প্রহার তাঁর এতই নির্মম ছিল যে বল স্টেডিয়ামে কিছুতেই নাকি থাকতে চাইত না!
আজ নয়, বেশ কয়েক বছর ধরেই আন্দ্রে রাসেলের ব্যাপারে ধারণাটা প্রচলিত ছিল। বুধবারের হায়দরাবাদের তাণ্ডব মোটেও রাসেলের জীবনে নতুন নয়, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের স্টেডিয়ামে ও সব নাকি তিনি প্রায়ই ঘটিয়ে থাকেন। এবং আইপিএল সেভেনের আগে নিলাম টেবলে ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগই কেকেআরের দরজা খুলে দিয়েছিল আন্দ্রে রাসেলের জন্য।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে কেকেআরের ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানের মাত্র ২৫ বলে ৫৮ দেখে ক্রিকেটমহল এমনিই স্তব্ধবাক হয়ে পড়েছে। নাইট অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর মনে করতে পারছেন না, আদৌ তিনি এমন নির্দয় ভাবে কাউকে বোলার-সংহারে নামতে দেখেছেন কি না। চেন্নাই বধের পিছনে রাসেলের মতো রায়ান টেন দুশখাতের ইনিংস কম গুরুত্বের ছিল না। কিন্তু দুশখাতেরও মনে হচ্ছে, তিনি নন, চেন্নাইয়ের যাবতীয় বারোটা রাসেলই বাজিয়ে দিয়েছেন। আর ক্যারিবিয়ান তারকা? নির্লিপ্ত। কেকেআরকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম ম্যাচে জিতিয়ে উঠে বলে দিয়েছেন, এ সব তাঁর কাছে নতুন কিছু নয়। “ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে এ ভাবে ম্যাচ জিতিয়ে আমি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি।”
বুধবার রাতে রাসেলের ধ্বংসলীলা দেখার পর কোনও কোনও কেকেআর কর্তার মনে হচ্ছিল, রাসেলকে এত দিন বসিয়ে রাখাটা ঠিক হয়নি। নিলাম টেবলে তাঁকে কেকেআরের ‘বেস্ট বাই’ বলা হচ্ছিল। কিন্তু তার পরেও আইপিএল সেভেনে গোটা দু’য়েক ম্যাচের বেশি টিমের হয়ে নামার সুযোগ পাননি রাসেল। বুধবারও হয়তো পেতেন না যদি জাক কালিস আচমকা ‘স্টিফ নেক’-এর পাল্লায় না পড়তেন। মনে করা হচ্ছে, কালিস সুস্থ থাকলে দক্ষিণ আফ্রিকান অভিজ্ঞ অলরাউন্ডারকেই খেলতে দেখা যেত। তখন চতুর্থ বিদেশির স্লটের জন্য যুদ্ধ চলত রাসেল আর প্যাট কামিন্সের মধ্যে। আর সেটা হলে নাকি অস্ট্রেলীয় পেসারের একটু হলেও এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা ছিল।
শোনা গেল, দিল্লি ডেয়ারডেভিলস রাসেলকে ছেড়ে দেওয়ার পরপরই তাঁকে নেওয়া মোটামুটি ঠিক করে ফেলে কেকেআর। কর্তারা খোঁজ পেয়েছিলেন যে, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে জামাইকার হয়ে তিনি ব্যাট করতে নামলে বেশির ভাগ সময়ই স্টেডিয়াম পার করে বোলারকে ফেলে দিতে থাকেন। ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টও ছিলেন রাসেল। কিন্তু তা হলে এত দেরি হল কেন কেকেআর টিমে রাসেলের আবির্ভাবে? বলা হচ্ছে, টিমের চার বিদেশির মধ্যে সুনীল নারিন অটোমেটিক চয়েস। সাকিব-আল-হাসানকেও বসানোর কোনও উপায় থাকে না। পেসারদের মধ্যে এক জন বিদেশিকে রাখতে হয়। শেষ স্লটে কালিস খেললে কালিস। নইলে টেন দুশখাতে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতে সাকিব নেই। মর্নি মর্কেল নেই। কালিসও খেলতে পারেননি বুধবার। রাসেলকে তাই নামানো গিয়েছে। পরিস্থিতি যা, এ বার থেকে তাঁকে বাদ দিয়েই নামা কঠিন।
“রাসেল ছ’ওভারে একা ম্যাচটা নিয়ে গেল। ও একবার মারতে শুরু করলে থামতে জানে না। আমি তাতে এতটুকু অবাক হইনি। ও এ বার খুব ভাল ফর্ম নিয়ে এসেছে। আইপিএলে খুব বেশি সুযোগ রাসেল পায়নি। এ বার পাচ্ছে। দেখাচ্ছে, ও কী বস্তু,” বলছেন দুশখাতে। সবচেয়ে বড় কথা, বুধবার রাতে নাইট ব্যাটিং লাইন আপে রবিন উথাপ্পা বলে যে কেউ একজন ছিলেন না (তাঁর গোড়ালিতে চোট) রাসেলের ব্যাটিংয়ে তা বোঝা যায়নি।
কেকেআরের কারও কারও যা দেখে মনে হল, এখনও কিছুই নয়। এটা নাকি অর্ধেক রাসেল। বোলার রাসেলকে এখনও নাকি দেখা যায়নি। যিনি ঘণ্টায় একশো চল্লিশে বলটা করেন, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে যাঁর বোলিং নাকি ব্যাটিংয়ের মতোই প্রতিপক্ষের পক্ষে সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।