাটসম্যানদের একমাত্র টার্গেট ছিল চতুর্থ ইনিংসে আমাদের বোলারদের যত বেশি সম্ভব ওভার বল করার সুযোগ করে দেওয়া। একইসঙ্গে স্কোর বোর্ডে যত বেশি সম্ভব রান তুলে রাখা, যাতে আমাদের বোলাররা আক্রমণাত্মক হতে পারে। কোনও সময়ই যাতে ডিফেন্সিভ ফিল্ড সাজাতে না হয়।
• তিনটে টেস্টই চার দিনে জেতা প্রসঙ্গে
টিমের প্রত্যেকে মাঠে নিজেকে পুরোপুরি প্রকাশ করতে পেরেছে। ছেলেদেরকে পরিষ্কার বলা ছিল, পরের ম্যাচে দলে নিজের জায়গা নিয়ে চিন্তা না করে খোলা মনে খেলতে। ম্যাচের অবস্থা যেমনই থাক, ব্যাটসম্যান বুঝলেই শট খেলবে। বোলার উইকেট তুলতে অ্যাটাক করবে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে। তিনটে টেস্টেই ব্যাপারটা আমাদের পক্ষে সুন্দর খেটে গিয়েছে।
• মাঠে ভারতীয় টিমের পুরোপুরি প্রকাশ করার সেরা উদাহরণ
ইনদওরে চেতেশ্বর পূজারাকে সেঞ্চুরি ইনিংসে নিউজিল্যান্ড ফাস্ট বোলারের মাথার উপর দিয়ে বোলার্স ব্যাক ড্রাইভ মারতে দেখা গিয়েছে কয়েকবার। আমার মতে এটাই মাঠে আমাদের ছেলেদের নিজেদেরকে পুরোপুরি প্রকাশ করার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।
• রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বিধংসী ফর্ম প্রসঙ্গে
অশ্বিনের পরিসংখ্যান তো এখন একটা আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে! আমরা মাঠে বা ড্রেসিংরুমে বা টিম হোটেলের কোথাও ওকে ক’টা ম্যান অব দ্য সিরিজ হল সেই সংখ্যাটা মনে করিয়ে দিই না। তবে নিজেরা মনে রাখি। আর নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে চলি চার..পাঁচ...ছয়....! অ্যাশ একজন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন। সব কৃতিত্ব ওকে দেব। আর আশা করব সামনের লম্বা হোম টেস্ট সিরিজ জুড়ে ও এ রকমই ফর্মে থাকবে।
• ৩-০ সিরিজ জয়ে সতীর্থদের অবদান প্রসঙ্গে
এটা একটা যথার্থ সিরিজ জয়। ক্রিকেট দলগত খেলা এবং আমরা গোটা সিরিজ দলগত ভাবে খেলেছি। যাঁরা আমাদের প্রশংসা করে লিখেছেন, সমালোচনা করে লিখেছেন— সবার সব প্রশ্নের জবাব আমরা তো মাঠেই দিচ্ছি। আমরা বুঝি আমাদের কোনও ফাস্ট বোলার যদি চার ওভার প্রাণপাত করে বল করে দু’টো উইকেট নিতে পারে, সেটাই একটা টেস্ট ম্যাচে বড় ব্যাপার। সে কারণে আমার কাছে এই সিরিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হচ্ছে প্রথম টেস্টে জাডেজার ব্যাটিং। দ্বিতীয় টেস্টে সাহার দু’টো অপরাজিত হাফসেঞ্চুরি। ইডেনে শামির বোলিং স্পেল। ওদের এই প্রত্যেকটা অবদান টিমের জন্য বিরাট বড়। সাধারণত বড় বড় ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা আবার এই সব ছোট ছোট অবদানগুলোর দিকে বেশি ফোকাস করি। কারণ বড় ব্যাপারগুলো নিয়ে তো এমনিতেই সর্বত্র আলোচনা চলবে।
• সন্তান হাসপাতালে থাকাকালীন শামির ইডেন পারফরম্যান্স নিয়ে
মহম্মদ শামিকে টিমের প্রত্যেকে ভালবাসে। সবার সঙ্গে ওর খুব ভাল সম্পর্ক। কিন্তু একইসঙ্গে শামি এমনই একজন খেলোয়াড়, যার জীবনে যা-ই ঘটুক আপনি জানতে পারবেন না। আমি সে দিন জানতামই না যে, ওর বাচ্চা মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি! ও পরে ব্যাপারটা আমাদের বলেছিল। তার আগে সে দিনও শামি মাঠে সবার মতোই নেমেছিল। আর পুরোটা উজাড় করে দিয়েছিল।
• ঘরের মাঠে ‘অতি বন্ধু’ পিচ নিয়ে হরভজনের খোঁচার পাল্টা (অবশ্যই নাম না করে ঘুরিয়ে)
আমাদের জিততে পিচের দরকার পড়ে না। উইকেটের চেয়ে আমরা নিজেদের ক্ষমতার উপর বেশি বিশ্বাস রাখি।
• ইনদওরে নিজের ডাবল সেঞ্চুরি প্রসঙ্গে
ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছে হাত ছুড়ে যে সেলিব্রেশনটা করেছিলাম সেটা আমাদের ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারকে ধন্যবাদ জানাতে। ওই দিনের দু’দিন পরেই ওর চুয়াল্লিশতম জন্মদিন ছিল। যার মানে মঙ্গলবার যে দিন আমরা নিউজিল্যান্ডকে ৩-০ হারালাম। আসলে ও সব সময় আপনাকে সাহস জোগাবে যে, তুমি তো ভালই ব্যাট করছ। বড় রান ঠিক পাবে। নিজের জোন-এ থাকো। মানসিক এই সাহস জোগানোর ব্যাপারটা প্লেয়ারকে বিরাট সাহায্য করে। কোনও কোনও সময় প্লেয়ার এমন অবস্থায় থাকে যে, নানা বিষয়ে খুব বেশি চিন্তা করে ফেলে। সেই সময় কেউ যদি আপনাকে এ ভাবে সাহস জোগায়, আপনার চাপটা ভাগ করে নেয়, আপনার চিন্তাকে শেয়ার করে তা হলে ভীষণ উপকার হয় সেই প্লেয়ারের। আর সঞ্জয়ভাই সেই কাজটা নিয়মিত করে থাকে এই টিমের খেলোয়াড়দের সঙ্গে। সে জন্য সে দিন ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছে ওকে ক্রিজ থেকেই ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। আসলে পর্দার আড়ালে টিমের জন্য সাপোর্ট স্টাফের যে কী প্রচুর পরিশ্রম থাকে সেটাকে অনেক মানুষই আছেন যাঁরা পাত্তা দেন না!